ইন্ডিয়া আউট যারা বলছে, তারাই জনগণ থেকে আউট হয়ে গেছে: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যারা আজকে ভারতবিরোধী স্লোগান দিচ্ছে, বলছে ইন্ডিয়া আউট তারা আসলে বাংলাদেশের জনগণ থেকে আউট হয়ে গেছে । তারাই পাকিস্তান পন্থী, পাকিস্তানি যে আদর্শ সেটা প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।
বুধবার (২৭ মার্চ) ঢাকায় মতিঝিলস্থ বিআইডব্লিউটিএ ভবনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেন।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার এই মাসেও আমরা দেখছি আবারো পানি ঘোলা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারত সরকার, ভারতবাসী মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদেরকে যেভাবে সহায়তা করেছে; আমরা যদি সেটা ভুলে যাই, তাহলে আমরা কি ধরনের মানুষ হলাম। এক কোটি মানুষ ভারতের শরণার্থী শিবিরে স্থান পেয়েছিল। তারা তাদের খাইয়েছে, পড়িয়েছে, শিক্ষা দিয়েছে, চিকিৎসা দিয়েছে, ট্রেনিং দিয়েছে, অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে। সম্মিলিত মিত্রবাহিনী হিসেবে তারা সরাসরি অপারেশনে গেছেন।
তিনি বলেন, ১৭ হাজার ভারতীয় সৈন্য এ মাটিতে ঘুমিয়ে আছে। হানাদার বাহিনীর হাত থেকে আমাদের মাতৃভুমিকে রক্ষা করার জন্য তারা যে অবদান রেখেছে- এটা কি আমরা ভুলে যাব! আর আজকে এই দেশ থেকে ইন্ডিয়া আউট, ভারত আউট কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে এটা খুবই দুঃখজনক। যারা ভারত বিরোধি স্লোগান দিচ্ছে, ইন্ডিয়া আউট বলছে- তারা আজকে বাংলাদেশের জনগণ থেকে আউট হয়েছে। তারা পাকিস্তানপন্থী এবং পাকিস্তানের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারত সহযোগিতা করেছে বলেই ভারত বিরোধি স্লোগান এবং রাজনীতিতে যখনই পরাজিত হয়ে যায় এবং জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়-তখনই ভারত বিরোধি স্লোগান শুরু করে। ভারত বিরোধি স্লোগান মানেই তো সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি। এর মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা লুকিয়ে আছে। এ সাম্প্রদায়িকতার জন্য কিন্তু আমরা মুক্তিযুদ্ধ করি নাই। এ সাম্প্রদায়িকতার জন্য ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দেয়নি। এ সাম্প্রদায়িকতার জন্য লক্ষ লক্ষ মা ও বোনের আত্মত্যাগ নেই। আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চাই। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ থাকলে দেশে এগিয়ে যাবে বর্তমান বাস্তবতা সেটি প্রমান করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করলে যে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় আজকে ২০২৪ সাল সেটি প্রমাণ করছে। ভারত আউট মানেই হলো সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠিকে আহবান জানানো। আমরা তো সেই জায়গায় ফিরে যেতে চাইনা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে সাধারণ করতে চায়; তারা বাংলাদেশের উন্নয়নটাকে, দেশের এগিয়ে যাওয়াটাকে সহ্য করতে পারেন না। বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ সারা পৃথিবীতে কেন বিস্ময়কর একটি জায়গায় চলে গেল, কেন এটি উন্নয়নের রোল মডেল হলো- এটা তাদের বড় কষ্ট। তারা এই উন্নয়ন চায় না, তারা সবসময় প্রভুত্ববাদের বেড়াজালের আবদ্ধ থাকতে চায়। দেশের উন্নয়ন এবং স্বাবলম্বী হওয়া তারা চায় না। এজন্য বিভিন্নভাবে বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার চেষ্টা করে। বাকশাল একটি দেশের উন্নয়ন কর্মসূচি। সেই কর্মসূচিকে রাজনীতিকরণ তারা করে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর শুধু একটাই কারণ-দেশের স্বাধীনতা সুখ যেন আমরা না পাই। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি কমিটি গঠন করে দিল।
তিনি আরও বলেন, ১০ সদস্যের ওই কমিটিতে ৭ জন নোবেল লরিয়েট ছিলেন। ওই কমিটি বাংলাদেশের ভবিষ্যতর সম্পর্কে গবেষণা করলো। তারা গবেষণা করে দেখলো এই দেশের কোন ভবিষ্যৎ নেই। এই দেশকে সাহায্য সহযোগিতা করে কোন লাভ হবে না। এটা অসুস্থ একটা রোগী। এটাকে আর বাঁচানো সম্ভব না। তখন তারা বলল-বাংলাদেশের দিকে না তাকিয়ে অন্য কোনো দেশের দিকে তাকাতে। হেনরী কিসিঞ্জার বলেছিল- বাংলাদেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি। তাদের এই থিওরির বিপরীতে দাঁড়িয়ে এই দেশকে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। এবং যেই জায়গায় নিয়ে গেছেন, সেই জায়গাগুলো এখনও আমরা ছুঁয়ে দেখতে পারি নাই। এ কারণেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। এই হত্যাকান্ড শুধু একটি পারিবারিক হত্যাকন্ড নয়। হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য, একটি দেশকে হত্যা করার জন্য।
আজকে তাঁরই রক্তের উত্তরাধিকার দেশরত্ন শেখ হাসিনা সেই কাংখিত লক্ষ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন। ৭৫ এর পরে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। আমরা যদি ৭৫ এর এবং মুক্তিযুদ্ধে সেই জায়গায় ফিরে যেতে চাই- হবে না। কারণ সমাজ অনেক বিশৃংঙ্খলা হয়ে গেছে। শিক্ষায় বিশৃঙ্খলা হয়েছে, অর্থনীতিতে বিশৃংখলা হয়েছে। সবকিছুতে ভেজাল ঢুকে গেছে। এই ভেজালকে পরিশুদ্ধ করা কঠিন কাজ। এর মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর ভাইস চ্যান্সেলর হলো অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দেলোয়ারা বেগম এবং বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মো. শরীফ উদ্দিন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়।