সরকার জনগণকে শাসনের নামে শোষণ করছে: চরমোনাই পীর
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারগুলো জনগণকে ধোকা দিয়ে বোকা বানিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের স্বার্থবিরোধী কাজ করেছে। জনগণকে শাসনের নামে শোষণ করছে। সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায় বিচারের মূল লক্ষ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন হলেও আজ দেশে ন্যায় বিচার নেই, মানবিক মুল্যবোধ বলতে কিছু নেই। আজো ন্যায় বিচারের আশায় মানুষ দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায়। স্বাধীনতার ৫১ বছরেও মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। ভাত ও ভোটের অধিকার নেই। সাম্য তো নেই-ই। কেউ বস্তি ও ঝুঁপড়িতে বসবাস করে, আবার কেউ সীমাহীন আরাম আয়েশে আকাশচুম্বি সুখ ভোগ করে। কোথায় সাম্যতা? প্রকৃত সাম্য প্রতিষ্ঠা করে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রা. বিশ্ববাসীর সামনে ইতিহাস তৈরি করে গেছেন।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনে মুহাম্মদ আমিনুল ইসলামকে সভাপতি, আলহাজ্ব আব্দুর রহমানকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মাওলানা খলিলুর রহমানকে সেক্রেটারী জেনারেল করে ২০২৩-২৪ সেশনের জন্য নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
চরমোনাই পীর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাবার কোন শক্তি নেই। এ ধরণের বক্তব্য সরসারি ইসলামবিরোধী। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, নমরুদ, ফেরাউন সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাধর শাসক ছিলো, কিন্তু তাদেরও ইতিহাসের ভয়াবহ পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। কাজেই ক্ষমতার দাম্ভিকতা দেখাবেন না। তিনি বলেন, বিশ্বে তেলের দাম কমলেও আমাদের দেশে দাম বাড়ে, বিদ্যুতের দাম ফের বাড়ানো হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের মানুষ বিশেষ করে মধ্যবিত্তের মানুষ কষ্টে আছে।
তিনি বলেন, সরকারের লোকজন কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করে বিদেশে পাচার করেছে। পাচারকৃত টাকাগুলো ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সিলেবাসে ডারউইনের থিওরী নাস্তিক্যবাদী ও হিন্দুত্ববাদী শিক্ষা সংযোজন করে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। এ শিক্ষা ব্যবস্থাকে কোনভাবেই মুসলমানেরশিক্ষা ব্যবস্থা বলা যায় না। তিনি শিক্ষা ধ্বংসের পথ থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্যথায় সর্বত্র আন্দোলন গড়ে উঠলে সরকারের জন্য কল্যাণকর হবে না।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, নায়েবে আমীর আল্লামা আব্দুল হক আজাদ, মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. আক্কাস আলী সরকার সাবেক এমপি, যুগ্ম মহসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম আতিকুর রহমান, প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, যুবনেতা মাওলানা নেছার উদ্দিন, মাওলানা খলিলুর রহমান, মু. বরকত উল্লাহ লতিফ, এডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার, আলহাজ্ব জান্নাতুল ইসলাম, আমিরুজ্জামান পিয়াল, মুফতি মোস্তফা কামাল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল এলায়েন্সের মেজর জে. অব. ডা. হাবিবুর রহমান, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সম্পদ।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুর রহমানের শুভেচ্ছা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। সম্মেলন পরিচালনা করেন সংগঠনের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ওমর ফারুক ও প্রচার সম্পাদক এইচএম সাইফুল ইসলাম। সম্মেলন সকাল ৯টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এর অনেক আগেই মিলনায়তন ভরে সামনের খালি জায়গা ভরে লোকেলোকারণ্য হয়ে যায়। ঠিক ৯টায় কুরআন তিলাওয়াত ও হামদে বারী তায়ালা পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে ১৮ দফা সম্মেলন প্রস্তাবনা দেয়া হয়।
এমএইচ/এএস