‘দেশের মানুষ সরকারকে বিদায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে’
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই অবৈধ দখলদার সরকারকে বিদায় করবে। জনগণকে তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। তারা একটি নির্বাচিত সংসদ গঠন করতে চায়। এই মডেলের বিপরীতে অন্য কোনো মডেলের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। দেশের মানুষের কাছে এবং বিদেশি গণতান্ত্রিক দেশের কাছে একটি মাত্র মডেল সেটি হচ্ছে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকার গঠিত হবে। যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে এর বিপরীতে অন্য কোনো সুযোগ নেই।’
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বনানীতে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এরা (আওয়ামী লীগ) চরম দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে দেশের কোষাগার শূন্যের কোটায় নিয়ে গেছে। ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে দেশ চালাচ্ছে। আবার ৫০ হাজার কোটি টাকার নোট ছাপিয়েছে ইতোমধ্যে। অথচ তারা দেশ কীভাবে চালাচ্ছে এটা মানুষের জানার দরকার। মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে, উন্নয়নের মাধ্যমে শুধু দেশের টাকা লুটপাট করে দেশের তহবিল খালি করে নাই, এই টাকা বিদেশে পাচার করেছে।
আমির খসরু বলেন, একদিকে মেগা প্রজেক্টের নামে লুটপাট করে টাকা বিদেশে পাচার করেছে। অন্যদিকে লুটপাত করে ব্যাংকগুলো খালি করে দিয়েছে। টাকার অভাবে এলসি খুলতে পারছে না, ডলারের অভাবে এলসি খুলতে পারছে না। পুরো বিষয়টি হচ্ছে একটি অবৈধ দখলদার সরকার ক্ষমতায় রয়েছে যাদের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিটি জায়গায় লুটপাটের কারণে মূল্য বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, অবৈধ দখলদার সরকার জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ক্ষমতা দখল করে অব্যাহতভাবে থাকতে চাচ্ছে। তারা চাচ্ছে এখানে একটি সহিংসতা, তারা নিজেরা সহিংসতা করছে এবং সহিংসতা বাড়ানোর একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে চলছে। সাম্প্রতিক আগুন সন্ত্রাসের কথা বলেছে, তারা বিরোধী দলে থাকতে আগুন সন্ত্রাস করেছে, সরকারি দলে থাকতে আগুন সন্ত্রাস করেছে, আবার এখন আগুন সন্ত্রাসের কথা বলছে। সুতরাং এরা চাচ্ছে একটি সহিংসতা। অবৈধভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার যে একটি প্রক্রিয়া, ভোট চুরি করার প্রক্রিয়া রয়েছে এটাকে তারা অব্যাহত রাখতে চাচ্ছে। কিন্তু দেশের মানুষ সহিংসতা চাচ্ছে না। তারা চাচ্ছে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর, তারা জনগণের নির্বাচিত সরকার গঠন করতে চাচ্ছে। সুতরাং আন্দোলন সেদিকে চলছে এটাই আন্দোলনের ধারা, আমাদের এর বাইরে যাওয়ার কোনো প্রশ্ন উঠে না।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, জনশক্তির উপর কোনো শক্তি থাকতে পারে না। জনশক্তির বিরুদ্ধে কোনো অপশক্তি থাকতে পারে না। এটা দেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে, ভাষার জন্য, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে প্রমাণ করেছে এবং এবারও প্রমাণ করছে। ইতোমধ্যে দেশের মানুষের যে অবস্থান সেটা তারা জানিয়ে দিয়েছে। কর্মসূচিতে তাদের উপস্থিতির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে এবং বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে তারা এই কাজটি করছে।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রথম ধাপের আন্দোলনে সব বাধা-বিপত্তি, মামলা, হামলা, সরকারের গণপরিবহন বন্ধের পরেও সফল হয়েছি। তারা (সরকার) রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে। যত বেশি রাজনৈতিকভাবে তারা পরাজিত হচ্ছে তত বেশি তারা শক্তির কথা বলছে, তত বেশি তারা সহিংসতার কথা বলছে। তারা আন্দোলনকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে, তারা আগুন সন্ত্রাসের কথা বলছে। সুতরাং এতেই প্রমাণ করে জনগণের সমর্থন এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কাছে কোনো কিছুই দাঁড়াতে পারে না।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, দেশের মানুষ তাদের বিশ্বাস করছে না, দেশের মানুষ তাদের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদেরকে বিদায় দেওয়ার জন্য।
খসরু বলেন, রাষ্ট্রপতি কে হবে এ নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। দেশের মানুষ আগামী নির্বাচনে তার নিজের ভোট দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার দেখতে চায়। যে সরকারের জবাবদিহিতা থাকবে। এর বাইরে মানুষের কোনো আগ্রহ নেই।
বিএনপির চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আন্দোলনের একটা নিজস্ব গতিধারা আছে। ফ্যাসিবাদী সরকার পতনে চলমান আন্দোলন বহুমুখী করতে হবে। সেক্ষেত্রে সবাইকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে হবে। যত বেশি সম্পৃক্ততা হবে আন্দোলন তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে ততটাই শক্তিশালী হবে।
এমএইচ/এসজি