বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর গণঅবস্থান, দেওয়া হবে নতুন কর্মসূচি
সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে গণঅবস্থান কর্মসূচিতে যুগপৎ আন্দোলনে মাঠে নামছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। ব্যাপক প্রস্তুতিও নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দল ও জোট নেতারা জানান। বুধবার (১১ জানুয়ারি) গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। আন্দোলনের মূল দল বিএনপি, নতুন কর্মসূচি ঠিক করতে সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছে।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) রাতে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নতুন কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। দলটির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ঢাকাপ্রকাশ-কে এ তথ্য জানান।
এদিকে গতকাল সোমবার ১১ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছে গণস্বাক্ষর, বিক্ষোভ সমাবেশ, ঢাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত জুড়ে মানবপ্রাচীর (মানববন্ধন), পদযাত্রা, পথসভা। বিশেষ করে ২৫ জানুয়ারিকে তাদের ভাষ্যমতে ‘বাকশাল দিবস’ আখ্যা দিয়ে নতুন কর্মসূচিতে মাঠে নামতে চায় সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
মঙ্গলবার ১২ দলীয় জোটের শরীক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমরা যুগপৎ আন্দোলনে যেতে নতুন কর্মসূচি হিসেবে গণস্বাক্ষর, মানবপ্রাচীর, বিক্ষোভ সমাবেশের কথা বলেছি। ১৯ জানুয়ারি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মদিন, কাজেই ওইদিনটি ঘিরে তাদের এক-দুই দিনের কর্মসূচি থাকতে পারে। তাই আমরা ২৫ জানুয়ারি বাকশাল দিবসকে নির্ধারণ করেছি। এখন বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সমমনা দল ও জোটের মতামতের পর পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।
কারামুক্ত হয়েই নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা গ্রেপ্তার করে ভোটের অধিকারের আন্দোলন বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এতে আন্দোলন আরও বেগবান হয়েছে। সারা দেশ আন্দোলনে প্রকম্পিত হচ্ছে। সরকার যতবেশি অত্যাচার করবে ততবেশি মানুষ ফুঁসে উঠবে। পিছু হটবার পথ নেই। আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাব। তাই আন্দোলন আরও তীব্র করতে হবে। এর মাধ্যমে দেশকে মুক্ত করতে হবে। আসুন এই শপথ নিয়ে নতুন অঙ্গীকার করি। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতেই থাকবে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে একইদিন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি, শোডাউন ও মিছিলের মধ্য দিয়ে মাঠ দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে ১১ জানুয়ারি বিএনপির ‘গণঅবস্থান কর্মসূচি’র দিন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের রাজধানীর প্রবেশদ্বার ও পাড়া-মহল্লাগুলোতে সতর্কাবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, রাজধানীর পল্টন, প্রেসক্লাবসহ হাতে গোনা কয়েকটা এলাকা ছাড়া বিএনপিকে রাজধানীতে সেভাবে দাঁড়াতে দেবে না আওয়ামী লীগ। তবে সরাসরি কোনো আক্রমণেও যাবে না দলটির নেতা-কর্মীরা। বিএনপি নেতা-কর্মীরা মাঠে নামার আগেই তারা মাঠ দখলে রাখার চেষ্টা করবে বলে জানা গেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাসহ ১০ বিভাগীয় শহরের গণঅবস্থান কর্মসূচি সফল করতে আন্দোলনের মূল দল বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিট এরই মধ্যে গণসংযোগ, কর্মীসভা, লিফলেট বিতরণসহ প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড শেষ করেছে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়া বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের জামিনে মুক্ত হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে। এসব কর্মসূচি সফল করতে দফায় দফায় বৈঠক করে নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হবে গণঅবস্থান কর্মসূচি। প্রস্তুতি ভালো, সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা সেখানে উপস্থিত থাকবেন। শান্তিপূর্ণভাবে চার ঘণ্টার কর্মসূচি শুরু এবং শেষ করব। আশা করছি, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার বাধা দেবে না।
যদিও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বিএনপিসহ অন্যান্য দলকে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রয়োজনে তিনি সহায়তা করবেন বলেও বলেছেন। কিন্তু আন্দোলনের নামে জনগণের জানমাল পোড়ালে কোনো ছাড় দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
বিএনপির কোন নেতা কোন বিভাগীয় গণঅবস্থানে অংশ নেবেন
সরকারবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ঘোষিত যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি হলো ঢাকাসহ বিভাগীয় গণঅবস্থান। বুধবার বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এ গণঅবস্থান কর্মসূচির সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো একই কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। ঢাকায় গণঅবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস। দলের সাংগঠনিক বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা নেতৃত্ব দেবেন। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (সিলেট) ড. আব্দুল মঈন খান (রাজশাহী), নজরুল ইসলাম খান (ময়মনসিংহ), আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম), সেলিমা রহমান (বরিশাল), ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (রংপুর), বরকত উল্লাহ বুলু(কুমিল্লা), শামসুজ্জামান দুদু(খুলনা), আহমেদ আজম খান (ফরিদপুর) প্রমুখ।
সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর গণঅবস্থান
গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, ১২ দলীয় জোট বিজয় নগর পানির ট্যাংক, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন প্রীতম হোটেলের বিপরীত দিকে, কর্নেল অলি আহমদ নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এফডিসি সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে, মোস্তফা মোহসীন মন্টু নেতৃত্বাধীন গণফোরাম আরামবাগ ইডেন কমপ্লেক্স দলীয় কার্যালয়ের সামনে, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যে জোট জাতীয় প্রেস ক্লাবের পূর্ব প্রান্তে যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি গণঅবস্থান পালন করবে বলে জানিয়েছে দলগুলোর নেতারা।
প্রসঙ্গত, বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি গত ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল কর্মসূচি শুরু পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলগুলোর পক্ষ থেকে দ্বিতীয় কর্মসূচি হিসেবে ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়। যদিও প্রথম কর্মসূচিতে গণফোরাম ও বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যে জোট তখন অংশ নেয়নি।
এমএইচ/এসজি