এক-এগারোর কুশীলবরা ছোবল দিতে ঘাপটি মেরে আছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ছবি: সংগৃহীত
এক-এগারোর কুশীলবরা ঘাপটি মেরে বসে আছে। যদি কোনও সুযোগ পাওয়া যায় ছোবল মারার জন্য বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার (২০ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জিল্লুর রহমান পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যারা এক এগারোর কুশীলব ছিলেন তারা এখনো জাতিকে মাঝে-মধ্যে জ্ঞান দেয়। টেলিভিশনের পর্দায়, পত্রিকার পাতায় তারা এই জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছেন। গত নির্বাচনের আগেও তারা সক্রিয় হয়েছিল, যদি কিছু করা যায় সেই আশায়। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও রাজনৈতিক কৌশলের কাছে বিএনপি- জামায়াত অপশক্তি যেমন পরাজিত হয়েছে তেমনি এই কুশীলবদের স্বপ্নও ধূলিস্যাৎ হয়েছে। তারা এখন ঘাপটি মেরে বসে আছে। যদি কোন সুযোগ পাওয়া যায় ছোবল মারার জন্য। সুতরাং আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, এক এগারোর পরিবর্তনের পর দেশের গণতন্ত্রকে বাক্সবন্দী করা হয়েছিল। গণতন্ত্রের পায়ে শেকল পরানো হয়েছিল। তখন জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্ত করার আন্দোলনে সামিল হয়েছিলাম। জনগণও আমাদের সাথে যোগ দিয়েছিল। নেতাকর্মীদের আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা মুক্ত হয়েছিল, তা নয় আমাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াও মুক্ত হয়েছিল। খালেদা জিয়া গ্রেফতার হবার পরে তার পারসোনাল উইং থেকে ফোন করা হয়েছিল। আমাকে বলেছিল চলেন একসাথে কিছু করি। অর্থাৎ তারাও অসহায় হয়ে গিয়েছিল। এই অসহায়ত্ব থেকেই তারা ফোন করেছিল যাতে যুগপৎ আন্দোলনে করে ওই পরিস্থিতি থেকে উত্তোলন ঘটানো যায়।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্মৃতিচারণ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জিল্লুর রহমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। চাপের মুখে ১/১১ এর কঠিন সময় তিনি যেভাবে ধৈর্য সহকারে সবকিছু সামাল দিয়েছিলেন। তিনি দলকে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ রেখেছিলেন তা অভাবনীয়। সে কারণেই আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। তিনি একজন দৃঢ়চেতা, ধৈর্যশীল নেতা ছিলেন। কিভাবে সংকটে, সংগ্রামে, প্রতিকূল পরিস্থিতির মুহূর্তে ধৈর্য্যহারা না হয়ে অবিচল থাকতে হয় তা দেখেছি। তার কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।
আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, জিল্লুর রহমান লম্বা সময় ধরে জাতির জনকের সাথে রাজনীতি করেছেন। তার প্রতি বঙ্গবন্ধু এবং তার কন্যা শেখ হাসিনার অগাধ বিশ্বাস ছিল। তিনি অনেক গুছিয়ে কথা বলতে পারতেন। ১/১১ এর সময় যখন শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তখন তিনি মিডিয়ার সামনে এতো গুছিয়ে এবং টু দ্য পয়েন্টে কথা বলেছেন তাতে মনে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী জেলে যাবার আগে তাকে সব বলে দিয়ে গিয়েছেন। অথচ তখন তিনি স্ত্রী হারানোর শোকে অসুস্থ। তার কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।
জিল্লুর রহমান পরিষদের সভাপতি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকি বলেন, জিল্লুর রহমান এমন একজন মানুষ ছিলেন যিনি সবসময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শে থেকে সমাজের কথা চিন্তা করেছেন। তিনি তার জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দৃঢ়ভাবে অটল ছিলেন। সেনা শাসনের (১/১১) সময় জিল্লুর রহমান বলেছিলেন 'শেখ হাসিনাকে ছাড়া আমরা নির্বাচনে যাবো না'। তার ওই বক্তব্যের পর কিন্তু সেনা শাসকরা বুঝতে পেরেছিল শেখ হাসিনাকে ছাড়া নির্বাচন সম্ভব না। ওই সময়ে তার ওই বক্তব্য কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও জিল্লুর রহমান পরিষদের সভাপতি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. আক্তারুজ্জামান খোকার সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায়, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সহ-সভাপতি শেখ মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষ প্রমুখ।