‘দেশ আমাদের সবার, কোন দল কিংবা ব্যক্তির নয়’- জামায়াতে ইসলামীর আমীর
ছবি: সংগৃহীত
দেশ আমাদের সবার, কোন দল কিংবা ব্যক্তির নয় বলে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, এই দেশ ১৮ কোটি মানুষের। তাদের স্বার্থে যা করার দরকার সবই করতে হবে।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১০ টায় কক্সবাজারে অভিযানে সন্ত্রাসীদের ছুরির আঘাতে নিহত সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার নির্জনের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করের বেতকায় গিয়ে তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার নির্জনের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের উদ্দেশ্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যে ডাকাতদল এই ঘটনার সাথে জড়িত তারা এক মাস আগে জামিনে বের হয়েছে। এরপর তারা বিশাল একটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। এরকম আরও অনেকেই জেল থেকে জামিন পেয়েছেন। সরকারকে এগুলো দেখতে হবে।
আমির বলেন, দেশের জন্য জীবন দেওয়া সবার সৌভাগ্য হয় না। তিনি সেনাবাহিনীতে জেনে শুনেই গিয়েছিলেন। এটা জীবন মৃত্যুর খেলা এবং সেটা দেশ রক্ষার খেলা। এটা জেনেই তিনি সেখানে গিয়েছিল, আলহামদুলিল্লাহ। তার মা-বাবাকে এরকম একটা সন্তান দিয়ে ধন্য করেছেন। আমরা এখানে আসিনি ওনাদেরকে গর্বিত করতে, আমরা এসেছি নিজেরা গর্বিত হতে।
তিনি আরও বলেন, এরকম বাবার কপালে চুমু দেওয়া আমার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমরা মনে করি এটা আমাদের জাতীয় নাগরিক দায়িত্ব, তাদের প্রতি সম্মান দেখানো। আমি সম্মান দেখানোর জায়গা থেকে এখানে এসেছি। আপনাদের সবার প্রতি, এলাকার মানুষের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে আপনারা তাদের (বাবা-মা) বুকটা ভরে রাখবেন। আপনারা তাদের খোঁজ-খবর নেবেন আমরাও যতটুকু পারি পাশে থাকবো।
শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, পালিয়ে যাওয়া কোন ভালো জিনিস না। উনি চলে যাওয়ার পরে মাঝে মধ্যে টেলিফোনের কথা শুনতে পাই। আমার মনে হয় তিনি এখান থেকে সরে গিয়েছেন, নিশ্চয়ই তিনি উপলবদ্ধি করেছেন দেশের মানুষ তাকে ভালোবাসে না। যেহেতু দেশের মানুষ তাকে ভালোবাসে না জোর করে আবার নিজেকে স্থান করা বুদ্ধিমত্তার কাজ হবে না বলে আমি মনে করি। তিনি (শেখ হাসিনা) যদি অপরাধী হন, কোন অপরাধ করে থাকেন তাহলে তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি আইন আমরা হাতে তুলে নিবো না। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় এতে শাস্তি দিতে হবে। কে ষড়যন্ত্র করছে না করছে এটা বড় কথা নয়। জাতি কিন্তু এখন ঐক্যবদ্ধ ও মজবুত। গোটা যুব সমাজের বিরুদ্ধে তারা দাঁড়িয়ে গণহত্যা করেছে। নৈতিক দিক থেকে তারা পরাজিত হয়েছেন। এখন তাদেরই মূল্যায়ন করতে হবে যে তারা রাজনীতি করার কোন অধিকার রাখে কী না।
আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন- আমরা দুটি রোডম্যাপ চাচ্ছি। একটা সংস্কারের জন্য। সেই রোডম্যাপের নিদিষ্ট হতে হবে কী কী বিষয়ে সংস্কার হবে এবং কতদিনের ভিতরে সংস্কার হবে। সংস্কারের রোড ম্যাপ যদি সফলতা হয়, তাহলে পরবর্তী দেরি না করে নির্বাচনী রড দিতে হবে। কিন্তু প্রথমটা যদি সফল না হয় তাহল দ্বিতীয়টি ব্যর্থ হবে। আমরা কোন ব্যর্থ নির্বাচন চাচ্ছি না। আমরা একটা সফল নির্বাচন চাচ্ছি।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তিনি আমেরিকায় গিয়ে বলেছেন, এই আন্দোলন ছিল একেবারেই পরিকল্পিত। আমি ওনার বক্তব্যের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করবো না। আমি আমার নিজস্ব মূল্যায়নটা শুধু বলবো। সবার প্রতি আমার সম্মান আছে। আমার জানামতে এই আন্দোলন ছিল ছাত্রদের রাইট ইস্যুর ব্যাপার, অধিকারের ব্যাপার। সেই অধিকারটা অন্য কিছু না।
লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার নির্জনের পরিবারের সাথে তিনি দীর্ঘসময় কথা বলে তার বাবা ছারওয়ার জাহান দেলোয়ার, মা শাহনাজ খান ও বড় বোন তাসনুভা সারোয়ার সূচীকে সাথে নিয়ে দোয়া করেন।
এ সময় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, জেলা জামাতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক খন্দকার আব্দুর রাজ্জাক, জেলা সেক্রেটারি হুমায়ুন কবীর, জেলা সহকারী সেক্রেটারি হোসনী মোবারক বাবুলসহ দলের অন্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।