বিএনপি নির্বাচন করতে চায়: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচন করতে চাই কিন্তু নির্বাচন হতে হবে নির্বাচনের মতো, দিনের ভোট দিনেই রাতে নয়। অথচ উনারা চান বিরোধী দল নির্বাচনে না আসুক। ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার অভ্যাস হয়ে গেছে। ওয়াকওভার চায়। তবে দেশের মানুষ এবার তা হতে দেবে না। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার ক্ষমতায় আসতে পারবে না- এটাই তাদের ভয়-ভীতি ও সংশয়।
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সরকারের নির্দেশে বিএনপির চলমান আন্দোলন নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র করছে। জেলা উপজেলা পর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের তথ্য সংগ্রহ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্যোগ বেআইনি, সংবিধান পরিপন্থী। বিএনপি মনে করছে অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সমাজে ভীতি ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করতেই বেতার বার্তার উদ্দেশ্য।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ ধরনের স্বেচ্ছাচারী আচরণ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, সরকার নিজেদের ক্ষমতায় থাকতে বিরোধী দলের আন্দোলন দমিয়ে রাখতে চায়। কোনো নির্দিষ্ট বাহিনী নয়, সরকারের উপর নিষেধাজ্ঞা আসা উচিত। কারণ সিদ্ধান্ত সরকারের কাছ থেকে আসে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। তাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান শেষে দেশে ফিরে গতকাল (৬ অক্টোবর) গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একেবারে সবাই লোকমা তুলে খাওয়ায় দিতে হবে, জিতিয়ে দিতে হবে। তবেই আসবে, এটা তো হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক দল তার মতামত বলবেন, শেখ হাসিনাও তার বক্তব্য দেবেন। এভাবেই তিনি টিকে আছেন জনগণকে প্রতারণা করে, মিথ্যা কথা বলে, ভয় দেখিয়ে। সব কিছু করে টিকে আছেন। নির্বাচনে আমাদের ভয় পাওয়ার প্রশ্ন নেই। বরং তারা ভীত হয়ে আছেন। তারা সন্ত্রস্ত আছেন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না, এটাই হচ্ছে মূল কথা। যে কারণে তারা আজকে বিভিন্ন কলাকৌশল করে, বিভিন্ন রকম প্রতারণা করে, জনগণকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করে দিয়েছে ভোট দেওয়া থেকে। মানুষই তো ভোট দিতে যায় না এখন। ভোট কী? পিপলস উইল ভোট। ওরাই (জনগণ) তো যেতে পারে ভোট কেন্দ্রে। সেই জিনিসটা বড় কথা।
তিনি বলেন, এরা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই নির্বাচন একটা প্রহসন খেলা। আপনারা দেখবেন, অধ্যাপক আলী রিয়াজের যে হাইব্রিড ডেমোক্রেসি বইটা আছে সেটার মধ্যে পরিষ্কার বলা আছে, এই সব দেশগুলো কর্তৃত্ববাদী। যেখানে শেকড় গেড়ে বসে সেখানে নির্বাচনটা তাদের অন্যতম অস্ত্র। সেই অস্ত্রটা কী? তারা দেখায় যে, আমরা একটা নির্বাচন করেছি। উই আর ইলেক্টেড গভমেন্ট। বাট দেয়ার ইজ নো ইলেকশন। আসলে কোনো ইলেকশন হবে না। পৃথিবীর অনেকগুলো দেশ আছে এভাবে তারা নির্বাচন করে, এভাবে তারা টিকে থাকার চেষ্টা করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সংলাপ করছি তাদের সঙ্গে যারা এই সরকারকে মানে না। যারা মনে করে এই সরকার দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে তাদের সঙ্গে আমরা সংলাপ করছি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের কোনো সুযোগ নাই, প্রশ্নই উঠে না। দে মাস্ট লিভ, তাদেরকে চলে যেতে হবে। আমরা বারবার করে বলছি যে, চলে গিয়ে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা দিতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাজ করবে।
নির্বাচন নিয়ে সরকার আলোচনায় ডাকলে যাবেন কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি স্পষ্টভাষায় বলেন, প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত কোনো আলোচনার সুযোগ নেই, কোনো আলোচনা হবে না।
যুগপৎ আন্দোলন কবে নাগাদ শুরু হতে পারে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছি। সময়টা এখনই বলা যাবে না। সেই সংলাপ যখনই শেষ হবে তখন বলতে পারব।
এমএইচ/আরএ/এসজি