বিএনপির প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান টিএইচ খান আর নেই

বিএনপির প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের সবচেয়ে প্রবীণ আইনজীবী এবং সাবেক বিচারপতি তাফাজ্জাল হোসেন (টি এইচ) খান মারা গেছেন।
গত ২১ অক্টোবর ১০২ বছরে পা দেওয়া এই আইনজীবী বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে মৃত্যুবরণ করেন।
আগামীকাল সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তার ছেলে এবং সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আফজাল এইচ খান এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বার্ধক্যজনিত গুরুতর নানা জটিলতা নিয়ে রবিবার ভোরে তাকে রাজধানীর কল্যাণপুরের এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তার মৃত্যুতে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
তিনি সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত আইন পেশার অনুশীলন করলেও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে গত দুই বছর ধরে আদালত প্রাঙ্গণে আসেন না।
১৯২০ সালের ২১ অক্টোবর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলাধীন ঔটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন টি এইচ খান। ১৯৪৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এবং ১৯৪৬ সালে এমএ পাস করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৫১ সালে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৬৮ সনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
দেশ স্বাধীনের পর তিনি আর বিচার বিভাগে যোগ দেননি। এরপর ১৯৭৩ সালে পুনরায় আইন পেশায় ফিরে আসেন। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রথম বারের মতো সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর আইন, শিক্ষা, ধর্ম, ভূমি ও রাজস্ব এবং ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর ১৯৮২ সালে তিনি আবার আইন পেশায় ফিরে যান। ১৯৯২ সালে টিএইচ খান জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস কমিশনের সদস্য এবং একই বছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৪ সালে তিনি দ্বিতীয় বারের মতো সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালে তিনি এশিয়া জোন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদে বিচার কাজ পরিচালনা করেন। এরপর দেশে ফিরে আবার আইন পেশা শুরু করেন।
টিএইচ খান ১৯৯২ সালে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন এবং এ পদে ২০১১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বিএনপির প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
এমএ/এএস
