সরকার পতনে বছরজুড়ে ছিল বিএনপির কর্মসূচি
দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি আর পরিকল্পনার পর সরকার পতনে যুগপৎ কর্মসূচিতে নামছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে এ আন্দোলন গোছানোর নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণার আগেই ফখরুলসহ শীর্ষ নেতাদের অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে।
আগামী দিনের আন্দোলন ও দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নতুন করে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বেড়েছে দলটিতে। তাই আগামী দিনের চূড়ান্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপিতে নেতৃত্ব সংকটের আশঙ্কা করছেন অনেকেই। তবে সবকিছু মিলিয়ে চলতি বছরে প্রাপ্তি বা অর্জনের মধ্যে ‘মাঠের কর্মসূচিতে ফেরা’ এবং আন্তর্জাতিকভাবে নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তে ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে চাপের মধ্যে ফেলার বিষয়টি বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করেছে বলে মনে করছে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
নেতারা বলছেন, নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নিয়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বিএনপি এখনো ঐক্যবদ্ধ। নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগে যদি কোনো তৃতীয় শক্তির উত্থান ঘটে তা নিয়েও চিন্তিত নয় বিএনপি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া বিএনপির এই মুহূর্তে কোনো ভাবনা নাই।
সেটা ২০২২ সালে ভালোভাবে রপ্ত করেছে নেতা-কর্মীরা। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে যে লড়াই করতে হয় চলতি বছরে দলের নেতা-কর্মীরা ও দেশের মানুষ সেটা ভালো করে শিখেছে এবং করিয়ে দেখিয়েছে। যদিও তা করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের হামলা-মামলা, গ্রেপ্তারসহ নানা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে; হচ্ছে। এমনকি গণতান্ত্রিক আন্দোলন কর্মসূচিতে দাবি আদায়ে রাজপথে প্রাণ দিতে হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। তবুও দাবি আদায়ে নেতাকর্মীরা পিছু হটেনি। যার প্রমাণ ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কতটুকু সফল এবং কতটুকু ব্যর্থতার সম্মুখীন তা বর্তমান অনির্বাচিত সরকার ভালো জানে এবং বোঝে। দেশের জনগণ যে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে জেগে উঠছে সেটা দেখেও যদি বিএনপিকে ব্যর্থ বলা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আমার বলার কিছু নাই। তবে বিএনপি তথা আমরা ব্যর্থ; কারণ আমরা আজীবন যিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় লড়াই করেছেন জীবন বাজি রেখে সেই নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারিনি। এখনো অনির্বাচিত সরকারকে বিদায় করতে পারিনি। বিচারবহির্ভূত হত্যা, খুন, গুম বন্ধ করতে পারিনি। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি।
তিনি বলেন, ‘হতাশার কিছু নেই; বিজয় হবেই। আজ না কাল দেশের মানুষ এই সরকারকে বিদায় করে তাদের মুক্তির পতাকা উড়াবে। দেশে গণতন্ত্রসহ মানুষের সকল মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে; জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। সেই প্রত্যয়ে নতুন বছরকে আকঁড়ে ধরে জাতীয়তাবাদী শক্তি অগ্রগামী হবে; এটাই বাস্তবতা।
সাংগঠনিক ৭৮ জেলার ৫৫ কমিটি
ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে যাই বলা হোক নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন ছাড়া আগামীতে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছে বিএনপি। দাবি আদায়ে ফের আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দলটির। আন্দোলনের সময় বা দিনক্ষণ, কৌশল চূড়ান্ত না হলেও অচিরেই ইস্যু ভিত্তিক যুগপৎ কর্মসূচিতে রাজপথে নামার পরিকল্পনায় এগোচ্ছে বিএনপি। দল ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ সমাপ্তির দিকে। সাংগঠনিক ৭৮ জেলা কমিটির মধ্যে ৫৫ টি কমিটি গঠনে সক্ষমত হয়েছে বিএনপি। তবে প্রাধাণ্য দেওয়া হবে তা হলো-নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এবার আন্দোলনের ধরন কৌশলের ছক আকছে বিএনপি। নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আদায়ে প্রয়োজনে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়তে জোটে থাকা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগের মতামতও উঠে এসেছে।
রাষ্ট্রপতির সংলাপে বিএনপির ‘না’
