১০ ডিসেম্বর নিয়ে দ্বিধা রাখবেন না: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘১০ ডিসেম্বর নিয়ে মনে কোনো দ্বিধা রাখবেন না। ১০ ডিসেম্বর অবশ্যই ঢাকায় সমাবেশ হবে এবং এই সমাবেশ থেকে নতুন স্বপ্ন দেখবে মানুষ; সমাবেশ থেকে মানুষ নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আরও তীব্রভাবে নামবে।’
তিনি বলেন, ‘ভয়াবহ এই যে দানব সরকার আমাদের উপর চেপে বসেছে তাকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় সেই কাজ করা হবে। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি-আমরা এই সরকারের পতন চাই। আমরা সংসদ বিলুপ্ত চাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর চাই। নতুন একটি নির্বাচন কমিশনের মধ্যে দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটা গ্রহণযোগ্য অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আন্দোলনে শরিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করব, রাষ্ট্র সংস্কার করব।’
মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কয়েকদিন আগে অনির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী একটি নাটক করেছেন; সেই নাটকটি ছিল ২০১৫ সালের আন্দোলনের সময় যাদের কে আগুনে পুড়িয়ে নিহত করা হয়েছিল, আহত করা হয়েছিল তাদের কে একসঙ্গে নিয়ে এসেছে তিনি(প্রধানমন্ত্রী) অনেক কান্নাকাটি করেছেন। এবং জনগণের সামনে আবারও একটা ভুল ধারণা তুলে ধরে বলেছেন, ওইরকম ঘটনা আবারও ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের তখনই সন্দেহ হয়েছে তিনি যে চেষ্টা করছেন; জনগণের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে। জনগণ যে তাদের দাবি আদায়ে রাস্তায় নামতে শুরু করেছে এটাকে বন্ধ করার আরেকটি কৌশল। যাকে আমি সবসময় বলি-হীন চক্রান্ত; সেই চক্রান্ত তিনি আবারও শুরু করতে চান।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে পত্রপত্রিকায় দেখেছি, খবর পেয়েছি পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রায় ২০০ টি বাস নাকি প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এটা কিছু অসমর্থিত সূত্রে থেকে পাওয়া খবর। ইতিমধ্যে আমরা কিছু কিছু আলামতও পেয়েছি; ছাত্রলীগ-যুবলীগ নামদারি সন্ত্রাসীকে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে থানায় থানায় নামিয়ে দিয়ে সেখানে সন্ত্রাস প্রতিরোধ করবে। আমরা তখন থেকেই এব্যাপারে সচেতন ও সজাগ হয়েছি। যে কারণে আজকে এই সেমিনারে উত্থাপন করা হয়েছে দেশের সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল ও কুটনৈতিকদের জানাতে চাই যে-সরকার আবার সেই পুরনো খেলায় উদর পিন্ডি বুদর গারে চাপানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে জানি বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। সময় এসেছে এখন রুখে দাড়াতে হবে এবং সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। বিশেষ আলোচনার কিছু নেই; কারণ এই সরকারকে সরকার বলা যায় না। এরা নির্বাচিত সরকার নয়; জনগণের ম্যান্ডেট এদের কাছে নেই। এরা ১৫ বছর ধরে এই দেশের মানুষের উপরে অন্যায় অত্যাচার নির্যাতনের স্টীম রোলার চালিয়ে গেছে। আমাদের দলের ৬শত নেতা-কর্মীকে গুম করে দিয়েছে। ইলিয়াস আলী-চৌধুরী আলম ১০ বছর ধরে তাদের কোনো খুজ পাইনি। সহস্রাধিক মানুষ হত্যা হয়েছে; ৪০ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন তারা কোর্টে যাচ্ছেন আসছেন; কি একটা ভয়ঙ্কর অবস্থা। এই তো কয়েকদিন পূর্বে সাধারণ ঘরের ছেলে ভোলার শাওন মিছিলে এসে বুক পেতে দিয়েছে; একটি মাত্র কারণ সে মুক্তি চায়। দানবীয় সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়। অনেকে মনে করে আজকে এটা বিএনপির সমস্যা; আসলে এটা বিএনপির সমস্যা নয়; এটা জাতির সমস্যা। যে জাতি ৭১ সালে যুদ্ধ করেছিল একটি গণতন্ত্রান্ত্রিক রাষ্ট্র ও কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। সেই জাতির আজকে কি করুণ অবস্থা থেকে মুক্তি চায়, নি:শ্বাস নিতে চায়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা জানি এত সহজ নয় ফ্যাস্টিস শক্তির বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী লড়াই করা। খুব কঠিন। ফ্যাস্টিসদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে প্রতিটি মুহূর্তে ভেবে চিন্তে অগ্রসর হতে হয়। গত ১৪/১৫ বছরে এই সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে দেশের সমস্ত সম্পদ বাইরে পাচার করে দিয়েছে। একটা ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা একদিনে লুপাট। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক লুপাট, শেয়ারবাজার লুপাট হয়ে যাচ্ছে।মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। দেশে এখন কিছু নেই। গ্যাস নেই অথচ গ্যাসের বিল দিতে হচ্ছে। এইভাবে চুরিচামারি করে এখন তারা জোড়াতালি দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর বলে বেড়াচ্ছে পৃথিবীতে সংকট আছে বাংলাদেশে নেই। আজকেও বলেছে- বাংলাদেশে একটা চৎকার অবস্থা বিরাজ করছে।’
অর্থনৈতিক কোনো সংকট নেই। এটা মিথ্যাচার, জাতিকে বিভ্রান্ত করা, একটা অন্ধকারের মধ্যে রেখে দেওয়া।এর একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে তারা তাদের শাসনকে আরও স্থায়ী করতে চায়। যার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে, যোগ করেন তিনি।
এমএইচ/এমএমএ/
