স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী এখনও বৈষম্যের শিকার: গোলাম পরওয়ার

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ছবি: সংগৃহীত
খুলনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার অভিযোগ করেছেন যে, বাংলাদেশ স্বৈরাচারমুক্ত হলেও জামায়াতে ইসলামী এখনো বৈষম্যের শিকার। তিনি দলীয় নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবি জানান এবং সরকারের নির্বাহী আদেশে তার সাজা বাতিলের আহ্বান জানান।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে খুলনার ঐতিহাসিক শহীদ হাদিস পার্কে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, "শেখ হাসিনার ১৭ বছরের শাসনামলে বহু রাজনৈতিক নেতাকর্মী মুক্তি পেলেও এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনো কারাবন্দি। এটি চরম বৈষম্য ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ।" তিনি আরও বলেন, "ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্তি পেতে হলে জনগণকে আবারো রাজপথে নামতে হবে।"
তিনি এটিএম আজহারুল ইসলামের ন্যায়বিচারের প্রসঙ্গে বলেন, "তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন, যেখানে চারজন বিচারকের মধ্যে তিনজন রায় বহাল রাখেন, কিন্তু একজন ভিন্নমত প্রকাশ করেন। এটি প্রমাণ করে যে তার বিরুদ্ধে মামলায় যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।"
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খুলনা মহানগর জামায়াতের আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। আরও বক্তব্য রাখেন খুলনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, মহানগর সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপ্যাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম, জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, জেলা নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, মহানগর সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের খুলনা জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ গাউসুল আজম হাদী, মহানগর সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের মহানগর ও জেলা নেতারা।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহীদ পার্ক থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিববাড়ি মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। তবে মিছিলের শেষভাগে শিববাড়ি মোড়ে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যা মুহূর্তের মধ্যে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি করে।
মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল জানান, রেলওয়ে এলাকার উঁচু স্থান থেকে ককটেলটি নিক্ষেপ করা হয়, যার ফলে ইসমাইল হোসেন নামে একজন আহত হন। তিনি এ হামলার তদন্ত দাবি করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানান।
বক্তারা এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও সাক্ষ্যপ্রমাণের অসংগতি তুলে ধরে বলেন, "একজন সাক্ষী বলেছেন, তিনি সাত কিলোমিটার দূর থেকে ঘটনা দেখেছেন, অন্যজন বলেছেন তিন কিলোমিটার দূর থেকে দেখেছেন, যা সম্পূর্ণ অবাস্তব ও হাস্যকর।"
তারা আরও অভিযোগ করেন যে, এটিএম আজহারুল ইসলামকে ২০১১ সালে গ্রেফতার করা হয় এবং রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়।
বক্তারা অবিলম্বে এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবি জানান এবং অভিযোগ করেন যে, বর্তমান সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মাধ্যমে জামায়াত নেতাদের দমন করছে। তারা বলেন, "বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করা না হলে ভবিষ্যতে আরও গণআন্দোলনের মুখোমুখি হতে হবে।"