২০১৬ সালে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতির সংলাপে গিয়েছিল বিএনপি। আমন্ত্রণ পেলেও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপে যোগ দেয়নি বিএনপি। দলের নেতারা বলেছেন, এর আগেও আমরা দুই বার সংলাপে অংশ নিয়েছি কিন্তু সেগুলো ছিল অর্থহীন। আলোচনায় কোনো ফল হবে না বলেই বিশ্বাস করেন বলেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
সিইসির সংলাপে অংশ নেয়নি বিএনপি
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে সংলাপে যায়নি বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকরা জানান, বর্তমান নির্বাচন কমিশন দৃশ্যত সংলাপ বা আলোচনার আহ্বান জানালেও মূল বিষয় হচ্ছে দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করা। মূলত সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করাই এই কমিশনের লক্ষ্য। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আহ্বানে সংলাপে না গেলেও পূর্বের হুদা কমিশনের সংলাপে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি অংশ নিতে দেখা গেছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির সংলাপ
চলতি বছরের ২৪ মে মাহমুদুর রহমান মান্না নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিএনপির সংলাপ। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল এই সংলাপগুলোতে অংশ নেন। প্রথম দফায় ২২টি দলের সঙ্গে সংলাপ করে বিএনপি। ২ অক্টোবর দ্বিতীয় ধাপে আবারও সংলাপ শুরু করে বিএনপি। তবে ওই সংলাপে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের কোনো দল অংশ নেয়নি।
২০২২ সালকে গণতন্ত্রের আন্দোলনে রাজনীতির জন্য মাইলফলক বছর দাবি করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, গণতন্ত্র স্বাধীনতা মতপ্রকাশের অধিকার কোনোটাই নাই। বিশেষত এই সরকার ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পরে থেকেই শত বাধা প্রতিকূলতার মুখে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলমান।
চলতি বছর ২০২২ সালটা এই জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে; এই বছর প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এককভাবে নয়; জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সারা দেশে এই সরকারের বিরুদ্ধে একটা জনমত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি, সরকারের পদত্যাগের দাবি এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনগঠনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানোর লক্ষ্য একটা আন্দোলন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। যখনেই গণতন্ত্র ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনে রাজপথে নেমেছে তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ইতিমধ্যে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ১৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এভাবে পাকিস্তান আমলেও আইয়ূব খান গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার নিয়ে যারা কথা বলতেন তাদের উপর গুলি চালিয়েছে।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা (বিএনপি) গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে না পারব। কর্তৃত্ববাদী সরকারকে বিদায় করতে না পারব ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন সফল হয়েছে সেটা বলা যাবে না। নতুন বছর ২০২৩ হবে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত বছর। বছরটি হবে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চেতনা ফিরিয়ে আনার বছর।
জামায়াত নিয়ে বিএনপির দ্বৈতনীতি
জামায়াত হচ্ছে বিএনপির ভোট ও জোটের সঙ্গী। কিন্তু চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে জামায়াতে ইসলামির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বিএনপি জোটের সঙ্গে তারা আর নেই ৷ তবে যুগপৎ আন্দোলন হতে পারে ৷ তিনি জামায়াতের এই জোটে না থাকার জন্য বিএনপিকেই দায়ী করেছেন ৷ তবে কয়েকজন জামায়াত নেতার দাবি ডা. শফিকুর রহমান অনলাইনে এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে ওই কথা বলেছেন ৷ তবে এটা জামায়াতের দলীয় সিদ্ধান্ত কি না তা এখনো নিশ্চিত নয় ৷ এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আওয়ামী লীগের মুখে প্রায়ই শুনি, যেটা বুলি হয়ে গেছে। তারা প্রায়ই বলে, বিএনপি-জামায়াত, বিএনপি-জামায়াত। আমি বলছি, এখন সময় এসেছে আওয়ামী-জামায়াত, আওয়ামী–জামায়াত বলার। জামায়াতও উর্দু, আওয়ামী লীগ ও উর্দু-দুটো একসঙ্গে মিলবে ভালো। কেননা ওনারা (আওয়ামী লীগ) জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে, কিন্তু বেআইনি ঘোষণা করে না। তাহলে কি আমি বলব, ওনাদের পরকীয়া প্রেম চলছে!
