বিএনপির লবিস্ট নিয়োগের তথ্য উপাত্ত তুলে ধরলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য বিএনপির প্রতি ধিক্কার জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, এই দেশটা আপনার আমার সবার। এই দেশের মঙ্গল কামনা আপনার আমার সবার। একটি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারেন, অনুযোগ করতে পারেন। কিন্তু দেশের বিরুদ্ধে যারা এই ধরনের অনুযোগ করে অপপ্রচার করে ধিক্কার তাদের প্রতি, শেইম অন দ্যাম। এ সময় তিনি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে বিএনপি বিভিন্ন সময় বিদেশি রাষ্ট্রগুলোতে যে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে তার তথ্য উপাত্ত সংসদে তুলে ধরেন।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) একাদশ জাতীয় সংসদের ১৬তম অধিবেশনে কার্যপ্রণালী বিধির ৩০০ বিধিতে একটি বিবৃতি প্রদান করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কার্যপ্রণালী বিধির ৩০০ বিধিতে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংসদকে অবহিত করার বিধান রয়েছে। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনার দলের মাঠে ময়দানে যে কর্মীরা কাজ করে, তারা যদি এগুলো শোনে তারা তখন আপনাদের নেতৃত্বকে প্রশ্ন করবে? আমি সেই দিনের প্রতিক্ষায় আছি।’
আবদুল মোমেন বলেন, আমাদের দেশে যুদ্ধাপরাধী বিচার যখন চলে তখন ইউনাইটেড স্টেট গভ:মেন্টকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সেই বিচার ভুল প্রমাণিত করার জন্য চেস্টা করে ‘পিস এন্ড জাসটিস’ নামের জামায়াত-বিএনপির প্রতিষ্ঠান। তারা ১ লাখ ৩২ হাজার ডলার দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করে। তারা যুদ্ধাপরাধী মামলা বন্ধ করার জন্য এটা করে। পরবর্তীতে কন্ড্রাক্ট পাবলিক অ্যাফেয়ারর্স আউট রিচ নামে আবার লবিস্ট নিয়োগ করে। শুধু জামায়াত করে নাই। বিএনপি ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এতোগুলো দিন তারা ২৭ লাখ ডলার খরচ করেছে। তারা প্রতি মাসে ১ লাখ ২০ হাজার খরচ করেছে। এগুলো আমেরিকার ওয়েবসাইটে আছে সবাই দেখতে পাবেন। আমেরিকাতে যেই লবিস্ট নিয়োগ করে না কেনো সেই ফার্ম তাদের আইন অনুযায়ী কি কারণে টাকা নিয়েছে, কত টাকা নিয়েছে সেটা তারা রেজিস্ট্রার করে। সেই রেজিস্ট্রেশন থেকে এই তথ্য পেয়েছি। বিএনপি ‘একিন গভমেন্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ও হুইফ্রেড তিনটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছে। সেখানে প্রতি মাসে ১ লাখ ২০ হাজার ডলার খরচ করে। এরপর তারা একটি প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ৫০ হাজার ডলার বিভিন্ন সময় দেবেন বলে নিয়োগ করেছেন।
তিনি বলেন, খুবই তাজ্জবের বিষয় ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে এখানে তাদের (বিএনপি) কিছু প্রতিনিধি আমেরিকায় গেছেন। সেখানে লবিস্ট নিয়োগ করার জন্য বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছেন। লবিস্ট নিয়োগ করা অন্যায় না। লবিস্ট কি কারণে নিয়োগ হয়েছে সেটা হচ্ছে দেখার। লবিস্টটের টাকা কোথা থেকে গেল? দু:খের বিষয় হচ্ছে তাদের লবিস্টরা এমন সব বক্তব্য দিয়েছেন, এমন সব বক্তব্য তুলে ধরেছেন যেগুলো দেশের মানুষ জানলে দু:খিত শুধু না তারা তাদের ধিক্কার দেবে। তারা (বিএনপি) চিঠি দিয়ে আমেরিকানদের বলেছে তোমরা যে সাহায্য সহায়তা দাও সেগুলো বন্ধ করে দাও। এই বন্ধ করলে কি হবে? এখানে যারা বিরোধী দলে আছেন বা যে যেখানে আছেন আমাদের দেশের নাগরিক যারা দুই বেলা খেতে পারে, গ্রামেগঞ্জে বিদ্যুৎ পায়, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে সেই উন্নয়ন যাতে ব্যাহত হয়, সেই উন্নয়ন যেন বন্ধ হয় তার জন্য তারা আমেরিকা সরকারকে বলছে। নিশ্চয়ই বিএনপির কর্মীরা কেউ চাইবেন না এ দেশের অমঙ্গল হোক। এদেশের ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হোক। কিছু সংখ্যক নেতৃত্ব স্থানীয় লোক বাজে কাজ করেছেন। আমার বিশ্বাস তারাও দেশের অমঙ্গল হোক দেশ রসাতলে যাক এটা চাইবেন না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতারা কিভাবে এমন করে লিখতে পারেন! দেশের অবস্থার পরিবর্তনের জন্য তারা বার বার আমেরিকা সরকারের কাছে ধন্না ধরেন। আমরা (সরকার) লবিস্ট নিয়োগ করি নাই। আমরা একটা পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছিলাম। লবিস্ট ফার্ম আর পিআর ফার্ম এর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে। একটা সিনেটে গিয়ে ইউএসএ গিয়ে বা বিভিন্ন সংস্থায় গিয়ে তদবির করে। আমরা সেই ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করি দেয়নি। আমরা যেটা করেছি সেটা ‘লবি ফার্ম’, তাদের দায়-দায়িত্ব, অপপ্রচার বা যে সকল মিথ্যা তথ্য প্রকাশ হয় সেগুলো জনগণকে জানাবে। সত্য কথাগুলো তারা বলবে। বিজিআর নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ২০১৪-১৫ সালে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, দু:খের বিষয় ১২টি আন্তর্জাতিক এনজিও জাতিসংঘের পিস কিপিংয়ের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে একটি চিঠি লিখেছে। তারা চিঠিতে বিভিন্ন ধরনের প্রপাগাণ্ডা ও স্পেকুলেশন তুলে ধরে বলেছেন-র্যাব বিভিন্ন রকম হিউম্যান রাইটস ভঙ্গ করছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের এক নম্বর পিস কিপার। সবচেয়ে বেশি সৈন্য আমরা শান্তিরক্ষায় পাঠাই। আমরা ভালোভাবে কাজটা করি বলেই বাংলাদেশ থেকে তারা সৈন্য নেয়। তারা বলছেন-যেহেতু বাংলাদেশের র্যাব বিভিন্ন রকম অপকর্মে নিযুক্ত আছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। সুতরাং বাংলাদেশ থেকে তাদের শান্তিরক্ষায় না নিতে বলা হয়েছে। ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর তারা এই অনুরোধ করে। দুই মাস হলো জাতিসংঘ এটা পেয়েছে। জাতিসংঘ তাদের উত্তরে বলেছে যখনই কোন লোককে শান্তিরক্ষায় নেওয়া হয় তারা নিজের নিয়মে যাচাই-বাছাই করে তারপর তারা কাজটা দেয়। সুতরাং এসব অপপ্রচার দুর্ভিসন্ধিমূলক কাজ জনগণের বিরুদ্ধে। আমার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ থাকতে পারে, র্যাব তো একটা ভালো প্রতিষ্ঠান তাকে বন্ধ করার জন্য তাদের নিরুসাহিত করার জন্য তাদের এই অপচেষ্টা। আমি নিশ্চয়ই বিশ্বাস করব তারাও দু:খিত হবেন, তারাও লজ্জা পাবেন। এ রকম একটা ভালো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য তারা উদ্যোগ নিয়েছেন। সেই জন্য তার বিশ্বাস-এই কারণে তারা(বিএনপি) লজ্জিত হবেন।
আবদুল মোমেন বলেন, দেশের অমঙ্গল ডেকে এনে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এমন কাজ করেছে তারা। আমাদের প্রতিপক্ষ দলের নেতারা বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৮টি কমিটির লোকজনকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে বলেছেন- দেশের সব রকমের সাহায্য বন্ধ করতে। তারা বলেছেন- আমেরিকার নিরাপত্তা বাংলাদেশের কারণে বিঘ্নিত হবে। তারা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন, বিশেষ করে ভাষানচরে নিয়ে যে পরিকল্পনা করেছেন এটা আত্মঘাতী। তারা বলেছেন- এই আশ্রয়ের ফলে আমেরিকার আন্ত:এশিয়া পলিসি বিঘ্নিত হবে। ফলে আমেরিকার সিকিউরিটি ধ্বংস হবে। ‘সেইম অন দ্যাম’ ‘সেইম অন দ্যাম’। এই রকমের বাজে কথা যারা বলে ‘শেইম অন দ্যাম’ আমি আশা করব আগামীতে এই ধরনের দুর্ভিসন্ধি মূলক কাজ থেকে বিরত থাকবে।
তিনি বলেন, আমার দল সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না, দুর্ভিসন্ধিতে বিশ্বাস করে না, ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আমরা তাদের ষড়যন্ত্রের খবর পাই ‘টাইম টু টাইম’ কিন্তু তারা যে দুনিয়ার সবগুলো হিউম্যান রাইটস এজেন্ডকে নক করেছেন। এটার জন্য দু:খ করতে হয়। এই দেশটা আপনার আমার সবার। এই দেশের মঙ্গল কামনা আপনার আমার সবার। একটি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারেন, অনুযোগ করতে পারেন, কিন্তু দেশের বিরুদ্ধে যারা এই ধরনের অনুযোগ করে অপপ্রচার করে ধিক্কার তাদের প্রতি।
এসএম/এসআইএইচ