ভারতের সমর্থন নিয়ে আস্থা সংকটে আওয়ামী লীগ: গয়েশ্বর
বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারকে ভারত ক্ষমতায় রাখবে কিনা তা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের গতকালের বক্তব্য প্রসঙ্গে শুক্রবার (১৯ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের উদ্যোগে ‘বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকটে বাংলাদেশ, নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যমূল্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন (এ কে আব্দুল মোমেন) সাহেব বলেছেন, ভারতকে বলেছি আমাদেরকে সরকারে রাখতে। অর্থাৎ ভারত তাদেরকে রাখবে কিনা এটা নিয়ে সংশয় আছে। যাদের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর, সেই সম্পর্ক যদি স্বামী-স্ত্রীর হয় সেখানে তালাকের সম্ভাবনা আছে কিনা! যদি না থাকে তাহলে মোমেন সাহেব এই ধরনের উক্তি কেন করেন?
রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে তারা রাষ্ট্রের কথা, রাজনীতির কথা, দেশের মান-সম্মানের কথাটুকু চিন্তা না করে যে ধরনের মন্তব্য করেন তাতে আমরা একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক সেটা ভাবার কোনো অবকাশ নাই।
বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বাড়ছে। পাশাপাশি একটি জিনিসের দাম ক্রমান্বয়ে কমতেছে সেই জিনিসটার নাম আপনারা জানেন কি জানেন না আমি জানি না। আমার মনে হয়, আওয়ামী লীগের দাম প্রতিদিনই কমতেছে। এই যে লোহা-লক্কর-স্ক্র্যাপ ইত্যাদি জিনিস নিলামে বিক্রি করে না যা ব্যবহারযোগ্য না। সেখানে শত শত লোক নিলাম ডাকতে বসে। কিন্তু আজকে যদি আওয়ামী লীগের নিলাম হয় আমরা মনে হয় না কেউ কিনবে।
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখন আমরা দলের মধ্যে প্রতিযোগিতায় আছি, পরবর্তী ইলেকশনে হাউ টু সিকিউরড দ্যা নমিনেশন অর্থাৎ কীভাবে মনোনয়ন লাভ করব সেটাই আমার দুশ্চিন্তা, পাস করা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তা নেই।
গয়েশ্বর বলেন, আমরা সবাই প্রতিজ্ঞা করি, রাজপথ দখল করতে হবে। কিন্তু অনেককেই সেই কথা মতো উদ্যোগ নিয়ে সংগঠিত করতে পারি না। যেই সাহসী যুবকরা রাজপথে আসবে, তাদের উৎসাহিত করবে। এটা কিন্তু আমাদের এক ধরনের ত্রুটি। সেই ত্রুটি থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে।
তিনি বলেন, আমি মুখে বলছি, নির্বাচন করব না। আমাকে বলতে হবে আমি যেটা বলি সেটা যে আমার মনের কথা সেটা কিন্তু আমার কর্মকাণ্ড দিয়ে মানুষকে বিশ্বাস করাতে হবে, মানুষকে আস্থায় আনতে হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমার রাজনৈতিক জীবনে যতদিন ধরে আওয়ামী লীগকে চিনি ততদিন ধরে বলি, আওয়ামী লীগ যাহা বলে তাহা করে না। যাহা করে তাহা বলে না।
তিনি বলেন, একের পর এক সংকট যোগ হচ্ছে। কোনো সংকটের এখনো সমাধান হয়নি। তবে আমার মনে হয়, যত সংকটের মধ্যেই পড়ি না কেন সংকট একটাই সেটা হচ্ছে গণতন্ত্রের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক নাই, যারা গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, আইনের শাসন, সুশাসন, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, মানুষের মত প্রকাশ বিশ্বাস করে না, ভিন্ন মতের রাজনৈতিক দলের অস্তিত্বকে স্বীকার করতে চায় না যেভাবেই হোক তারা এখন রাষ্ট্রক্ষমতায়।
সরকার বলছে বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে- এ প্রসঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ষড়যন্ত্র নয়, এই সরকারকে বিদায় দেওয়া একটি স্বাধীন দেশের নাগরিকদের নৈতিক দায়িত্ব।
দেশটা কোনো সেমিনার কিংবা ভাষণ বক্তব্যে স্বাধীন হয় নাই উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশ কোনো আদালতের রায়ে স্বাধীন হয় নাই, স্বাধীন হয়েছিল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে, আর সেই যুদ্ধ সূচনা করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
সংগঠনের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে ও সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, আনোয়ার হোসেন বুলু, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সহসসভাপতি আব্দুস সেলিম, তাঁতী দলের মনিরুজ্জামান মুনির, কৃষক দলের ইসমাইল হোসেন তালুকদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এমএইচ/এসজি/