বিএনপির জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে সার্চ কমিটি
নির্বাচন কমিশনে যোগ্য ব্যক্তিদের খুঁজে পেতে বিএনপির মতামতের জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি। সর্বজন গ্রহণযোগ্য না হলেও অন্তত রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে সার্চ কমিটি। ফলে শুরু থেকেই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম আহ্বান করেছে সার্চ কমিটি।
তাদের সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বিকল্পধারা বাংলাদেশসহ ২৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল তাদের বিবেচনায় যোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা সার্চ কমিটিতে পাঠায়। তবে শুরু থেকেই এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি। যে কারণে সার্চ কমিটির বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কোনো নাম প্রস্তাব করেনি দলটি। তবে নির্বাচন কমিশন গঠনে যে আইন সংসদে পাস হয়েছে তাতে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। বিএনপি দলীয়ভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনের বিরোধিতা করলেও তাদের দলীয় সংসদ সদস্যরা জনমত যাচাই ও সংশোধনী প্রস্তাবে অংশগ্রহণ করে তাদের মতামত তুলে ধরেন। বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যেদের সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণও করেন আইনমন্ত্রী। ফলে আইনটিতে তাদের নৈতিক সমর্থন ছিল।
অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে একদফা দাবিতে অনড় রয়েছে। তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন ছাড়া অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। ফলে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে সংলাপের আয়োজন করেছিলেন সেটিও প্রত্যাখান করেছে বিএনপি।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম চেয়ে যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়ে, তাতেও সায় দেয়নি বিএনপি। যার ফলে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টা পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সময় বাড়ায় সার্চ কমিটি। এবারও মন গলেনি বিএনপির।
রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠকের সময় সার্চ কমিটির প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছিলেন, যেসকল দল, বলাই যায় বিএনপি, সিপিবি, বাসদসহ যারা এখনও নাম দেয়নি তাদের জন্য সময় বাড়ানো হয়েছে। এরপর মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমের বিশিষ্টজনের সঙ্গে আর একদফা বৈঠকে পুনরায় সময় বাড়ানোর ইঙ্গিত দেয় সার্চ কমিটি।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপিসহ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সিইসি ও ইসি পদে নাম জমা দিলে তা আমলে নেবে সার্চ কমিটি।’
শুধু বিএনপি না তাদের সঙ্গে আরও ১৪টি দল সার্চ কমিটিতে নিজেদের বিবেচনায় যোগ্য ব্যক্তিদের নাম দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। এদিকে আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটির ১৫ কার্যদিবস শেষ হচ্ছে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি। তাই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিএনপিসহ অন্যান্য দলের জন্য অপেক্ষা করবে সার্চ কমিটি। তাদের মূল টার্গেট বিএনপি। যেকারণে মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারির) বৈঠকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদকে গণমাধ্যমের বিশিষ্ট ব্যক্তি ক্যাটাগরিতে আমন্ত্রণ জানায় সার্চ কমিটি। যেহেতু দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের এই ‘ফাঁদে’ পা দেবে না তাই তিনিও বৈঠক বর্জন করেছেন।
দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে ৩৯টি। তারমধ্যে নাম জমা দিয়েছে ২৪টি আর দেয়নি ১৫টি। গত ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন পাস হয়। এরপর শুরু হয় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নির্বাচন কমিশন গঠনের কাজ। আইন অনুযায়ী গত ৫ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। সার্চ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-হাইকোর্টের বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন এবং লেখক-অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
সার্চ কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, ব্যক্তি পর্যায় (সরাসরি) ও ব্যক্তি পর্যায়ে ইমেইলে এবং সার্চ কমিটির বৈঠকে অংশগ্রহণ করে মোট ৩২৯ জনের নাম জমা পড়ে। সেই নাম থেকে সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে ৩২২ জনের নাম প্রকাশ করে সার্চ কমিটি। এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য চার নির্বাচন কমিশনার পদে যোগ্য ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে ১০ জনের চূড়ান্ত নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে সার্চ কমিটি। সেখান থেকে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গঠিত হবে নতুন নির্বাচন কমিশন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হওয়া বিদায় নিয়েছেন তারা। ফলে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবির খোন্দকার দায়িত্ব পালন করবেন।
এসএম/এমএমএ/