‘জাতীয় নির্বাচনের আগে উপনির্বাচনে ভোটার কম হওয়াই স্বাভাবিক’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের ৫ মাস আগে যখন উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেখানে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়াটাই স্বাভাবিক, বেশি হওয়াটা অস্বাভাবিক।
সোমবার (১৭ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, যেকোনো দেশে যখন উপনির্বাচন হয়, সেখানে ভোটার ‘টার্নআউট’ কম হয়। এটা আমাদের দেশেও সব সময় হয়ে আসছে। আমেরিকায় যদি নির্বাচনের পাঁচ-ছয় মাস আগে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে অনেক সময় কোনো প্রার্থীই দাঁড়ায় না, অনেক প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়।
‘আওয়ামী লীগের তুলনায় অন্য দলের প্রার্থীরা শক্তিশালী নয়, ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম’- এ প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, সাম্প্রতিক সিটি করপোরেশন নির্বাচন খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। বিএনপি মানুষকে আহ্বান জানিয়েছিল নির্বাচনে ভোট না দেওয়ার জন্য, এরপরও অনেক জায়গায় ৫০ শতাংশের বেশি ভোট কাস্ট হয়েছে। বিএনপি না আসলে যে জনগণ অংশগ্রহণ করবে না, এটি যে ঠিক নয়- সেটি প্রমাণিত হয়েছে। অবশ্যই বিএনপিসহ সমস্ত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিলে নির্বাচন অনেক শক্তিশালী হয়।
ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী আশরাফুল আলম (হিরো আলম) তার এজেন্টকে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন- এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, কোনো একজন প্রার্থী যদি বলে বসে যে- আমার এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে, সেটা আগে যাচাই করতে হবে, তদন্ত করে নির্বাচন কমিশনকে ‘ভ্যালিডেট’ করতে হবে, বললেই সেটা সত্য নাও হতে পারে।
হাছান মাহমুদ বলেন, কিছু কিছু প্রার্থী দাঁড়ায় এগুলো বলার এবং প্রচার পাওয়ার জন্য, এগুলো বললে একটু প্রচার হয়। যেসব প্রার্থী বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে প্রার্থী হয় তাদের উদ্দেশ্য কি নির্বাচিত হওয়া? নাকি প্রচার পাওয়া, সেটি একটা বড় প্রশ্ন।
এনজিও ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলকে ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়’ বলেছে, এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নাগরিক বা সুশীল সমাজ অনেক বড়। যারা এ কথা বলেছেন, তারা নাগরিক সমাজের ক্ষুদ্র অংশ এবং পুরো সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করেন না। সুতরাং তাদের বক্তব্য দেশের নাগরিক সমাজের বক্তব্য নয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইইউ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। কোথাও তত্ত্বাবধায়ক কিংবা নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গ আলোচিত হয় নাই। বর্তমান সংবিধানের আলোকে নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলো প্রমাণ করে নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সরকারি দলের তোয়াক্কা করে না, উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি সরকারকে সমীহ করত, তাহলে গাইবান্ধা-৫ আসনের পুরো নির্বাচন বাতিল করতো না। আমরা সরকারি দল হিসেবে বলেছি এটা আইনবহির্ভূত। কিন্তু তারা পুরো নির্বাচন বাতিল করেছে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো অত্যন্ত সুষ্ঠু, অবাধ এবং জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণমূলক ছিল।
‘বিএনপি বিধ্বংসী কর্মসূচি দিলে আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না’- বিএনপির আগামী কর্মসূচি সহিংসতা বয়ে আনবে কি না এবং একই সময় আওয়ামী লীগের কর্মসূচির ফলে সংঘাত হবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে দেখা করেছে, বৈঠক করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত স্পষ্টভাবে তাদের বলেছেন যে, হরতাল-অবরোধ এগুলো গণতন্ত্রকে দুর্বল করে। বোধশক্তি থাকলে তারা কোনো বিধ্বংসী কর্মসূচির দিকে যাবে না। আর যদি যায়, তাহলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বসে থাকবে না। আমরাও মাঠে থাকব এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করা হবে। আর কদিন আগে তো দু’দলই দেড় কিলোমিটার দূরত্বে সমাবেশ করেছে, কিছুই হয়নি। সুতরাং সংঘাতের সম্ভাবনা নেই, যদি বিএনপি মানুষের উপর হামলা না চালায়। বাসস