ওসমান পরিবার পালালেও সমস্যা হয়নি আইভীর
সেলিনা হায়াৎ আইভী। ছবি: সংগৃহীত
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গেই নারায়ণগঞ্জ থেকে পালিয়েছে বিতর্কিত ওসমান পরিবার। হত্যা, গুম, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ অসংখ্য অপকর্মের হোতা শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, আজমেরী ওসমানসহ এ পরিবারের সব ক্যাডার লাপাত্তা।
তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও কোনো বাধা ছাড়াই নারায়ণগঞ্জে আছেন সদ্য অপসারিত সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। গতকাল সোমবার অপসারণের আগ পর্যন্ত তিনি সিটি করপোরেশনে বসেছেন, দলীয় কর্মসূচিও পালন করেছেন। বিষয়টিকে তাঁর ইতিবাচক রাজনীতির সুফল বলে অভিহিত করে বিভিন্ন দলের নেতারা বলেছেন, দেশে এ ধরনের রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের লালন করা প্রয়োজন।
১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে এমপি হন শামীম ওসমান। এর পরপরই চাঁদাবাজি, দখলবাজি, হত্যা, গুম, জমি দখল, বালুমহাল দখলসহ অসংখ্য অপকর্মে লিপ্ত হয়ে ‘গডফাদার’ তকমা অর্জন করেন তিনি। নারায়ণগঞ্জের মানুষ প্রকাশ্যে তাঁর নাম উচ্চারণ করতেও ভয় পেত। ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের পর জনরোষের ভয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে পালিয়ে যান শামীম ওসমান, তাঁর ভাই নাসিম ওসমান, সেলিম ওসমানসহ ক্যাডার বাহিনী।
ওসমান পরিবার পালালেও নারায়ণগঞ্জ ছাড়েননি তখনকার আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক এমপি এস এম আকরাম, মেজর জেনারেল (অব.) কে এম শফিউল্লাহ, বাহাউল হক, এমদাদুল হক ভূঁইয়া, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনসহ ওসমান পরিবারের বিরোধীরা। ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে আসেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তখন সে সময় তিনি নির্বাচনে জিতে সারাদেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে উজ্জীবিত করেন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে নারায়ণগঞ্জে ফিরে আসে পলাতক ওসমানরা। এসেই তারা আইভীর বিরোধিতা শুরু করেন। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে শামীম ওসমানকে ১ লাখ ভোটের বিশাল ব্যবধানে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন আইভী। এর পর থেকে আইভীর চরম বিরোধিতা করে গেছেন শামীম ওসমান।
অন্যদিকে সরকার পতনের পরও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে অফিস করেছেন আইভি। ১৫ আগস্ট শোক দিবসে জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলও দিয়েছেন তিনি।
বিষয়টিকে ইতিবাচক রাজনীতির উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিখিল দাস। তিনি বলেন, ডা. আইভীর কোনো গুন্ডা বাহিনী নেই। তিনি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলেছেন। তাই তাঁকে চলে যেতে হয়নি। অন্যদিকে শামীম ওসমান ও ওসমান পরিবার নামটিই অপরাজনীতির আরেক প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজ দল ছাড়া কোনো রাজনৈতিক পক্ষকেই তিনি নারায়ণগঞ্জে দাঁড়াতে দেননি। ফলে সরকার পতনের পর তাঁকে কেউ নারায়ণগঞ্জে দাঁড়াতে দেবে না– এটা ওসমানরা ভালোই বুঝতে পেরেছেন। তাই তারা শহর ছেড়ে পালিয়েছেন।
জেলা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক তরিকুল সুজন বলেন, শেখ হাসিনার দুঃশাসনের নারায়ণগঞ্জের প্রতিনিধি ছিলেন শামীম ওসমান। গত ১৯ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত তিনি ও তাঁর ক্যাডার বাহিনী ছাত্র-জনতার ওপর সশস্ত্র হামলা করে অনেককে হতাহত করেছে। ফলে তাঁকে পালাতে হয়েছে। অন্যদিকে ডা. আইভী আওয়ামী লীগ করলেও কখনও কারও ওপর হামলা করেননি, ক্ষমতার প্রভাব খাটাননি। তাই তিনি নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করতে পারছেন।
তবে আইভী প্রশ্নে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একটি অংশ প্রকাশ্যেই তাঁর বাড়ির ইট খুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। অন্যদিকে বেশির ভাগ বিএনপি নেতা এ ব্যাপারে কথা বলতে নারাজ। মহানগর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক হাফেজ আব্দুল মোমেন বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডকে মৌনভাবে সমর্থন দিয়েছে, তারাও অপরাধী। মেয়র আইভী সে রকম। আর শামীম ওসমান একজন ভয়ংকর সন্ত্রাসী। সে সন্ত্রাসী বলেই নিজেই ভয়ে পালিয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘যদি নগরবাসীর জন্য, মানুষের জন্য ভালো কিছু করে থাকি, তাহলে তার সুফল ভোগ করব। যখন কাজ করেছি তখন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত দেখে করিনি। এ নগরের সবার জন্যই কাজ করেছি।’