বেনজীরকে সন্তানের মতো লালনপালন করে বড় করেছে সরকার: রিজভী
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ছবি: সংগৃহীত
বাবা-মা সন্তানকে লালন পালন করে ছোট থেকে যেভাবে বড় করে ঠিক তেমনিভাবে সরকার বেনজীরকে লালনপালন করে বড় করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। রুহুল কবির রিজভী বলেন, যে বেনজীরের নামে এত ঘটনা তিনি বিদেশে চলে গেলেন। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন— বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে তার কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
তিনি বলেন ‘যে বেনজীর সাহেবের নামে এত ঘটনা, তিনি বিদেশে চলে গেলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে তার কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তাহলে এই সমস্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে কি প্রমাণিত হয় না, সরকার বেনজীর সাহেবকে লালন-পালন করেছে? যেমন বাবা-মা শিশু সন্তানকে লালন-পালন করে ছোট থেকে বড় করে, ঠিক তেমনিভাবে এই সরকার বেনজীর সাহেবকে লালন-পালন করে বড় করেছে।’
রিজভী বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে মানুষের ফসলি জমি আত্মসাৎ করা মানুষের বাড়ি ঘর আত্মসাৎ করা ঢাকা শহরের ফ্ল্যাটের পরে ফ্ল্যাট স্ত্রীর নামে, মেয়ের নামে, সবার নামে ফ্ল্যাট কিনেছেন এই বেনজীর। কারণ, এদেরকে দিয়েই শেখ হাসিনা ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছেন, রাতের অন্ধকারে নির্বাচন করেছেন, সমস্ত অপকর্ম করেছেন এদেরকে দিয়ে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘বেনজীরদেরকে দিয়ে সরকার কত বিএনপির নেতাকর্মী, অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, শ্রমিক থেকে শুরু করে কতজনকে যে অপহরণ করেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা করিয়েছেন। এই যে ঘটনাগুলো আজিজ ও বেনজীর সাহেবের আজকে মানুষ শুধু বিস্ময়ে শুনছে। খবরের কাগজে পড়ে মানুষ বিস্মিত। আমরা তো মাত্র ছিটেফোঁটা জানি, ভিতরে যে আরও কত কী আছে।’
‘গুণী মানুষরা এখন কারাগারের লোহার খাঁচায়’ মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘ড. ইউনুস বলেছেন, আমি আধা ঘণ্টার মতো লোহার খাঁচায় ছিলাম। আর দেশের সবচে জনপ্রিয় যে ব্যক্তি, তিনি বছরের পর বছর লোহার খাঁচার মধ্যে আবদ্ধ। আজকে ড. ইউনুস সাহেবরা সম্মানিত নন, এখন সম্মানিত কে? বেনজীর। সম্মানিত কে? আজিজ। কী ব্যাকগ্রাউন্ড? এগুলো বলার মতো নয়।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বেনজীরের স্ত্রীর নামে ৬৪৬ বিঘা জমি। এই ভদ্রলোক বেনজীর সাহেব ওসিদের সম্মেলনে বলেছিলেন, দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। যদি হঠাৎ করে শয়তান এসে বক্তব্য দেয় তোমরা সৎভাবে চলো, তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে চলো, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, এটা যেমন বিস্ময়কর ব্যাপার হবে, ঠিক এই সরকারের মন্ত্রীরা যখন উপদেশ দেয়, এই সরকারের আমলারা যখন কোনো উপদেশ দেয়, তখন সেটিই মনে হয়।’
রিজভী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার নামে বাবা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন, এখন আওয়ামী লীগ নেতা মামা আওয়ামী লীগের এমপি, খালু আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা, এদেরকে ঢুকানোর জন্যই এই প্রক্রিয়া চলছে। আমরা ফ্যাসিবাদের এক চরম বিষবাষ্পের মধ্যে বসবাস করছি। আমরা যে শ্বাস নেই, সেটা ফ্যাসিবাদের। যে বাতাস সেই ফ্যাসিবাদের বাতাসের বিষবাষ্প আমাদেরকে গ্রহণ করতে হচ্ছে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘মানুষের শেষ আশ্রয় আদালত সেটি আইন সঙ্গতভাবে সেটিতে রুল অব ল, অর্থাৎ বিচারবিভাগের যে স্বাধীনতা এই স্বাধীনতা নেই, বরং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা তারা নিজেরাই সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। সেটি না হলে যশোরের নোয়াপাড়ার একজন মহিলা আফরোজা বেগম তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে ফ্যানের সঙ্গে টানিয়ে টর্চার করে মেরে ফেলল। সে যদি ড্রাগ এডিক্টেড (মাদকাসক্ত) হয়, সে যদি ড্রাগের (মাদকের) ব্যবসা করে, তার কাছ থেকে নাকি ইয়াবা পেয়েছে! তার ছেলে আশপাশের লোক কেউ বলেনি, তিনি এটা করে। এটা হচ্ছে পুলিশের অভিযোগ। তাকে টর্চার করে মেরে ফেলা হলো, এটার কারণ হচ্ছে দেশে আইনের শাসন নেই। বিচার বিভাগের কাছে মানুষের যে শেষ আশ্রয়, সে আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই আজকে পুলিশ বেপরোয়া।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘মানুষ এখন চোখ দিয়ে পানি ফেলতেও ভয় পায়, যদি এটা আওয়ামী লীগের লোক দেখে, যদি পুলিশ দেখে, পরে যদি আমার আবার বিপদ হয়। মানুষ এখন হৃদয়ের মধ্যে কান্নাকাটি করছে, অন্তরের মধ্যে কান্নাকাটি করছে, অর্থাৎ মানুষ কান্না করতেও ভয় পাচ্ছে। এই সমাজ এই রাষ্ট্রের মধ্যে আমরা বসবাস করছি।’
সংগঠনের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মুজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম ও মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিমসহ অন্যান্যরা বক্তব্য দেন।