‘জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি’
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন বলেছেন, আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রম করেছি, কিন্তু দেশে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ও অগ্রগতি হয়নি। দেশে আজ গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার নেই। তাই বিএনপি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের বাইরে এই মতবিনিময়ের উদ্যোগ নিয়েছে। গত দুটি সংসদ নির্বাচনে যেভাবে ভোট ডাকাতি হয়েছে তারপর আওয়ামী লীগের অধীনে কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব নয়।
শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) সিলেট নগরীর একটি হোটেলের কনফারেন্স রুমে বিএনপির মিডিয়া সেলের উদ্যোগে ‘জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র গঠনে অবাধ-নিরপেক্ষ, নির্বাচনত্তোর একটি জাতীয় সরকার এবং দ্বিকক্ষ সংসদ অপরিহার্য’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সবার সম্মিলিত আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে দেশে যখন জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে তখন আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সব দলকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারেক রহমান একটি রূপরেখা দেবেন। এই রূপরেখায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ করার যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন হলে দেশে যেমন সুশাসন নিশ্চিত হবে, তেমনি দেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে। এজন্য দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ সর্বস্থরের মানুষকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে। তাই আমরা একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি।
মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন যে সম্ভব নয় তা গত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে আজ দেশবাসী তথা বিশ্ববাসীর কাছে একটি সর্বজন স্বীকৃত সত্য। তাই গণআন্দোলনে ফ্যাসিবাদ পতনের পর কেবলমাত্র একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও রাষ্ট্রের রুটিন কাজ সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যেই গঠিত হতে পারে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার। জনগণ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিজের ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে আজ উন্মুখ হয়ে আছে। গণমানুষের এই প্রত্যাশাকে দীর্ঘমেয়াদে অবজ্ঞা করার কোনো সুযোগ নেই। তাই এই অবৈধ দখলদারদের হটিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে গণতান্ত্রিক শক্তির বিজয়ের পর জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐক্যমতের সরকার গঠনের সুস্পষ্ট অঙ্গীকারই আজ সময়ের দাবি। এর বাইরে ভিন্ন প্রক্রিয়া জনগণ গ্রহণ করবে না।
তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রস্তাবিত রাষ্ট্র-রূপান্তরমূলক সংষ্কারের পথ-নকশার আরেকটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিক হচ্ছে, বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের প্রতিতযশা শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ ব্যক্তিদের নিয়ে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার ঘোষণা। পৃথিবীর উন্নত ও অনুসরণযোগ্য অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার প্রচলন আছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, একজন রাজনীতিবিদ নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করেন আর একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক চিন্তা করেন আগামী ১০০ বছরে দেশকে কোথায় নিয়ে যাবেন। তারেক রহমান আগামী ১০০ বছর পর দেশকে কোথায় নিয়ে যাবেন সেই চিন্তা করছেন। কিন্তু তারেক রহমানের দুর্ভাগ্য যে, আওয়ামী লীগের মতো একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হচ্ছে, যে আওয়ামী লীগের হাতে ১৯৭৩ সালেই গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে। শহীদ জিয়া যেমন দেশকে কয়েকশত বছর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তারেক রহমানও সেই চিন্তা করছেন। গত ১০ বছরে দেশের মারাত্মকভাবে সমাজিক মূল্যবোধ হারিয়েছে। এখন রাষ্ট্র মেরামত প্রয়োজন। কিন্তু বিএনপি বিশ্বাস করে তাদের পক্ষে একা এ কাজটি করা সম্ভব নয়। এজন্য বিএনপি একটি জাতীয় সরকার গঠন করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ হলে রাষ্ট্রের সব অঙ্গ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে। গত ১৩ বছরের একনায়কতন্ত্রকে ভাঙতেই দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ খুবই জরুরি। আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করেই দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব করেছে।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট এমদাদ উল্লাহ মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম শাহীন, ড্যাবের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা. শামিমুর রহমান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সাদা দল) শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম, ইউট্যাবের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাবির শিক্ষক প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ ইকবাল, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিদ্দিকুর ইসলাম, সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এটিএম ফয়েজ, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিলেট জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট আনসার খান, বিএফইউজের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক ডা. শিব্বির আহমেদ শিবলী, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন, অ্যাডভোকেট আবুল ফজল, কবি সালেহ আহমদ খসরু।
এমএইচ/এসজি