‘সরকার চায় কূটনীতিকদের মধ্যেও ভয়-ভীতি পরিবেশ সৃষ্টি হোক’
অবৈধ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশের মানুষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে যেভাবে চেপে রাখতে চাচ্ছে ঠিক একইভাবে এখন কূটনীতিকদের মধ্যেও ভয়-ভীতির পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত গুম হওয়া বিএনপির একজন নেতার বাসায় গেলে (মায়ের ডাক সংগঠনের প্রধান) সেখানে আরেকটি (জিয়াউর রহমানের শাসনামলে নিহত পরিবারের সদস্যদের গড়ে উঠা মায়ের কান্না) সংগঠনের দ্বারা উদ্ভূত পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার পর (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) তিনি নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা নিয়ে ফিরে এসেছেন বলে জানান। এই বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
উত্তরে আমির খসরু বলেন, ‘এটা তো গভীর উদ্বেগের বিষয়। একজন কূটনীতিবিদ একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। সেখানে যাওয়ার ফলে সরকারি দলের মদদে তাদের সহযোগিতায় আরেকটি প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে সেখানে উপস্থিত হওয়াটাই তো আইনবিরোধী। তারা যদি আলাদা অনুষ্ঠান করতে চায়, অনুষ্ঠান করতে পারে। স্বাধীনতা আছে। কিন্তু আরেকটি অনুষ্ঠানে গিয়ে সেখানে অনুষ্ঠানের অনেকটা বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া এবং সেটিকে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার যে প্রক্রিয়া তা অগণতান্ত্রিক।’
আওয়ামী লীগ সরকারের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এটাই প্রথমবার নয়। আমরা তো আগেও দেখেছি সরকারি দলের মদদে মার্কিন আরেকজন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্ণিকেটের নৈশ্যভোজের অনুষ্ঠান.. সেখানেও আক্রমণ করেছে, ভাঙচুর করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকেও আমরা একটি হোটেলে মানবাধিকার নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করেছি, সেখানেও একই লোকজন বাইরে থেকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে।’
‘বিভিন্ন অনুষ্ঠান হলে সেখানে গিয়ে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা সরকারি মদদে। এটা তো আওয়ামী লীগের চরিত্রে পরিণত হয়েছে। সুতরাং একদিকে যেমন বাংলাদেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এখন দেখা যাচ্ছে কূটনীতিবিদদের নিরাপত্তা বাংলাদেশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অথচ এই দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো। তাদের সঙ্গে আমাদের বড় বাণিজ্য আছে। তাদের সঙ্গে আমাদের বহুবিদ সম্পর্ক আছে, সুসম্পর্ক আছে। শুধু এই একটি রাষ্ট্র নয়, অনেকের সঙ্গেই আছে। তাই এখানে যে দেশের মানুষের নিরাপত্তাহীনতা, কূটনৈতিকদের নিরাপত্তাহীনতা এটা কি প্রতিফলন ঘটে? এটা বাংলাদেশের জন্য দেশের বাইরে ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির এই চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তাদের কে বলা হয়নি। সরকারকে বলে কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়া, যাবে না। তাদের যদি বলা না হয় সেখানে দুই দিন ধরে পুলিশের ঘোরাঘুরি হচ্ছে। তা ছাড়া রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও তো পুলিশ রয়েছেন। সরকার অবগত আছে। আর যদি বলাও না হয় এটার অর্থ যে- কোথায় না বলে গেলে সেই মানুষগুলো কি নিরাপত্তা পাবে না? এটা হতে পারে নাকি! বলে গেলে আপনি নিরাপত্তা পাবেন আর না বলে গেলে নিরাপত্তা পাবেন না, এটাও তো একটা দেশের যে নিরাপত্তার চরিত্র সেটার কি প্রতিফলন ঘটছে না? এই ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এর আগে মার্শা বার্নিকাটের বহরে যে হামলা করেছে তারও তো বিচার হয়নি। মায়ের কান্না সংগঠনের নামে একই লোকগুলো আমাদের অনুষ্ঠানে গিয়ে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। তারা তাদের অনুষ্ঠান করতে পারে.. কিন্তু অন্যের অনুষ্ঠানে গিয়ে বাধাগ্রস্ত করা এটা তো আইনবিরোধী। তাদের বিরুদ্ধে তো সরকারের বিভিন্নভাবে অ্যাকশনে যাওয়ার কথা। তাই নয় কি? এটা তো আমরা দেখছি না। কেউ গ্রেপ্তার হয়নি, কারও বিচার হয়নি। এই ধারা চলতে থাকলে দেশের মানুষের সঙ্গে বিদেশিদের নিরাপত্তা, কূটনীতিকদের নিরাপত্তা যদি একটি দেশে বিঘ্ন হয়, যা দেশের সত্যিকার চরিত্র তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে প্রতিফলন ঘটছে।’
‘এটা পরিষ্কার যে এভাবে ঘটনাটি ঘটছে, এটা যে সরকারের মদদে সরকারের সহযোগিতায় তা তো তাদের কথাবার্তায় পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। সরকারের মন্ত্রীদের কথা বার্তায় পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের ঘটনাকে তারা ইন-ডাইরেক্টলি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কারণ তাদের (সরকার) মদদ ব্যতীত এই ধরনের কর্মকাণ্ড হওয়া সম্ভব নয়। একটি অনুষ্ঠান হচ্ছে সেখানে অন্য আরেকটি অনুষ্ঠানের লোকজন গিয়ে চেষ্টা করাটাও তো আইনবিরোধী। আমি মনে করি, মার্শা বার্নিকাটের উপর যে আক্রমণ হয়েছে সেখানে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, বিচারও হয়নি। এসবের পেছনে কারা আছে এটা সরকার নিজেরাই প্রমাণ করছে। তাদের কথাবার্তা অ্যাকশনে প্রমাণ করছে এখানে তাদের মদদ আছে, সহযোগিতা আছে। তারা চাচ্ছে যে এই ধরনের ঘটনা ঘটুক, এর মাধ্যমে একটা ভয়-ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হোক। অবৈধ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশের মানুষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে যেভাবে চেপে রাখতে চাচ্ছে ঠিক একইভাবে এখন কূটনীতিকদের মধ্যেও ভয়-ভীতির পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তো জেলেই আছেন, আপনি কেমন আছেন প্রশ্নে আমির খসরু বলেন, ‘ভালোই আছি। রাজনীতির একটা অংশ জেল।’
এমএইচ/এসজি