বিএনপির গণসমাবেশ: দেওয়া হবে আন্দোলনের ১০ দফা
নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও রক্তক্ষরণের পর অবশেষে শনিবার (১০ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা বিভাগের গণসমাবেশ। রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বেলা ১১টা থেকে আনুষ্ঠিকভাবে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই গণসমাবেশকে স্মরণকালের ঐতিহাসিক সমাবেশে রূপ দেওয়ার সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি সমাবেশের মূল-আকর্ষণ হিসেবে থাকছে আগামী দিনের ‘গণআন্দোলনের ১০ দফা। একই সঙ্গে সমাবেশ থেকে আসবে আনুষ্ঠানিকভাবে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা এবং নতুন কর্মসূচিও।
বিএনপির নেতারা বলছেন, এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপির একক আন্দোলনের বড় কর্মসূচি শেষ হতে যাচ্ছে। এখন আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১০ দফা দাবির ভিত্তিতে সরকারবিরোধী সমমনা দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু করবে বিএনপি। সমাবেশে প্রধান অতিথি আগামী দিনের গণআন্দোলনের ১০ দফা তুলে ধরবেন। পাশাপাশি কিছু কর্মসূচিও ঘোষণা করবেন। তবে কর্মসূচির ধরন এখনি প্রকাশ করতে নারাজ বিএনপির নেতারা।
বিএনপির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আগামী দিনে বিএনপির যুগপৎ গণআন্দোলনের ১০ দফাগুলো হচ্ছে- বর্তমান ‘অনির্বাচিত অবৈধ’ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে সরকারের পদত্যাগ। ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ’এর আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার বা অন্তবর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন। ‘বর্তমান অবৈধ’ নির্বাচন কমিশন বাতিল, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নতুন একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন। অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসেবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাতিল। খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার ও সব রাজনৈতিক কারাবন্দীদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দেওয়া।
দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দল কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার জন্য নতুন কোনো মামলা এবং বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা যাবে না।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালা-কানুন বাতিল করা। বিদুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতগুলোতে মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় আনা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা।
গত ১৫ বছরে বিদেশে অর্থ-পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্টীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করা। দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে অতিদ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা। গত ১৫ বছরে গুমের শিকার নাগরিকদের উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর, উপসানালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপমুক্ত করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) বিকালে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আগামীকালের গণসমাবেশে গণআন্দোলনের ১০ দফা দেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ বলেন, কী কী থাকবে সেটা এখনি বলে দিলে কালকে কি জনসভায় যাবেন আপনারা। সেটা কালকে শুনবেন।
বিএনপির নেতারা বলছেন, আগামীকালের গণসমাবেশে কয়েক লাখ লোকের সমাগম করা আমাদের টার্গেট। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অনেক জেলার নেতা-কর্মী গণসমাবেশ যোগ দিতে আগেই ঢাকা চলে এসেছে।
তবে গত বুধবারের (৭ ডিসেম্বর) নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনার কিছু প্রভাব তো জনসভায় পড়বে। তারপর কালকের জনসভায় কয়েক লাখ লোক হবে। ইতোমধ্যে মাঠে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ঢুকে গেছে। এখন কাল যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে তাহলে এই জনসভা স্মরণকালের গণসমাবেশ হবে।
নয়াপল্টন দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অবস্থান থেকে সরে এসে শেষ পর্যন্ত সরকারের শর্ত অনুযায়ী ঢাকার একদম দক্ষিণ পাশে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করাটা মন্দের ভালো হিসেবে দেখছে বিএনপি। তারা বলছে, সরকারের আগ্রাসী মনোভাবের পাশাপাশি আমাদের মধ্যম সারির কিছু নেতার অতিকথন এই অবস্থার জন্য দায়ী। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখানে সমাবেশ করলে করেন, না হলে বাতিল করেন। ফলে সমাবেশ একদম না করার চেয়ে ঢাকার শেষ মাথায় গিয়ে সমাবেশ করাটা মন্দের ভালোর মতো। না হলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এতদিনের যে শক্তি-সাহস নিজেদের মধ্যে জুগিয়েছে সেটা একদম শেষ হয়ে যেত। তাদের মধ্যে ২০১৪ সালের ধারণা ফিরে আসত যে, ঢাকার নেতারা কিছু করতে পারে না। আন্দোলন করার মতো শক্তি সামর্থ্য তাদের নেই।
এমএইচ/এসজি