রিয়াজের শ্বশুরের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন
ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করা ব্যবসায়ী আবু মহসিন খানের ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা বলছেন, মাথায় গুলিতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে তার মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার ময়নাতদন্ত হয়।
ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, আবু মহসিন খানের মৃত্যু গুলিতেই হয়েছে। একটা গুলি লেগেছে মাথার ডান পাশে। এটি মাথার বাম পাশ থেকে পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে এর বেশি কিছু জানাননি তিনি।
মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আবু মহসিন খান (৫৮) চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর। তিনি ধানমন্ডি ৭ নম্বর রোডের ২৫ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। সেখানেই তিনি ফেসবুক লাইভে এসে বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন। আবু মহসিন এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন। ছেলে বড়। তিনি মাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। আত্মহত্যার আগে আবু মহসিন নিজের ব্যক্তিজীবনের নানা হতাশার কথা তুলে ধরেন।
লাইভে এসে তিনি বলেন, ‘আমার বয়স ৫৮ বছর, কোনো এক সময় আমি খুব ভালো ব্যবসায়ী ছিলাম। বর্তমানে আমি ক্যানসার রোগে আক্রান্ত। তাই এখন আমার কোনো ব্যবসা বা কোনো কিছুই নেই। আজকের লাইভে আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমার অভিজ্ঞতা আপনাদের জানানো। এ অভিজ্ঞতা থেকে আপনারা হয়তো অনেক কিছু জানতে পারবেন, সাবধানতা অবলম্বন করবেন। গত ৩০ তারিখ আমার খালা মারা যান। উনার একটি ছেলে, কিন্তু মা মারা যাওয়ার খবর পেয়েও সে দেশে আসেনি। এ বিষয়টি আমাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে।’
মহসিন খান আরও বলেন, ‘আমার একটা ছেলে, সে অস্ট্রেলিয়াতে থাকে, আমি আমার বাসায় সম্পূর্ণ একা থাকি। খালা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার ভেতরে ভয় ঢুকে গেছে। আমি যদি আমার বাসায় মরে পড়ে থাকি, আমার মনে হয় না, এক সপ্তাহেও কেউ জানতে পারবে না। এজন্য লাইভে আসা। ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী–যাদের জন্য যা-ই কিছু আমরা করি। আমরা সবকিছু করি সন্তান এবং ফ্যামিলির জন্য। আপনি যদি এক শ টাকা ইনকাম করেন, আয় করেন তার ২০ পারসেন্ট টাকাও আপনি নিজের জন্য ব্যয় করেন না। যদি ২০ পারসেন্ট টাকা আপনি নিজের জন্য ব্যয় করেন, তাহলে ৮০ পারসেন্ট টাকা আপনার ফ্যামিলির জন্য ব্যয় হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত করোনা শুরুর আগে থেকে আমি বাংলাদেশে আছি। একা থাকা যে কী কষ্ট-যারা একা থাকেন, তারাই বলতে পারেন। যাদের জন্য আমি বেশি করছি, প্রত্যেকটা লোকের কাছে আমি প্রতারিত হয়েছি। আমার এক বন্ধু ছিল, নাম কামরুজ্জামান বাবলু। যাকে আমি না খেয়ে তাকে খাইয়েছি। সে আমার ২৩-২৫ লাখ টাকা মেরে দিয়েছে।’
ফেসবুক লাইভে ব্যক্তিগত জীবনের হতাশার কথা বলতে গিয়ে কয়েকবার কেঁদেও ফেলেন মহসিন খান। আত্মহত্যার ঠিক আগমুহূর্তে তিনি তার ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে কথা বলেন। বলেন, ‘তোমরা একটা ভাই, একটা বোন মিলেমিশে চোলো। আর বাবা হিসেবে আমাকে ক্ষমা করো। ভালো থেকো।’
এরপরই তিনি মাথায় গুলি করেন। তখন তার মোবাইলটি বেজে ওঠে।পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ল্যাবের বিশেষ পুলিশ সুপার রুমানা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, আবু মহসিন খান একাই ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন। তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নন বলে টাইপ করা একটা সুইসাইড নোটে লিখে গেছেন তিনি। এছাড়া দরজার সামনে লেখা ছিল ‘মামা দরজা খোলা হাতলের হ্যান্ডেল চাপ দিয়ে ভিতরে ঢুক।’ তিনি আরও বলেন, সুইসাইড নোটগুলো ধানমন্ডি ক্রাইম টিমের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট সম্পর্কিত বিষয়গুলো সিআইডির কাছে রয়েছে।
এসএ/