কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করে বিএনপি সরকার হটাতে চায় : কাদের
ছবি: সংগৃহীত
দেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের ওপর ভর করে বিএনপি সরকার হটাতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ নিয়ে তিনি দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
আজ (মঙ্গলবার, ৯ জুলাই) দুপুরে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত যৌথসভায় তিনি এ কথা বলেন।
কোটা নিয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার জানিয়ে কাদের বলেন, 'যারা আজকে আন্দোলন করছেন, তাদের আইনজীবী আদলতে প্রতিনিধিত্ব করবেন। তাদের কথা নিশ্চয়ই আদালত শুনবেন, সরকার পক্ষের কথাও শুনবেন। সব পক্ষের কথা শুনে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেবে। এটাই আমরা আশা করি।'
সে পর্যন্ত ধৈর্য ধরার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, 'আমরা যে যাই করি, জনদুর্ভোগের কারণ যাতে সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে আন্দোলনকারীদের অবশ্যই সতর্ক মনোযোগ আমরা আশা করছি।'
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কাদের বলেন, 'এ নিয়ে কারও কোনো প্রকার উসকানিতে আমরা যাব না। আমাদের কেউ যেন কোনো প্রকার উসকানিতে না যায় সে ব্যাপারে আমরা সবাইকে সতর্ক করে দিচ্ছি। আপনারা জানেন, আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে আছেন। তিনি যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেভাবেই আমরা চলছি।
'তিনি বহু আন্দোলন করেছেন, আবার অনেক আন্দোলন মোকাবিলাও করেছেন। তার অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ নেতৃত্বে আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাব। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত,' যোগ করেন কাদের।
তিনি আরও বলেন, 'যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগকে খুব সতর্কভাবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। কোনো অবস্থায় উসকানি দেওয়া যাবে না এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেও নেত্রী (শেখ হাসিনা) নির্দেশ দিয়ে গেছেন, তাদের পক্ষ থেকেও কোনো উসকানি যাতে না দেওয়া হয়।'
সর্বজনীন পেনশন প্রসঙ্গে কাদের বলেন, 'আনুষ্ঠানিক বৈঠক না হলেও শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। সেটাও খুব বেশি জটিল সমস্যা নয় যে, সমাধানের অযোগ্য। এটার সমাধান অচিরেই হয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি, আশা করি।'
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'শিক্ষকদের আন্দোলনও অরাজনৈতিক এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও অরাজনৈতিক। এই অরাজনৈতিক আন্দোলনে বিএনপি এবং তাদের সমমনষ্কদের কারও কারও রাজনৈতিক সমর্থনের বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এই অসম মহলটি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দাবির বিষয়কে উসকানি দিয়ে-ইন্ধন দিয়ে যাতে দেশে একটি বিশৃঙ্খলার আবহ তৈরি করতে না পারে, সে ব্যাপারে সর্বত্রই আমাদের সাবধান থাকতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, '(বিএনপি) নিজেরা আন্দোলন করতে পারেনি। ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনের ওপর ভর করেছে। এবারও তারা; নিজেরা আন্দোলনে ব্যর্থ, হেরে যাওয়ার ভয়ে নির্বাচনে যায়নি, এখন যদি কোটা সংস্কার আন্দোলনের ওপর ভর করে সরকার হটানোর দুরভিসন্ধি বাস্তবায়ন করা যায়—সেটাই হলো তাদের লক্ষ্য। কাজেই অশুভ তৎপরতা সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সেটা আমি সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।'
বিএনপি আবারও অভিযোগ তুলেছে সরকার রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না, বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন—গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, 'কারণটা আইনগত, রাজনৈতিক নয়। এখন বিএনপি সব কিছুতেই রাজনীতির গন্ধ খুঁজে পায়। বেগম জিয়ার জন্য লিগ্যাল ব্যাটেলটা করেনি তারা। মাসের পর মাস আদালতে উপস্থিতি থেকে তারা খালেদা জিয়াকে বিরত রেখেছে। তাকে উপস্থিত হতে দেননি। মামলাটাকে প্রলম্বিত করা হয়েছে। জামিনও চায়নি। আর এই শহরে দৃশ্যমান একটা বিক্ষোভ মিছিল খালেদা জিয়ার জন্য বিএনপি করেছে এমন প্রমাণ আমাদের কাছে নেই।'
আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, 'আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসা হবে সেটা কি আমরা বলেছি? তারা কী বললো সেটা ব্যাপার না। আমাদের সুবিধা-অসুবিধা থাকতে পারে। আমরা তাদের কোনো প্রকার অসম্মান তো করছি না। আমরা তাদের আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করছি, সময় মতো এটা সমাধান হয়ে যাবে। এটাই আমরা আশা করি।'