সমাবেশ শুরুর আগেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপি নেতা-কর্মীরা
ঢাকাসহ সারাদেশে গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছে বিএনপি নেতা-কর্মীরা। শনিবার (৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, সুকৌশলে সরকার পুলিশ দিয়ে সারাদেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে জনমতে আতঙ্ক তৈরি করছে। যাতে বিএনপির আন্দোলন চাঙ্গা না হতে পারে।
বিএনপি নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, ১০ ডিসেম্বর নয়া পল্টনের যাতে বিএনপির সমাবেশ না হয়, সেজন্য সরকার সমাবেশ শুরুর আগেই তা বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে নতুন রুপে আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে এবং সারাদেশে গ্রেপ্তার আতঙ্ক তৈরি করছে, যাতে সমাবেশ না হয়।
তাদের অভিযোগ, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ পণ্ড করার জন্য সরকার উঠে পড়ে লেগেছে। এজন্য সরকারি বাহিনীকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করতে লেলিয়ে দিয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় সারা দেশ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তথ্যমতে জানা যায়, শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস নয়াপল্টনে একটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। ককটেল বিস্ফোরণ হওয়ার পর বিএনপি নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে এবং তারা স্লোগান দিতে থাকে।
এ সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ১০ ডিসেম্বর সরকার নয়াপল্টনের সমাবেশ করতে দিবে না এ জন্য বিভিন্ন চক্রান্ত করছে তারা। কোনও চক্রান্ত এবার কাজ হবে না। যেকোনো মূল্যে বিএনপি নয়াপল্টনের সমাবেশ বাস্তবায়ন করবে। যা এখনও দলীয় চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
ককটেল বিস্ফোরণের পর নয়াপল্টনে বিএনপির পার্টি অফিস থেকে দলটির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে আটক করে পল্টন থানা পুলিশ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনে আসলেই কি ঘটেছে সেই বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে আমরা বেশ কয়েকজনকে আটক করেছি তাদের অনেকের নামে মামলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া আন্দোলনের নামে বিএনপি জনমতে আতঙ্ক তৈরি করা এবং সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়া পল্টনে যাতে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটাতে পারে এজন্য আমরা অতিরিক্ত সতর্ক রয়েছি।
নয়াপল্টন থেকে ১০-১৫ জনকে আপনারা আটক করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, ১০-১৫ জন আটক কিনা সেটা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
কিসের জন্য আপনারা নয়া পল্টনে অবস্থান করছেন-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে আমরা নয়াপল্টনে নিরাপত্তার স্বার্থে সতর্ক রয়েছি।
এ ছাড়াও একইদিনে নয়াপল্টনস্থ বিএনপির পার্টি অফিসের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও লালবাগের সাবেক কমিশনার মোশাররফ হোসেন খোকনকে একটা সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকধারী লোকেরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের প্রধান ডিআইজি হারুন অর রশিদ বলেন, দেশে বিশৃঙ্খলা অভিযোগের তথ্য থাকায় লালবাগের সাবেক কমিশনার মোশাররফ হোসেনকে আটক করা হয়েছে। সে কোনও অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছে কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যাবে।
সাবেক কমিশনার মোশাররফ ছাড়াও যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ শেষে ঢাকায় ফেরার পথে সাভারের আমিনবাজার থেকে তাকে আটক করা হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, টুকুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। দেশে বিশৃঙ্খলার ঘটনায় তিনি কোনও কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রয়েছেন কিনা সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। বিস্তারিত পরে জানাতে পারব।
এদিকে সকল গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সরকার আমাদের ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে উম্মাদ ও হিংস্র হয়ে গেছে। এই সরকারের অত্যাচার এবং অবিচার এমন পর্যায়ে চলে গেছে তা থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করতে হলে প্রয়োজন একটি গণঅভ্যুথান।
তিনি আরও বলেন, অবিলম্বে টুকুসহ সারাদেশে বিএনপির প্রায়ই ১০০০ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এসআইএইচ