ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ শুরু

পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীতের মাধ্যমে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু হয়েছে।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সকাল ১০টা ১৮ মিনিটে কোরআন তেলাওয়াত করে আনুষ্ঠানিকভাবে এ গণসমাবেশ শুরু হয়।
জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং দলীয় কর্মসূচিতে নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে দেশের সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করছে বিএনপি। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশের মধ্য দিয়ে তাদের এ কর্মসূচি শেষে নতুন পদক্ষেপ ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান। গণসমাবেশ সঞ্চালনা করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনু।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকেই গোলাপবাগ মাঠে হাজার হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত হয়ে সারারাত বিভিন্ন ধরনের স্লোগানে মুখরিত করে রেখেছেন। এখানে উপস্থিত সিংহভাগ নেতা-কর্মীরা কয়েকদিন আগে থেকেই ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।
এদিকে ঢাকার এ সমাবেশ ঘিরে গত কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে দেশের রাজনীতিতে। সহিংসতার শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকার তাদের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতাও জারি করেছে।
বিএনপি নয়াপল্টনে তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশ তাদের অনুমতি দেয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের। এ নিয়ে অনড় অবস্থানে ছিল দুই পক্ষ।
এর মধ্যে গত বুধবার বিএনপি কর্মীরা নয়াপল্টনে জড়ো হলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে আহত স্বেচ্ছাসেবক দলের এক ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতার মৃত্যু হয় হাসপাতালে।
এরপর বিএনপি অফিসে অভিযান চালিয়ে হাত বোমা পাওয়ার কথা বলা হয় পুলিশের তরফ থেকে। গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় পাঁচশ নেতা-কর্মীকে।
তারপরও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলে আসছিলেন, ১০ ডিসেম্বর তাদের সমাবেশ হবে। তবে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘সমঝোতা বৈঠকের’ পর অবস্থান বদলের ঘোষণা আসে।
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু সাংবাদিকদের বলেন, নয়াপল্টন বাদ দিলে তারা এখন কমলাপুরের ফুটবল স্টেডিয়ামে সমাবেশ করতে রাজি আছেন। অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপিকে মিরপুরের বাঙলা কলেজ মাঠে সমাবেশ করতে বলা হয়।
পরে ঠিক হয় দুটি স্থান পরিদর্শন করে শুক্রবার একটি স্থান চূড়ান্ত করা হবে। রাতেই দুটি স্থান ঘুরে দেখে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস জানান, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা, সেজন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। তাই মধ্য রাতে আটক করা হয় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে।
এদিকে শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ফের আবেদন নিয়ে সাক্ষাৎ করতে যায় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিবি পুলিশের প্রধান পূর্ব নির্ধারিত শর্তে গোলাপবাগ মাঠে বিএনপিকে গণসমাবেশ করার অনুমতি দেয়।
যদিও প্রথমে ডিবি কার্যালয় থেকে বলা হয় তাদের (মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস) আটক কিংবা গ্রেপ্তার করা হয়নি, আলোচনার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। অথচ দিনশেষে শুক্রবার বিকালে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস আদালতে হাজির করা হলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করার নির্দেশ দেন।
বিএনপির প্রথম বিভাগীয় গণসমাবেশ হয় গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে। এরপর পর্যায়ক্রমে ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, কুমিল্লা ও রাজশাহীতে সমাবেশ করেছে দলটি। চট্টগ্রাম ছাড়া প্রতিটি সমাবেশের সময় মোবাইল ইন্টারনেটের গতি কমে যেতে দেখা গেছে।
দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকার শর্তে সরকারের বিশেষ ক্ষমতায়নে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জামিনে গুলশানের বাসভবনে অবস্থান করছেন। খালেদা জিয়ার অবর্তমানে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তারেক রহমান যিনি বিভিন্ন মামলায় সাজা প্রাপ্ত হয়ে লন্ডনে নির্বাসিত রয়েছে। দলের পদাক্রম অনুসারে তৃতীয় ব্যক্তি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমানে কারাগারে আছেন।
এমএইচ/আরএ/
