বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই জিয়া ঘোষণা দিয়েছেন: হাফিজ উদ্দিন
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান একজন বড় মাপের নেতা ছিলেন। পুরো জাতিকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তাকে আমরা নেতা হিসেবে গ্রহণ করি। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে একজন সৈনিক মেজর জিয়াউর রহমান সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণায় ছিলেন। সেদিন কিন্তু এ ঘোষণা দেওয়ার জন্য কোনো রাজনৈতিক নেতাকে পাওয়া যায়নি। এই সামান্য কৃতিত্বটুকু জিয়াউর রহমানকে আওয়ামী লীগ দিতে চায় না। অথচ তিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকেই ঘোষণা দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া একদফা দাবির কথা আওয়ামী লীগ কখনো বলেনি। তারা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত শাসন চেয়েছিল। একমাত্র মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, তবে সে কথা সেভাবে উঠে আসেনি।’
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। ‘৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা-প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের অহংকার, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা কারো দয়ার দান নয়!’ শিরোনামে এ সমাবেশ হয়।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘দেশে যত লুটপাট হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধারা করেননি। এসব লুটপাট করেছেন রাজনৈতিক নেতারা। দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মীরা রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ছিল গণতন্ত্রের জন্য, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য, সাম্য প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ, আমরা সবাই এটাই চেয়েছিলাম। রাজনীতিবিদরা নিজের নেতা ও দলকে দেশের ওপরে স্থানে দিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সরিয়ে দেওয়া হলো।’
দেশ একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ মানুষের সন্তান, সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের কথা কেউ বলে না। অথচ আওয়ামী লীগ করলেই, মন্ত্রী হলেই মুক্তিযোদ্ধা হতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান মন্ত্রীদের ওপরে। তা না হলে কেন এ সরকারের আমলে একজন মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা হতে চান, ৭১ সালে যার বয়স ছিল ৭ বছর৷ আওয়ামী লীগ করলেই মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিযোদ্ধারাও মুক্তিযোদ্ধা। এটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অসম্মানের। মুক্তিযুদ্ধ না হলে দেশ স্বাধীন হতো না। দেশকে স্বাধীন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু, এ কৃতিত্ব কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের দেবে না। সব কৃতিত্ব রাজনৈতিক নেতাদের।’
তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্র কীভাবে চলবে, মাথায় ঘামাইনি। আমাদের সিনিয়র অফিসার, আমরা সেনাবাহিনীসহ নিজ নিজ পেশায় ফিরে গেছি। কিন্তু এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমরা যেসব মুক্তিযোদ্ধারা এখনো বেঁচে আছি, তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের পলিসিতে হস্তক্ষেপ করতে চাই, দুঃশাসন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য রাজপথে নেমে সরকারপতনের আন্দোলন করতে চাই।’ এ সময় এসব বিষয়ে উপস্থিত অতিথিদের মতামত চান হাফিজ। জবাবে তারা সমস্বরে ‘হ্যাঁ’ বলেন।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘১৯৭১ সালে যুবকরা-তরুণরা কত সাহসী ছিল। সেদিন বীর বাঙালিরা যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছিলেন। কিন্তু আজ বাংলাদেশকে দেখলে বোঝা যায় না এ দেশ যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে। কেন এ দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধারা অবহেলিত? এর প্রধান কারণ হলো রাজনীতিবিদদের চরিত্র। এ দেশে যতগুলো রাজনৈতিক দল আছে যত রাজনীতিবিদ আছেন, তারা অন্যকে সম্মান দেবেন না। তারা নিজের দল, নিজের নেতা, নিজের পকেট ছাড়া অন্য কিছু বুঝতে চান না।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের ভুল ইতিহাস শেখানো হচ্ছে। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ কীভাবে সংঘটিত হয়েছিল তা যেকোনো নিরপেক্ষ বয়স্ক জ্ঞানী লোক এবং ‘৭১ দেখেছেন এমন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাস করবেন, তারা সবাই বলবেন—‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। সেখানে নেতৃত্ব কে দিয়েছেন? বলবে, সাধারণ সৈনিক ও ছাত্ররা এবং বিভিন্ন পেশার মানুষ। কিন্তু এখন একজন তরুণ বই পড়ে ইতিহাস জেনেছেন, ৭১ সালে তার জন্মও হয়নি। তাকে জিজ্ঞাস করেন, সে বলবে একজন নেতা ঘোষণা দিয়েছেন, তাতেই দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। কিন্তু যারা রণাঙ্গনে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন, তাদের নাম ইতিহাসে লেখা নেই।’
অনুষ্ঠানে ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, মজিবর রহমান সরোয়ার, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, কর্নেল (অব.) জয়নাল আবদীন, নঈম জাহাঙ্গীর, সাদেক খান, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমসহ শতাধিক রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন।
এমএইচ/এএস