আমাদের ঘরের মধ্যে ঘর কাটা ইদুর: ইনু
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক (জাসদ) সভাপতি ও সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘আমাদের ঐক্য কার্যকর না। দু:খের সঙ্গে দেখছি আমাদের সমন্বয়হীনতা আছে। আমাদের ঘরের মধ্যে ঘর কাটা ইদুর। উইপোকা গুণ্ডতন্ত্রের দাপট চলছে। আমরা দেখছি শেখ হাসিনার উন্নয়নের সুফল অনেকটাই তারা খেয়ে ফেলছে। ঘর কাটা ইদুর উইপোকা গুণ্ডাবাজীদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করা জন্য ঐক্য দরকার।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) একাদশ জাতীয় সংসদের ১৬তম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক এই মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
হাসানুল হক ইনু বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি, আমাদের যুদ্ধ শেখ হাসিনার যুদ্ধ এক। আমাদের দুই ফ্রন্টের যুদ্ধ এই দুই ফ্রন্ট এক হয়ে এক ফ্রন্ট পাকিস্তান পন্থা সাম্প্রদায়িকতাকে মোকাবিলা করতে হবে, আর এক ফ্রন্ট আমাদের দুর্নীতিবাজদের মোকবিলা করতে হবে। এই যুদ্ধের হারার কোন সুযোগ নেই। আমাদের সামনেই এগোতে হবে ভবিষত প্রজন্মের জন্য। জঙ্গি হামলার মোকাবিলা ঠেকাতে ঐক্যের ঢালকে মুজবুত করার দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, মৌসুমে মৌসুমে জঙ্গির তাণ্ডব। জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেই চলেছে। এটা প্রমাণ হয় যে হেফাজত জামায়াত জঙ্গি এর বদলায়নি। এর বাংলাদেশের রেজিস্ট্রাট বেঈমান। এরা পাকিস্তান পন্থার ধারক এবং বাহক। এদের আত্মা পাকিস্তানে। এই সাম্প্রদায়িক চক্র বাংলাদেশে ধর্ম নিরপেক্ষতাকে হারাম বলে আর ভারত আমেরিকা ইংল্যান্ডে গেলে তারা ধর্ম নিরপেক্ষতায় হালাল বলে এবং আরাম মনে করে। এই দ্বিমুখি চালবাজী রাজনীতি বন্ধ করা দরকার। এটা প্রমাণ হয় যে বিএনপি জামায়াত জঙ্গিরা হচ্ছে মাঠের একজোট। জামায়াত হচ্ছে ডাইরেক্টর আর বিএনপি হচ্ছে প্রডিউসর। এরা পাক রুহানি শক্তি দ্বারা পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে সর্ম্পকযুক্ত জ্বীনগতভাবে এরা সম্পর্কযুক্ত। এদের তিন পক্ষকে দমন এবং বিদায় জানানো উচিত। তাই হেফাজতের সাম্প্রতিক তাণ্ডব, সশস্ত্র আক্রমণের ক্ষয়ক্ষতি গ্রেফতার মামলা সাজার উপর একটা শেতপত্র প্রকাশ করুন। সম্প্রতিক দুর্গপূজাকে কেন্দ্র যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার উপর একটা পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করুন।
তিনি আরও বলেন, কওমী মাদরাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত বাজানো বাধ্যতামূলক করুন। পতাকা উত্তোলন বাধ্যতামূলক করুন এবং তদারকির ব্যবস্থা করুন। সংখ্যালঘু ধর্ম সম্প্রদায় ও নৃগোষ্ঠীর জন্য সংখ্যা লঘু সুরক্ষা আইন ও কমিশন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সকল স্কুলে হিন্দুসহ অন্য ধর্মের শিক্ষক নিয়োগ করা দরকার। স্বাধীনতার ৫০ বছরে পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে শত্রুতা করেই চলেছে। তাই ৭১ এর নির্মম গণহত্যা নির্যাতন লুণ্ঠনের জন্য পাকিস্তানের নি:শর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবিটা বাংলাদেশ সরকার জোরে সরে আন্তর্জাতিক মহলে উত্থাপন করার আহ্বান করেন। তাছাড়া ২৫ মার্চের গণহত্যাকে রাষ্ট্রীয় দিবস হিসেবে পালন করার দাবি করেন তিনি।