বিভাগীয় গণসমাবেশ
জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে বিভাগীয় (দলের সাংগঠনিক বিভাগ) পর্যায়ে সমাবেশ করেছে বিএনপি। গণসমাবেশ চলতি বছরের ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগরে, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে, ২২ অক্টোবর খুলনায়, ২৯ অক্টোবর রংপুরে, ৫ নভেম্বর বরিশালে, ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে, ১৯ নভেম্বর সিলেটে, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায়, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করেও জাতীয় সংসদে বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সরব উপস্থিতি ছিল। সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন এবং নিজ দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের মুখে নির্বাধিত সময়ের এক বছরের কিছুটা সময় থাকতেই জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন দলটির সংসদ সদস্যরা। চলতি মাসের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গোলাপবাগ মাঠে গণসমাবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। পরে জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পদত্যাগপত্র পেশ করা হয়।
বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশী ও গণগ্রেপ্তার
বছরজুড়ে সরকারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছে বিএনপি। রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর কোনো সফলতা নিজেদের পক্ষে নিতে না পারলেও সরব থেকেছে নানা ইস্যুতে। ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিতে সারাদেশে সাংগঠনিক সফর, সভা-সামবেশ, মিছিল, লিফলেট বিরতরণসহ নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। নেতা-কর্মীদের মধ্যে বছরজুড়েই ছিল গ্রেপ্তার আতঙ্ক; গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেও যেতে হয়েছে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ৭ ডিসেম্বর দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর (পুলিশ) সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তল্লাশি চালায় এবং কার্যালয় থেকে প্রায় ৪শত অধিক নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়। সর্বশেষ ৮ ডিসেম্বর দিবাগত ভোর রাতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে তাদের বাসভবন থেকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার জামিন পেতে আবেদন করেও জামিন পায়নি নেতারা।
রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে বিএনপির রূপরেখা
রাষ্ট্রপরিচালনার সুযোগ পেলে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না দফাসহ ২৭ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ঘোষিত ১৯ দফা এবং বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত বিএনপির ভিশন-২০৩০ এর আলোকে এই রূপরেখাটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
২০ দলীয় জোট নিয়ে লুকোচুরি
রাজনৈতিক দল হিসেবে দীর্ঘদিনের জোট ও ভোটের সঙ্গী ২০ দলীয় জোটের অবস্থান নিয়ে এক ধরনের লুকোচুরি করতে দেখা গেছে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের। আনুষ্ঠানিকভাবে যুগপৎ আন্দোলনে যেতে জোটভুক্ত দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে বিএনপি। আবার দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ২০ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয় নজরুল ইসলাম খান বলছেন, আমরা এখন জোটবদ্ধ নই, যুগপৎ আন্দোলনে আছি। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল ও দেশপ্রেমিক ব্যক্তিদের যুগপৎ আন্দোলনে শরীক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ দলীয় জোট বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয়নি। তবে ৯ ডিসেম্বর জোট নেতাদের বলা হয়- এখন থেকে আপনারা আর ২০ দলীয় ব্যানার ব্যবহার করবেন না। যুগপৎ আন্দোলনে যার যার অবস্থান থেকে শরীক হউন। যুগপৎ আন্দোলনে যেতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে কাছে টানতেই বিএনপিকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলেও মনে করছেন ২০ দলীয় জোট থেকে বের হয়ে সম্প্রতি ১২ দলের সমন্বয়ে গঠিন ১২ দলীয় জোটের নেতারা। নেতারা বলছেন, জামায়াত ইস্যুতে কৌশলী ভূমিকায় থেকেই বিএনপি তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করেছেন।
যুগপৎ আন্দোলনে লিয়াজোঁ কমিটি
সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে যেতে সমন্বয়ের জন্য লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। সাত সদস্য বিশিষ্ট এই লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যরা হলেন-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল
সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে মাঠে নামছে বিএনপি। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি গণমিছিলের সময় নির্ধারণ করেছে দলটি। বিএনপির পক্ষ থেকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। আর সাত দলের সমন্বয়ে গঠিত গণতন্ত্র মঞ্চ গণমিছিল করবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এবং সদ্য গঠিত ১২ টি দলের ১২ দলীয় জোট গণমিছিল করবে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কের সামনে অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে।
এমএইচ/এমএমএ/