‘তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া দেশে নির্বাচন হবে না’

শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। গণসমাবেশে নেতারা বলছেন, নির্বাচন কমিশনকে বলব,আপনারা মানে মানে কেটে পড়েন। মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে বলব সংসদ বিলুপ্ত করুন। সুশীল সমাজকে ডেকে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা দেন, আমরা সবাই নির্বাচনে অংশ নেব। যদি মানেন ভালো, না মানলে আমরা করে নেব।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর গোলাপবাগে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেছেন। গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ৭১ সালে দেশের মানুষ যুদ্ধ করেছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়। এখন আবার যুদ্ধ শুরু করেছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়। দেশ, দেশের মানুষ, গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মা (খালেদা জিয়া) বন্দী। উদ্ধারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারেক রহমান। তারেক রহমান সশরীরে নাই তাতেই শেখ হাসিনার এত ভয়। হয়তো তিনি দৃশ্যের আড়ালে কিন্তু আমাদের অন্তরে আছেন। উনার কৌশলটা ভিন্ন। কাছে কিংবা দূরে সেটা বিষয় নয়।
তিনি বলেন, সারা দেশে একই সুর শেখ হাসিনা ভোট চোর। আমি দেখলাম এখন খিচুড়ি চোর। উনার বাবা কথা রেখে এখন জনগণকে ভাতে মারছেন, ভোটাধিকার বঞ্চিত করেছেন। বাংলাদেশে এখন একটাই চোর সেটা হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর সেই চোরের নেত্রী শেখ হাসিনা। দোয়া করি আপনাকে দীর্ঘজীবী করে যেন আপনাকে পাওয়া যায়। কে মরব কে জেলে থাকব সেটা জানি না। তবে শেষ হাসিনার সময় শেষ।
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, সরকার দেশের মানুষকে অবনত করে রাখতে চায়। কিন্তু আজকের গণসমাবেশ প্রমাণ করেছে হত্যা, গুম, খুন ও গুলি চালিয়ে দেশের মানুষকে দমিয়ে রাখা যায় না। ৯৬ সালে এই আওয়ামী লীগ বলত আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব। আর এখন হচ্ছে আমার ভোট আমি দেব, দিনের ভোট রাতে দেব।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ পথে পথে বাধা দিয়ে সন্ত্রাসী দিয়ে পিকেটিং করিয়েও গণসমাবেশ বন্ধ করতে পারেনি। দেখে মনে হয় দেশে সরকার বলতে কিছু নেই। আগামীতে দেশে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যতীত কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, যারা দিনের ভোট রাতে কাটে তারা গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল হতে পারে না। বিএনপি গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল আর জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আগামী দিনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশের মানুষ গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরে পাবে।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, এই সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। তাই নেতা-কর্মীদের উপর গুলি চালায়। মনে পড়ে যায় ৭১ সালের কথা। পাক হানাদার বাহিনী যেভাবে গুলি চালিয়েছিল একইভাবে এই সরকারের বাহিনীও গুলি চালাচ্ছে। পুলিশ দিয়ে রাজনীতির খেলা হয় না। জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। এই সরকারও জোর করে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। বিএনপির মহাসচিবসহ অনেক সিনিয়র নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারপরও গণসমাবেশ বন্ধ করতে পারেনি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেছেন, শেখ হাসিনা যে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী সেই আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমান কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত।
গণসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, আজকের গণসমাবেশ মহাসমাবেশের রূপ নিয়েছে। উপস্থিতি প্রমাণ করেছে শেখ হাসিনা আর এক মুহূর্তে ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। ভোট চুরি করে ক্ষমতায় বসে আছে বলে শেখ হাসিনা গণজোয়ার ভয় পায়। কারণ দেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে আর মেনে নেবে না। আমেরিকা থেকে নিষেধাজ্ঞা এসেছে এবং শেখ হাসিনার উপর নিষেধাজ্ঞা আসবে। জোর করে ক্ষমতায় থাকার দিন শেষ হয়েছে।
দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমকি দিয়ে বলেন- দেখিয়ে দেব, আরে ভাই আপনি কী দেখাবেন? আপনি তো আপনার ভাইকে কন্ট্রোল করতে পারেন না, ম্যানেজ করতে পারেন না। ছাত্রলীগ কথা শুনে না। ভয় পাবেন না। আমরা আপনাদের মতো লগি বৈঠা নিয়ে মানুষ মারার আন্দোলন করব না। হুমকি দিয়ে লাভ হবে না। রাতে গিয়ে খালেদা জিয়ার কাছে মাফ চান, আজকের গণসমাবেশ ১০ নম্বর। ১১ নম্বর যেদিন ঘোষণা দেব সেই দিনেই আপনাদের পতন হবে।
এমএইচ/এসজি
