যেভাবে জাসদ ছাত্রলীগ থেকে প্রভাবশালী আমীর হয়ে উঠলেন ডা. শফিকুর রহমান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। দশম শ্রেণিতে পড়াকালে জাসদ ছাত্রলীগের হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ করলেও সময়ের পরিক্রমায় হয়ে উঠেছেন দেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনীতিক।
মিষ্টভাষী শফিকুর রহমানের অমায়িক ব্যবহার, স্পষ্ট বক্তব্য, নেতৃত্বের দক্ষতা, সর্বোপরি সামাজিক ও কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। গত ৫ আগস্ট নতুন করে আলোচনায় এসেছেন তিনি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বত্রই আলোচিত হচ্ছে ডা. শফিকুর রহমানের নাম।
দেশের একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ৬৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিকের জাসদ ছাত্রলীগ থেকে দেশের বৃহৎ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের কান্ডারি হয়ে ওঠার গল্প। শেখ হাসিনা যেদিন দেশ ছাড়তে বাধ্য হন, সেদিনই আলোচনায় আসেন জামায়াতে ইসলামীর আমির। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও তার নাম উচ্চারণের মধ্য দিয়ে নতুন করে সামনে আসেন ডাক্তার শফিকুর রহমান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন থেকে শুরু করে মন্দিরসহ সংখ্যালগুদের ঘরবাড়ি পাহারা, সব কাজে সামনের সারিতে দেখা যায় জামায়াতকে।
ছাত্র আন্দোলনের সময় শহিদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অর্থ সহযোগিতা এবং সবশেষ বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে জামায়াত আমিরের বক্তব্য মন জয় করেছে নেটিজেনদের। যেখানে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের বাসায় মেহমান হয়ে এসেছি।’ বিশেষ করে গণঅভ্যুত্থানের পরপরই জামায়াত নেতার ঘোষণা- ‘প্রতিশোধ নয়, ক্ষমা’। বৈষম্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু শব্দের কবর রচনা হোক, আমাদের পরিচয় হোক বাংলাদেশি।’
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন শফিকুর রহমান। মোহাম্মদ আবরু মিয়া ও খতিবুন্নেছা দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় তিনি। তারা তিন ভাই ও এক বোন। ১৯৭৩ সালে স্থানীয় বরমচাল উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় শফিকুর রহমানের। ওই বছরই তিনি যোগ দিয়েছিলেন জাসদ ছাত্রলীগে। ১৯৭৪ সালে ওই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৬ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন শফিকুর রহমান।
সিলেট মেডিকেল কলেজে ভর্তির পর তিনি পরিচিত হন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে। ১৯৭৭ সালেই যোগ দেন এই সংগঠনে। পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সিলেট মেডিকেল কলেজ এবং সিলেট শহর শাখার। ১৯৮৩ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর চিকিৎসাসেবায় আত্মনিয়োগ করেন ডাক্তার শফিকুর রহমান। পাশাপাশি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গেও একাত্ম হন তিনি। ১৯৮৪ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদানের মাধ্যমে বৃহত্তর রাজনীতিতে পদার্পণ করেন ডা. শফিকুর রহমান। দায়িত্ব পালন করেন সিলেট শহর এবং জেলা ও মহানগরীর আমির হিসেবে।
২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল নিযুক্ত ছিলেন ডাক্তার শফিকুর রহমান। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দলের রুকন সম্মেলনে প্রত্যক্ষ ভোটে আমির নির্বাচিত হন তিনি। একই বছর ৫ ডিসেম্বর পরবর্তী দুই বছর মেয়াদে আমিরে জামায়াত হিসেবে ডাক্তার শফিকুর রহমান শপথ নেন। ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর দ্বিতীয় মেয়াদেও আমির নির্বাচিত হন তিনি।
ডা. আমিনা বেগমের সঙ্গে ১৯৮৫ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ডা. শফিকুর রহমান। তার স্ত্রী পরবর্তীতে অষ্টম জাতীয় সংসদের সদস্য হন। দুই মেয়ে ও এক ছেলের বাবা ডা. শফিকুর রহমান। দুই মেয়েই জড়িত চিকিৎসা পেশায়। একমাত্র ছেলেও পড়ছেন এমবিবিএস শেষ বর্ষে।
ডা. শফিকুর রহমান কেবল রাজনীতিকই নন, সিলেটের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তিনি। এছাড়াও তিনি একজন সমাজসেবক, সংগঠক, এমনকি সফল উদ্যোক্তাও।