‘আওয়ামী লীগ এখন হিরো আলমের কাছেও অসহায়’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকারবিরোধী চলমান যুগপৎ আন্দোলন শুধু মাত্র বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে আন্দোলন নয়। এখন আমরা ধীরে ধীরে আন্দোলন করছি। দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে জেগে উঠছে। চলমান আন্দোলন জাতীয় স্বাধীনতার আন্দোলন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের ভোটাধিকার গণতন্ত্র ফিরে পেতে চাই, সেই লক্ষ্যে আন্দোলন করছি। আমরা কাটা ছেড়া সংবিধান সংশোধন করতে চাই। আজকের সমাবেশ জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় সমাবেশ। সেই লক্ষ্যেই আমরা দশ দফা ও ২৭ দফা প্রণয়ন করেছি। আজ দেশের মানুষ প্রমাণ করেছে যে তারা একটি দাবিতে আন্দোলন করছে। সেটা হলো এই অবৈধ ভোটারবিহীন সরকারের পদত্যাগ।’
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অস্থায়ী মঞ্চে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী সন্ত্রাস, সরকারের দমন নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তি এবং গ্যাস, বিদ্যুতের দাম কমানোসহ ১০ দফা দাবিতে সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর (উত্তর-দক্ষিণ) বিএনপির।
সবশেষ ছয়টি আসনে উপ-নির্বাচনে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন হিরো আলমের কাছেও অসহায়। নির্বাচনে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তাদের জিততে হয়। এ ছাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন ব্যক্তিকে জেতাতে প্রার্থীকে গুম করা হয়েছে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান পরিস্থিতি। এরা সেই দল যারা আমাদের ভবিষ্যত কে নষ্ট করে দিয়েছে। বার বার মিথ্যা কথা, মিথ্যাচার করে দেশের মানুষকে প্রতারিত করতে চায়।’
ভোটাধিকার হরণ করে জোড় করে ক্ষমতা দখল করে রাখতে চায়। আর তাই দেশের মানুষ এদের হাত থেকে এই মুহূর্তে মুক্তি চায়; পরিবর্তন দেখতে চায়। আমাদের পরিষ্কার কথা; এই সরকারের অধীন কখনো কোনো নির্বাচন হতে পারে না, যোগ করেন তিনি।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখনো সময় আছে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তারেক রহমানসহ যে সকল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা আছে সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় আমরা আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার কে পরাজিত করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বাংলাদেশকে লুটেরাদের দেশে পরিণত করা হয়েছে আর এর নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এরা আমাদের কৃষ্টি ঐতিহ্য সামাজিক মূল্যবোধ ধ্বংস করছে। দেশকে নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে। আর সরকার ইতিমধ্যে ব্যর্থ রাষ্ট্র সরকারের পরিণত হয়েছে। স্পষ্ট কথা আওয়ামী লীগ বাকশাল করে টিকতে পারেনি। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে অনির্বাচিত এই সরকারও পারবে না।
এ সময় সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে যুগপৎ আন্দোলনে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, চাল, ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ সহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চলমান যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ১১ ই ফেব্রুয়ারি (শনিবার) সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। তবে ঢাকায় কখন পদযাত্রা হবে, সেটা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ঢাকায় যে কয়টি পদযাত্রার কর্মসূচি পালন করা হয়েছে তাতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এ জন্য আমরা কর্মসূচি তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এবারে কর্মসূচি হবে ইউনিয়ন পর্যায়ে। এরপর উপজেলা, জেলা, মহানগর, সর্বশেষ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কর্মসূচি দিয়ে জনগণ তাদের ক্ষমতার মসনদ দখল করে নেবে। এই সরকারকে বিদায় করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে, দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।
এ সময় মির্জা ফখরুল সরকারের নানা দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন। সরকারের লোকজন টাকা পাচারের মাধ্যমে বিদেশে সেকেন্ড হোম করছে এমন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, সরকার পাতাল রেলের প্রজেক্টে ৫২ হাজার কোটি টাকা খরচ করবে। তারা গরিব মানুষের ভাতার টাকা লুট করছে। হামলা মামলা করে সরকার আমাদের আন্দোলন দমাতে পারেনি, আর পারবেও না।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর হক মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপির নেতা শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ।
এমএইচ/এমএমএ/