প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য সুস্থ মস্তিষ্কের উচ্চারণ কিনা সন্দেহ আছে: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘চারদিকে দুর্নীতি লুটপাট টাকা পাচার আর বিনাভোটে রাষ্ট্র পরিচালনায় সীমাহীন ব্যার্থতা আড়াল করতে প্রায়শঃই নিশিরাতের সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং বিএনপি সম্পর্কে মিথ্যাচার করেন। অশালীন অশ্রাব্য ভাষায় কটূকথা বলেন। উদ্ভট সব তত্ত্ব-তথ্য হাজির করেন।’
বুধবার (৩১ আগস্ট) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘গতকাল এক স্মরণসভায় শেখ হাসিনা জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া সম্পর্কে যেসব টাটকা মিথ্যা কথা, ইতিহাস বিকৃত এবং অরুচিকর কুৎসা বয়ান করেছেন তা সুস্থ মস্তিস্কে উচ্চারণ সম্ভব কি না তাতে জনগণের ঢের সন্দেহ আছে। তার বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে লেলিহান প্রতিহিংসাপরায়ণতা যেন তার মুখ দিয়ে তরল গরল হয়ে উদগীরণ হচ্ছে। তার তীব্র বিষাক্ত ক্রোধের কারণ হলো আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার জোর জবরদস্তি করে ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসনে টিকে থাকার সমস্ত সম্ভাবনা তিরোহিত হয়ে গেছে। গুম, খুন, লুটপাট, অর্থ পাচার, জুলুম- নিপিড়নের সমস্ত সীমা-পরিসীমা অতিক্রম করেছে তার মাফিয়া সরকার। পাপাচারে পূর্ন হয়ে গেছে।’
সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সারাদেশের মানুষ দাবানলের মতো ফুঁসে উঠেছে। নিভৃত জনপদেও সরকারের পতন দাবীতে বানের মতো অকল্পনীয় উত্তাল জনস্রোত দেখে শেখ হাসিনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। পুলিশ এবং তার দলীয় সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে মিছিলে এবং বাসাবাড়ীতে নারকীয় কাপুরোষচিত হামলা করেও গণবিদ্রোহ ঠেকাতে পারছে না। এখন পতন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন বিরোধীদলের অন্তত ৪০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। সর্বহারা পার্টির শীর্ষ নেতা সিরাজ শিকদারকে গুম, অপহরণ এবং হত্যা করে পার্লামেন্টে হুঙ্কার দেয়া হয়েছে 'কোথায় আজ সিরাজ শিকদার'। ইতিহাস সাক্ষী, গুম, অপহরণ আওয়ামী লীগের মজ্জাগত। ৭৩ এর জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির সাক্ষীদের কেউ কেউ এখনো বেঁচে রয়েছেন। সেই আওয়ামী লীগ যখন জিয়াউর রহমান সম্পর্কে গুম-খুন-অপহরণ কিংবা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করেন তখন বোঝা যায় আওয়ামী লীগের চরিত্র এখনো পাল্টায়নি। তারা কতটা দেউলিয়া হয়ে গেছে।’
রিজভী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান সম্পর্কে মিথ্যাচার করেই ক্ষান্ত হননি নিশিরাতের সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি খালেদা জিয়া সম্পর্কেও স্বভাবসুলভ নোংরা ভাষায় বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা এ নিয়ে কোনো জবাব দিতে চাইনা বরং বলতে চাই এ ধরণের বক্তব্য দিয়ে শেখ হাসিনা তার কুরুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। 'আয়নাঘরে'র ভয়ে প্রকাশ্য প্রতিবাদ না হলেও জনগণের কাছে শেখ হাসিনার কথার গুরুত্ব আসলেই রয়েছে কিনা এটি সময়ই বলে দেবে।’
লিটার প্রতি ৫ টাকা কমানোর নামে নতুন করে লুটপাটের ফন্দিফিকির করছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত অমানবিক। এই ভাঁওতাবাজী বন্ধ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।
রিজভী বলেন, ‘দেশব্যাপী বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত ও নিষ্ঠুর হামলা চালিয়ে নেতা-কর্মীদেরকে গুরুতর আহত করেছে। পুলিশ গ্রেফতার করেছে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা সংঘটিত এসব বর্বরোচিত ও নৃশংস ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর হামলাকারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তিসহ আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’
এমএইচ/এএস