জাসদ সভাপতি বলেন, সংবিধান পর্যালোচনা করা দরকার, সংস্কার করা দরকার। তাই তিনি সংবিধান পর্যালোচনার জন্য সংসদের বিশেষ কমিটি গঠন করার প্রস্তাব করেন। ইনু বলেন, আরও কয়েকটি সমস্যা কাঁটার মতো পায়ে বিধছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের কারো কারো কাণ্ডজ্ঞানহীন কথা বার্তা আচার আচারণ দু:খজনক। ভাব দেখে মনে হচ্ছে কতিপয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সাহেবরা তারা ছাত্র-ছাত্রীদের সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলার অ্যাম্বিশনে নেমেছে। এটা দু:খজনক। এব্যাপারে সরকারের নজর দেওয়া উচিত। ইউপি নির্বাচনে যে রক্তা রক্তি খুনো খুনি হয়েছে তার দায় প্রশাসন এবং পুলিশ এরাতে পারে না। তাদের নেয়া উচিত এবং সরকাররেও নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, দেশের চলমান রাজনীতিতে পরিস্কার দুটো পক্ষ আছে। একটা স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ আর চার নীতির সংবিধানের পক্ষ আর একটা পক্ষ হচ্ছে পাকিস্তান পন্থা, সম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও দেশ বিরোধী পক্ষ। এই দুই পক্ষ ধারাবাহিকভাবে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে আছে। আমরা মনে করি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যার পর জিয়া-এরশাদের সামরিক শাসকদের হাত ধরে পাকিস্তান পক্ষ রাজাকারদের পক্ষ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নাজিল হয়। তারা নাজিল হয়ে মুক্তিযুদ্ধকে নির্বাসনে পাঠায়, বঙ্গবন্ধুকে নির্বাসনে পাঠায়। বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের উপর ক্রমাগত আক্রমণ চালাতে থাকে। দেশে যখন বিশ্ময়কর উন্নয়ন অগ্রযাত্রা চলছে স্বাবলম্বীতার পথে এগিয়ে চলছে তখন দেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য শুধু ভেঙে ফেলার হুমকি দেওয়াই হয়নি ভাস্কর্য এবং ম্যূরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। এই অবস্থায় যারা মুজিব কোর্ট পরে তারা ভয়ে মুজিব মিনার বানানোর প্রস্তাব দিয়েছেন এটা অত্যান্ত দু:খজনক।
ইনু বলেন, বিএনপি সাম্প্রতিকালে একটা অস্বভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছে। নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার প্রস্তাব দিয়েছে। তারা প্রকাশ্যেই অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠার হুমকি দিচ্ছে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে সত্যি তেমনি বাংলাদেশ পন্থা এবং পাকিস্তান পন্থার যুদ্ধও চলছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কর্ণেল তাহেরকে হত্যা পর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি যখন এক তরফা মেরেই চলছিল, আমরা আত্মরক্ষা করেছিলাম আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছিলাম। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি যখন রাষ্ট্রীয় রাজনীতিতে ফেরত এলো ভারসম্য তৈরি হল। তখন যুদ্ধের তীব্রতা চোখে পড়ল। বিএনপি জামায়াত হেফাজত জঙ্গি পাকিস্তান পন্থা দেশ বিরোধী চক্র আসলে পরিবর্তনের ধারাটা বন্ধ করে দিতে চায়, পাল্টে দিতে চায়। তারা সংবিধানকে আবার নির্বাসনে পাঠাতে চায়। তারা নির্বাচনী সরকার, সাংবিধানিক সরকার উৎখাতের রাজনীতি শুরু করেছে। এই বিএনপি জামায়াত যুদ্ধের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে গণতন্ত্র মানবাধিকার। নির্বাচনের জন্য মায়া কান্না করছে। এরা নির্বাচনের আগেই ক্ষমতা নিশ্চিত করতে চায়। তারা সংলাপ নির্বাচন বানচাল করতে চায়।
তিনি বলেন, অতীতে চারটি নির্বাচন দেশীয় আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল। তাতেও শান্তি আসেনি। ২১ শে আগস্টের মতো নির্মম হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। তাই মৌলিক রাজনীতির বিষয়ে ঐক্যমত দরকার। শুধু নির্বাচন শান্তি দেবে না। মৌলিক বিষয়ে যদি অনৈক্য থাকে তাহলে পরিবর্তন হবে না।