সংস্কারের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা দৃশ্যমান নয়: মির্জা আব্বাস

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। ছবি: সংগৃহীত
সংস্কারের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা দৃশ্যমান নয় অভিযোগ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের। অনেকে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে অভিযোগ করে বিএনপিকে চাঁদাবাজদের দল হিসেবে অপবাদ দেওয়ার নোংরা রাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানান তিনি।
শনিবার (১৫ মার্চ) বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠনের ইফতার মাহফিলে দলটির নেতাকর্মীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
মির্জা আব্বাস বলেন, “আজকে এই সরকার সংস্কার সংস্কার করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলল। কিন্তু সংস্কার কী হল, এটা কিন্তু আমি এখনো দেখি নাই, আমার নজরে আসে নাই কী সংস্কার হইছে, আপনাদের নজরে আসছে কি না জানি না।”
তিনি বলেন, “আপনারা দেখবেন এখানে আপনাদের সামনে যে পোস্টার আছে এই পোস্টারের মধ্যে ১১ দফায় আছে প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন। এটা আড়াই বছর আগে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব বলেছেন। আজকে এই সরকার এর উপরে কাজ করতেছে। আমাদের ৩১ দফা নিয়ে যদি সরকার কাজ করা শুরু করতো তাহলে কোনো অবস্থাতেই সংস্কার সংস্কার করে মুখে ফেলা তুলতে হত না।”
রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারে ২০২২ সালে বিএনপির তরফে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সে বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “আড়াই বছর আগে তারেক রহমান সাহেব তার অন্যান্য সহকর্মীদের নিয়ে এই ৩১ দফা প্রণয়ন করেছেন। এই ৩১ দফা প্রণয়নে অনেক সময় লেগেছে। ৬২টি রাজনৈতিক দল এতে মতামত দিয়েছে। তাদের মতামত সন্নিবেশিত করে, দেশের জনগণের জন্য যেটা প্রয়োজন সেটা এখানে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।”
মির্জা আব্বাস বলেন, “আজকে যারা সংস্কারের জন্য মাঠে নেমেছেন, সংস্কারের কাজ করছেন, সবাই যার যার অবস্থানে, স্ব স্ব ক্ষেত্রে তারা অত্যন্ত জ্ঞানী-গুণী-বুদ্ধিমান। আমি তাদের সবাইকে সন্মান করি। কিন্তু সন্মানের সঙ্গে এটাও বলতে চাই, আপনাদের সঙ্গে তো এদেশের মাটি ও মানুষের কোনো সম্পর্ক নাই। ছিল না।
তিনি বলেন, “আপনি হঠাৎ করে এসে কী করে বুঝবেন.. এ দেশের মানুষ কী চায়? কী করে বুঝবেন এদেশের মানুষের মনে কথা? কী করে বুঝবেন ১৭ বছর আমরা যে রাস্তায় আন্দোলন করেছি, ১৭ বছর আমাদের নেতা-কর্মীরা যে কষ্ট সহ্য করেছে- এটা কীভাবে অনুভব করবেন? আমাদের মনে ব্যথা ও কষ্ট আপনারা কখনোই বুঝতে পারবেন না। তাই সংস্কার সংস্কার করে সময় নষ্ট করবেন না। যথা সম্ভব শিগগির নির্বাচনটা দেন।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, “আমাদের অনেক ভাই আছেন, ঢাকায় আছেন যারা ইউটিউবে অনেক কথা বলেন। মাঝে মাঝে আমার নজরে পড়ে, তাদের মনে হয় নির্বাচনের কথা শুনলে মাথাটা খারাপ হয়ে যায়। কিছু কিছু রাজনৈতিক দলও আছে নির্বাচনের কথা শুনলে মাথা খারাপ হয়ে যায়। কারণ ওরা কখনো নির্বাচন করবেও না, করেও নাই।”
দ্রুত নির্বাচন চাওয়ার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “নির্বাচন একটা দেশের মানুষকে স্থিরতা দিতে পারে, নির্বাচন একটা দেশকে স্থিতিশীল করতে পারে। দেশের মানুষের অস্থিরতা কমাতে পারে। কিন্তু এই বিষয়গুলো তারা বোঝার চেষ্টা করেন না। তারা শুধু বলেন বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়, নির্বাচন চায়। এ দেশের মানুষের মনে যে অস্থিরতা কাজ করতেছে এটা কি আপনারা বোঝেন না।”
তিনি বলেন, “আমি খুব কঠিন ভাষায় বলতে চাই না, রোজার দিন। কঠিন ভাষায় বললে বলতাম, আরে ভাই ১৭ বছর যে আমরা জেল খাটলাম, ৫ হাজার লোক জান দিল, এত লোকের রক্ত গেল…৩০ হাজার লোক পঙ্গু হল…বাতাস খাওয়ার জন্য।
তিনি আরও বলেন, “এই ত্যাগ হয়েছে নির্বাচনের জন্য, কথা বলার জন্য, অধিকারের জন্য। আরে ভাই, আমি যদি ছেড়েও দেই, চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, নির্বাচন ছাড়া এই সরকার টিকে থাকতে পারবে না। এই সরকার বলুক যে, নির্বাচনের দরকার নাই, আমরাই ক্ষমতায় থাকবো। দেখি বুকের পাঠা আছে কিনা, সাহস আছে কিনা।”
নির্বাচন নিয়ে অনেকেরই ভয় আছে মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, “হ্যাঁ ভয় আছে, কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের ভয় আছে, নতুন রাজনৈতিক দলের ভয় আছে। অনেক পুরনো রাজনৈতিক দলের ভয় আছে। তারা নির্বাচনে ক্ষমতায় যেতে পারবে না।”
