নয়াপল্টন কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ বিএনপির

বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ করেছে দলটির চলতি দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। এসময় প্রিন্স অভিযোগ করে বলেন, সরকারের পুলিশ বাহিনী ৭ ডিসেম্বর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা করে এবং তারা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করে বোমা রাখে। একই সঙ্গে অসংখ্য দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে।
নয়াপল্টনে পুলিশি ব্যারিকেড সরে যাওয়ায় ৪ দিন পর নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করেন বিএনপির নেতারা। রবিবার (১১ ডিসেম্বর) বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকাপ্রকাশ-এর এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আপনারা দেখেন, মাত্রই অফিসে আমরা প্রবেশ করলাম। পুলিশের নির্দেশে অফিসের তালা খুলে দেওয়া হয়েছে। ভেতরের অবস্থা খুবই খারাপ। সব কিছু লন্ডভন্ড, চাঁদার টাকাও উধাও।
তিনি বলেন, পুলিশ আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করে ৫টি কম্পিউটার, সিসিটিভির ফুটেজ ও ছোট ছোট আসবাবপত্র নিয়ে গেছে। প্রতি মাসে আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা চাঁদার টাকা জমা দেয়। সেই টাকাও উধাও হয়ে গেছে।
কত টাকা ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমাদের দপ্তরের দায়িত্বে থাকা রুহল কবির রিজভী ভাই ভালো বলতে পারবেন। তিনি যেহেতু জেলে আছেন জেল থেকে বের হয়ে জানাবেন।
প্রিন্স অভিযোগ করে বলেন, আমরা দপ্তরে গিয়ে একটিও কম্পিউটার সিপিইউ, স্ক্যানার পাইনি। এমনকি আমাদের দলের কেন্দ্রীয় যে হিসাব বিভাগ আছে, সেই হিসাব বিভাগের কম্পিউটার, সিপিইউ নাই। সেখানে টেবিলের ড্রয়ারগুলো ভাঙা। সেখানে আমাদের দলের সদস্যদের চাঁদা রক্ষিত ছিল এবং ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ উপলক্ষে আমাদের খরচের টাকা রক্ষিত ছিল। অঙ্গসংগঠনের দপ্তরগুলোতে যে হিসাব বিভাগ আছে সেগুলো তছনছ করে ফেলেছে পুলিশ।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, পুলিশ আমাদের অফিস তছনছ করে ফেলেছে। দলের মহাসচিব সেখানে বসেন সেখানেও ভাঙচুর করা হয়েছে। তা ছাড়া উপর তলা থেকে শুরু করে নিচ পর্যন্ত সবকিছু ভেঙে ফেলা হয়েছে। পুলিশ ও সরকারের এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
দপ্তরের দায়িত্বে থাকা বিএনপির এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, পুলিশের তাণ্ডব লীলা দেখে আমরা হতভম্ব, আমরা হতবিহ্বল। পুলিশ বোমার নাটক সাজিয়ে আমাদের অফিসের সবকিছু নিয়ে গেছে।
প্রিন্স সালেহ দপ্তরে প্রবেশের সময় উপস্থিত ছিলেন সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু। এসময় টিপু অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ আমাদের অফিসে প্রবেশ করে চাঁদার টাকাও নিয়ে গেছে। চাঁদার টাকা কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি মাসের মাসিক চাঁদা গণনা ছাড়া আরও টাকা ছিল, আমরা কিছুই পাইনি। আনুমানিক প্রতি মাসে ১০ লাখ টাকা চাঁদা উঠে দলীয়ভাবে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, কৃষক দলের নেতা সালাউদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কাজী ইফতেখারুজ্জামান শিমুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোরশেদ আলম, জিয়াউর রহমান জিয়া, ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কামরুল ইসলাম সজল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।
এদিকে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, ৭ ডিসেম্বর বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের উপর প্রথমে হামলা করে। বিএনপি কার্যালয় থেকে তাদের উপর হাতবোমা ছুড়তে থাকে। ওই দিনে বিএনপির নাশকতার পরিকল্পনা ছিল।
পুলিশ কেন বিএনপির নয়াপল্টনের কার্যালয় ভাঙচুর করবে বা কীভাবে তাদের অফিস ভাঙচুর করা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাঙচুরের বিষয়টি আমাদের জানা নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের কাছে নাশকতার তথ্য ছিল। এজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপির কার্যালয় ঘিরে রাখা হয় এবং সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। তবে তাদের অফিস আমরা কোন ভাঙচুর করব? এ বিষয়ে আমার জানা নেই।
কেএম/এসজি
