সরকারবিরোধী দলগুলোকে পাশে চায় বিএনপি
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠায় ‘একদফা’ আন্দোলনে যেতে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশে চায় বিএনপি। সেই লক্ষ্যে স্বল্প সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তবে শুরুতেই নতুন কোনো জোট তৈরিতে নারাজ দলটির হাইকামাণ্ড।
শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সারাদেশের মানুষের ম্যান্ডেট তাদের পক্ষেই আছে যুক্তি তুলে ধরে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের ভাষ্য-নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকালিন সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে বিন্দু পরিমাণ সরে দাড়াঁয়নি দল। বরং একই দাবিতে অবস্থান অনড় ও দৃঢ় রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই উঠে আসে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, খাতা কলমে না হলেও রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপিই। কিছু অভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতা সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য কয়েক দফার আন্দোলন করেও সাফল্য নিজেদের ঘরে তুলতে পারেনি। তাই এবার কিছুটা ভিন্ন কৌশলে অগ্রসর হতে হবে দলটির। উৎসবের আমেজ নেই, দাবি আদায়ের আন্দোলন ইস্যুতে নেতা-কর্মীদের উদ্দীপনা আগের চেয়ে বেশিই রয়েছে। এখন প্রয়োজন সংঘবদ্ধ আন্দোলন। রাজনৈতিক সমাঝোতার পথ ক্ষীণ বিবেচনায় সরকারের সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে রাজনীতিতে আলোচনা নিদিষ্টফ্রেম বেধে হয় না। সেই দরজা হাতে রেখে সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নামতে হবে। সেক্ষেত্রে কিছুটা সতর্ক ও কৌশলীর পথে আন্দোলনের ছক আঁকতে হবে। তবেই পরিস্থিতি বলে দেবে শেষ পর্যন্ত কখন বাঁকা পথে হাঁটবে বিএনপি। নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলন-লড়াই করে যাওয়ার সিদ্ধান্তে পিছপা হবে না দলটি।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘আমরা এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করিনি। সময় মতো জানবেন, আমরা যা কিছু করি তা জানিয়েই করি।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি আবার নতুন কোনো জোটবদ্ধ হচ্ছে কী? কিংবা নির্বাচনী জোট, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কোনো নির্বাচনী জোট হচ্ছে না। আগেই বলেছি আমরা আন্দোলন ও বৃহত্তর ঐক্যের জন্য চেষ্টা করছি, কাজ করছি।’
সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জোটে জড়াবে না দাবি করলেও বিএনপি ১৯৯১ সালে চারদলীয় জোট, পরবর্তীতে ১৮ দলীয় জোট, ১৯ দলীয় জোট এবং সবশেষ ২০১৮ সালে একদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে জোটবদ্ধ হতে দেখা গেছে। যদিও দলটির পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হয়- ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছিল তাদের শুধু মাত্র নির্বাচনী জোট।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘নতুন জোটের কথা আসছে কিভাবে? জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে করতে হবে, সেই দাবি আদায়ের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। দলীয় সরকার ও শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে, সেখানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা মানেই জোটবদ্ধ হতে হবে? কিছু সিদ্ধান্ত থাকে দলের শীর্ষ পর্যায়ের মতামত। দুই/এক দিনের মধ্যে মহাসচিব সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত করবেন।’
এদিকে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ বিএনপির পাশাপাশি আরও ছয়টি দল বর্জন করেছে। যা তাদের জন্য ইতিবাচক বলেও মনে করছেন বিএনপি নেতারা। সংলাপে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা ছয়টি দল হচ্ছে- বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। বিএনপিসহ প্রতিটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতির সংলাপকে অর্থহীন বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে। দলগুলোর ভাষ্য- ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা প্রতিফলন ঘটানোর মাধ্যম হচ্ছে রাষ্ট্রপতির সংলাপ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগ দেওয়ার নামে লোক দেখানো সংলাপ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনকালিন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ছিলাম, আছি। আন্দোলন চলমান।’
এমএইচ/