ভারতের বিতর্কিত ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলটি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সম্মতিতে আইনে পরিণত হয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায় এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তীব্র বিরোধিতার মধ্যেই বিলটি কার্যকর হওয়ায় দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
মুসলিমদের ধর্মীয় সম্পত্তির ওপর হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করছেন।
রোববার (৭ এপ্রিল) মনিপুরের থৈবাল জেলার লিলং এলাকায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ জাতীয় সড়কে অবস্থান নেন। সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারীরা বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার মনিপুর শাখার সভাপতি আসকার আলীর বাড়িতে আগুন দেন। ওয়াকফ সংশোধনী আইনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার অভিযোগে তার বাড়িতে হামলা চালানো হয়।
এই ঘটনার পর এলাকা জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সমাবেশে অংশ নেওয়া সমাজকর্মী সাকির আহমেদ বলেন, “ওয়াকফ সংশোধনী বিল সংবিধানের নীতির পরিপন্থি এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে তা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।”
শনিবার আইন মন্ত্রণালয়ের নোটিশে জানানো হয়, রাষ্ট্রপতি ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৫ এবং মুসলমান ওয়াকফ (রহিতকরণ) বিল ২০২৫-এ সম্মতি দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে দুটি বিলই আইনে পরিণত হয়। এর আগে লোকসভায় বিলটি পাস হয় ২৮৮-২৩২ ভোটে এবং রাজ্যসভায় ১২৮-৯৫ ভোটে।
বিলের প্রতিবাদে উত্তর প্রদেশের মুজফফরনগরে শুক্রবার নামাজে অংশগ্রহণকারীরা কালো ব্যাজ পরে মৌন প্রতিবাদ জানান। পরে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ৩০০ মুসল্লিকে শনাক্ত করে এবং থানায় হাজিরার নোটিশ পাঠায়।
লোকসভায় বিল উত্থাপন করেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। তীব্র প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেসের উপনেতা গৌরব গগৈ বলেন, “এই বিল সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর ওপর আঘাত। এটি সংখ্যালঘুদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করবে ও সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করবে।”
তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ এক পোস্টে একে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করে বলেন, “এটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে ভূমিকা রাখবে।”
এদিকে, বিলের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে একাধিক মামলা দায়ের হলেও ভারতের সুপ্রিমকোর্ট তা জরুরি ভিত্তিতে শুনতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ফলে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।