‘পুলিশ-আমলা নির্ভর হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল রাখতে চায়’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। এখন আমাদের আরও বেশি করে জেগে উঠতে হবে। আমরা আজকে সেই প্রস্তুতি নেই। আসুন আমরা জেগে উঠি। ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতার স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, এই স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবার জন্য আসুন আমরা আজকে একটা নতুন বাংলাদেশ, একটা সত্যিকার অর্থেই জনগণের বাংলাদেশ, সত্যিকার অর্থেই একটা কল্যাণমূলক বাংলাদেশ নির্মাণ করার জন্য, আমাদের সন্তানদের একটা সুন্দর ভবিষ্যত তৈরি করবার জন্য, তাদেরকে স্বপ্ন দেখানোর জন্য আমরা সবাই জেগে উঠি।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাড়ে তিন ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে সমাপ্তি টেনে সদ্য কারামুক্ত বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, জেগে উঠে আমরা বাধ্য করি এই স্বৈরশাসকের দুঃশাসনের তখতে তাউসকে সরিয়ে সেখানে একটা জনগণের সরকার, জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করি। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে চলি। এখন দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তাদেরকে জাগিয়ে তুলে আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সংবাদ হচ্ছে এটাই যে, আজকে বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা এগিয়ে আসতে শুরু করেছেন, তারা আজকে এই যে অন্যায় হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ৬০ জন দেশের বরণ্য নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন। আমি তাদেরকে এজন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই, কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।
নয়াপল্টনের সড়কে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় সরকার গঠন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে এই অবস্থান কর্মসূচি করে বিএনপি। ঢাকা ছাড়াও অন্য ৯টি বিভাগেও একই সময়ে এই অবস্থান কর্মসূচি হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেকে রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচয় দেয়। আমরা জানি যে, তারা অত্যন্ত পুরোনো পরিচিত দল। কিন্তু এখন তারা সম্পূর্ণভাবে তার রাজনৈতিক অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেজন্য তাদের এখন পুলিশের উপর নির্ভর করে, আমলাদের উপর নির্ভর করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জোর করে দখল করে রাখতে হচ্ছে। আজকে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। তারা আজকে এই সরকারকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য এবং মানুষের ভোটের অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য একমত হয়েছে। ১০ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে তারা এই আন্দোলনকে সফল করবে।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন এই সরকারের একজন অত্যন্ত আশ্রিত শোনা যায় তিনি নাকি শীর্ষ নেতাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ… ওয়াসার এমডি তাসকিম (তাকসিম আহমেদ খান)। তিনি আমেরিকায় নাকি ১৮টা বাড়ি কিনেছেন। একটা বাড়ি নাকি ৫১৫ কোটি টাকা। আপনারা ভাবুন যে, কোন দেশে আমরা বাস করছি। দেশের একজন সরকারি কর্মকর্তা, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সরকারের কাছ থেকে বেতন নেন, সে আজকে শত শত কোটি টাকা, হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে বিদেশে বাড়ি বানাচ্ছেন। আর আজকে মানি লন্ডারিংয়ের জন্য ছোট-খাটো মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আর তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়ে এই দেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করে দিয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ব্যাংকগুলোকে ধবংস করেছে। প্রত্যেকটি ব্যাংক থেকে টাকা লুট করে তারা (ক্ষমতাসীনরা) বিদেশে পাচার করছে। সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে তারা নিয়ন্ত্রণ করে এখানে একটা লুটের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। এই সরকারের লক্ষ্য একটা- তারা অন্যায়ভাবে, বেআইনিভাবে জনগণের সকল অধিকার হরণ করে, গণতান্ত্রিক অধিকারকে দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমরা কি সেটা হতে দেব? এখানে আমরা একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে দেব না।
রাজধানীতে সাড়ে তিন ঘণ্টার এই অবস্থান কর্মসূচিতে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন। ফকিরাপুল বাজার থেকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁ পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কে পলিথিন বিছিয়ে নেতা-কর্মীরা বসে এই কর্মসূচি পালন করেন। নেতা-কর্মীদের মাথায় ছিল লাল-সবুজ-হলুদ-নীল টুপি যা এই অবস্থান কর্মসূচিকে ভিন্ন রূপ দেয়। সাড়ে তিন ঘণ্টার এই কর্মসূচির ফাঁকে ফাঁকে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাস শিল্পীরা দলীয় এবং দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশন করে।
১০ দফা দাবিতে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে এটি তার দ্বিতীয় কর্মসূচি। গত ২৪ ডিসেম্বর ৯ বিভাগীয় শহরে এবং ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় যুগপৎ আন্দোলনে প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল করে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।
যুগপৎ আন্দোলনের নয়াপল্টনের এই কর্মসূচির একই সময়ে গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য প্রেসক্লাবের পূর্ব প্রান্তে, গণফোরাম আরামবাগে ইডেন কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, ১২ দলীয় জোট বিজয় নগরে পানির ট্যাংকের কাছে, সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট পুরানা পল্টনে এবং এলডিপি কাওরান বাজারে এফডিসির কাছে নিজেদের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি করে।
ফরিদপুর ও ময়মনসিংহের গণঅবস্থানের কর্মসূচিতে পুলিশ ও সরকারি দলের হামলার ঘটনার নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব। একই সঙ্গে কারাগারে আটক বিএনপির আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, এবিএম মোশাররফ হোসেন, খন্দকার আবু আশফাক, আবুল হোসেন, সেলিম রেজা হাবিব, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, উলামা দলের শাহ নেছারুল হক, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাবসহ বন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবি জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা জানি, এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকলে এই ১০ দফা মানবে না। তাই আমাদের সামনে একটিই চ্যালেঞ্জ এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। আগামী দিনে গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। আজকে এই সরকার শুধু বাংলাদেশের জনগণের কাছে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও আজকে ধিকৃত, আজকে তারা দেখতে চাই না।
এমএইচ/এসজি