ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের ঘোষণায় উত্তেজিত ছাত্র-জনতা রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর পরিত্যক্ত বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এছাড়াও সারাদেশে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে সার্বিক পরিস্থিতির জন্য পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার উসকানি মূলত দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। বুধবার (৫ আগস্ট) রাত পৌনে ১২টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, সার্বিক পরিস্থিতির জন্য পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার উসকানি মূলত দায়ী। মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা কখনোই বাংলাদেশের মানুষকে অন্তরে ধারণ করে না। এটি তার ঘৃণিত স্বভাব।
এর কিছুক্ষণ আগে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। সেখানে দেশবাসীকে কোনো ধরনের উসকানিতে পা না দিয়ে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান জামায়াতের আমির।
সেই স্ট্যাটাসে তিনি লেছেন, বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক দায়িত্বশীল নাগরিকবৃন্দের আহ্বান, কোনো উসকানিতে পা না দিয়ে ধৈর্য ধরুন এবং প্রিয় দেশকে ভালোবাসার নমুনা প্রদর্শন করুন।
অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওনের জামালপুরের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে জামালপুর সদর উপজেলার নরুন্দি রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত বাড়িতে এই অগ্নিসংযোগ করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, স্থানীয় ছাত্র-জনতার একাংশ এই অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত। নরুন্দি বাজারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হলে কিছু বিক্ষোভকারী শাওনের বাবার বাড়ির সামনে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
শাওনের বাবা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং তার মা বেগম তহুরা আলী দু'বার সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। এছাড়া শাওন নিজেও আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
সাম্প্রতিক সময়ে শাওনের রাজনৈতিক অবস্থান ও কিছু মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা তার পরিবারের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে এবং বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং অগ্নিসংযোগের প্রকৃত কারণ প্রশাসন নিশ্চিত করতে পারেনি।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে এবং দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর (ইনসটে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন)। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের পোড়া ভবনে হামলা ও ভাঙচুর ছাত্রদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্য শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে নেয়নি, আর এই হামলা তারই প্রতিফলন।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এসব কথা বলেন। "শেখ হাসিনা ভারতে বসে যে ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন, তা ছাত্ররা ভালোভাবে নেয়নি। এটি তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ," বলেন তৌহিদ হোসেন।
তিনি আরও জানান, ভারতকে লিখিতভাবে অনুরোধ করা হয়েছিল শেখ হাসিনা যেন উসকানিমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকেন। ইতোমধ্যে ভারতের দায়িত্বপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে আবারও চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বুধবার ভারত থেকে অনলাইনে ভাষণ দেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে একটি সংগঠন 'বুলডোজার মিছিল' কর্মসূচির ডাক দেয় এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের দিকে যাত্রা করে।
সন্ধ্যা ৮টার আগে থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা বাড়িটিতে ঢুকে পড়ে এবং গভীর রাত পর্যন্ত ভাঙচুর চালানো হয়। এক পর্যায়ে একটি এক্সকেভেটর (বুলডোজার) আনা হয়, যা বৃহস্পতিবার সকালেও কার্যক্রম চালিয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, এক্সকেভেটর দিয়ে বাড়িটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। আশপাশে উৎসুক জনতার ভিড়, কেউ ভাঙা স্লাব থেকে রড খুলে নিচ্ছে, কেউ এসি খুলে রিকশায় নিয়ে যাচ্ছে, কেউ ভিডিও করছে।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিও ভেঙে ফেলা হয়েছে, তবে আশপাশে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দেখা যায়নি।
এর আগে, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর তিনি দেশত্যাগ করেন। তখনও বিক্ষুব্ধ জনতা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে হামলা চালায় ও আগুন দেয়।
ভারতের সঙ্গে সই হওয়া বিভিন্ন চুক্তি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "বাংলাদেশ একতরফাভাবে এসব চুক্তি বাতিল করতে পারবে না। বিশেষ করে আদানির সঙ্গে করা চুক্তিতে দেশের স্বার্থ রক্ষা করা হয়নি।"
তিনি আরও জানান, আগামী এপ্রিলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরে আসতে পারেন। বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমরা পাকিস্তানকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো স্বাভাবিকভাবেই দেখতে চাই।"
ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি দীর্ঘদিন ধরে আড়ালে ছিলেন। প্রথম দিকে তার এই অনুপস্থিতিকে স্বাভাবিক মনে করেছিলেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা, তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে তার আড়ালে যাওয়ার রহস্য আরও গাঢ় হয়। এর মধ্যে সামনে আসে পপির গোপন সংসার এবং সন্তানের খবর।
শোবিজ থেকে দূরে থাকলেও সম্প্রতি জমি দখলের অভিযোগে আলোচনায় আসেন পপি। তার বিরুদ্ধে তার পরিবার, বিশেষ করে তার বোন, থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। আর এই ঘটনার পরই আড়াল ভেঙে ক্যামেরার সামনে হাজির হন পপি। দীর্ঘ তিন বছর পর সবার সামনে এসে তিনি জানান, তার পরিবার তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে এবং তাকে খুন করার জন্য খুনিও ভাড়া করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত একটি ভিডিও বার্তায় পপি তার বিরুদ্ধে মা, ভাই, বোনের অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি করেন।
ভিডিওতে পপি বলেন, ‘‘২৮ বছর ধরে চলচ্চিত্রে কাজ করেছি, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, কিন্তু এই মুহূর্তে আমি একজন ব্যর্থ মানুষ হিসেবে কথা বলছি। কারণ, দীর্ঘ ২৮ বছর যাদের জন্য কাজ করেছি, যাদের লালন-পালন করেছি, তাদের কাছে আমি এখন অযোগ্য।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘মানুষ সবসময় সবার কাছে ভালো হতে পারে না। একসময় আমি যাদের দুহাতে উপহার দিয়েছি, এখন তারা আমাকে শত্রু হিসেবে দেখে।’’ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার পরিবার কতটা নিচে নামতে পারে, কতটা হিংস্র ব্যবহার করতে পারে, তা দেখে আমি অবাক। তাদের মিথ্যা অভিযোগগুলো আমাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে মিডিয়ার সামনে।’’
পপি জানান, তার সব অর্থ তার পরিবার নিয়েছে এবং তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শূন্য ছিল। ‘‘আমার দেহটা ছাড়া কিছুই আমার ছিল না। আমার সব কিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।’’
মায়ের ব্যাপারে তিনি জানান, ‘‘পৃথিবীতে সব মা ভালো মা নয়। দুর্ভাগ্যবশত, আমার মা আমাকে সেইভাবে ভালোবাসতে পারেনি।’’ তবে, তিনি মায়ের প্রতি কোনো অভিযোগ রাখেননি।
পপির এই বক্তব্য, তার পরিবারের প্রতি তিক্ততার পাশাপাশি তার জীবনের এক বেদনাদায়ক সত্য উন্মোচন করেছে। তিনি বলেন, ‘‘আমার বাবা-মা আমাকে মেশিন হিসেবে দেখেছিলেন, তাদের কাছে আমি ছিলাম শুধু একটি উপার্জনের মাধ্যম।’’ এছাড়া, ২০০৭ সালে পপির অর্থ ও সম্পত্তি নিয়ে অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু সে সময় তার সিনেমার সহকর্মীরা এসে পরিস্থিতি সামাল দেন।
প্রসঙ্গত, পপি সবশেষ ২০২২ সালে শিল্পী সমিতির নির্বাচনের সময় প্রকাশ্যে এসেছিলেন এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিপুণ আক্তারকে সমর্থন করেছিলেন।