৪৩ বছরে পা দিয়ে কোন পথে ছাত্রদল
রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির ‘ভ্যানগার্ড’ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তবে একসময় সংগঠনটির শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও এখন অনেকটাই কাগুজে বাঘে পরিণত। সাবেক ও বর্তমান ছাত্রদল নেতাদের মতে, ক্ষমতাসীনদের চাপে তাদের বিভিন্ন সময়ে সমঝোতাকে প্রাধান্য দিতে দেখা যায়। গতানুগতিক দলীয় কর্মসূচির বাইরে গণতান্ত্রিক অধিকার সংশ্লিষ্ট কর্মসূচিতে তাদের তেমন শক্তিশালী ভূমিকায় দেখা যায়নি।
১৯৭৯ সালে ১ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া ছাত্রদল এরই মধ্যে ৪২ বছর পূর্ণ করে ৪৩-এ পা দিয়েছে। অথচ ২০১৬ সালে বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিলে রাখা হয়নি ছাত্র-বিষয়ক সম্পাদক পদ। খালেদা জিয়া দণ্ডিত আসামি, রাজনীতিতে নিস্ক্রিয়। তাই কার্যত সংগঠনটি দেশে একরকম অভিভাবকহীন। সংগঠনের নেতারা সিদ্ধান্তের জন্য তাকিয়ে থাকেন যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে।
তবে ছাত্রদল নেতারা বলেন, ছাত্রদলে সক্রিয়তা ফিরে এসেছে। এখন ছাত্রদল নেতৃত্বকে সাবেক ছাত্রনেতাদের পরামর্শ নেওয়ার নামে কোনো বলয় কিংবা সিন্ডিকেটে যুক্ত হতে হচ্ছে না। তারেক রহমানকে সরাসরি অভিভাবক হিসেবে পেয়েছেন বলেও জানান নেতা-কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের দাবি, ছাত্রদল স্বাধীন। বিশেষ প্রয়োজনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শ নিয়ে থাকে বলেও যুক্ত করেন খোকন।
তিনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘শত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে ছাত্রদল তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে অনেকটাই অগ্রগামী হয়েছে। বড় সাফল্য হলো–দীর্ঘ ২৭ বছর পর কাউন্সিলরদের ভোটে ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচিত করা। রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে যে সাংগঠনিক দক্ষতা প্রয়োজন, সেটা অর্জনে সফলতার দ্বারপ্রান্তে যাচ্ছি। ২০০১-২০০৩ সালের পর যেসব ইউনিয়ন কমিটির কার্যক্রম স্থবির ছিল, সেগুলো ইতিমধ্যে সারাদেশে পাঁচ হাজার ইউনিয়ন ইউনিট কমিটিকে সক্রিয় করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। হামলা-মামলা উপেক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদল তাদের হারোনা ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।’
নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে অর্থ বাণিজ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে ভালো কিছু করতে গেলে কিছু সমালোচনা-অভিযোগ থাকবেই। ছাত্রদল একটি বৃহত্তর ছাত্র সংগঠন। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। সেখান থেকে তুলনামূলক যোগ্য ত্যাগী ও দলের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধদের দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। অনেক ইচ্ছে থাকার পরও সংগঠনের স্বার্থে কাউকে বাদ দিয়ে কাউকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে কিছুটা ভুল বুঝাবুঝি দেখা দেয় এবং দিচ্ছে। তা অস্বীকার করার অবকাশ নেই। তবে কিছুদিনের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সংগঠনের স্বার্থে সবকিছু ঠিকও হয়ে যায়।’
সংগঠনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আগামী দিনের রাজপথ আন্দোলন উপযুক্ত নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা, নতুন কমিটি গঠন কেন্দ্র করে ছাত্রদল কোনো বলয় কিংবা সিন্ডিকেটে জড়াতে না পারে সেজন্য তারেক রহমান সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রায় নিয়মিত ‘ওয়ান টু ওয়ান’ দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। এতে নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত হচ্ছেন।
৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও কর্মসূচি
১ জানুয়ারি ২০২২ (শনিবার) ছাত্রদলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা ও করোনাকালীন বিষয়াদি প্রাধান্য দিয়ে এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটা অনুষ্ঠান থেকে বিরত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ইস্যুতে দুই দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সংগঠনটি। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে–১ জানুয়ারি সকাল ৯টায় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ কার্যালয়সহ মহানগর-বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট কাযালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন। একই দিন সকাল ১০টায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন এবং বেলা ১২ টায় মহানগর নাট্যমঞ্চে ছাত্রসমাবেশ করা হবে।
২ জানুয়ারি প্রত্যেক জেলা-মহানগর-বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রসমাবেশ আয়োজন করবে।
এদিকে, ছাত্রদলের সহ-দফতর সম্পাদক আজিজুল হক সোহেল ঢাকাপ্রকাশকে জানান, ‘মহামারি করোনায় সংগঠনের সাংগঠনিক কাযক্রম বাধাগ্রস্ত হলেও বসে নেই ছাত্রদল। সংগঠনকে গতিশীল করতে আমরা ইতিমধ্যে সারাদেশে নগর, মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা, পৌর ও কলেজ শাখায় ৯ মাসে প্রায় এক হাজার ৫৩৮টি নতুন কমিটি উপহার দিয়ে সক্ষমতার পরিচয় দিতে পেরেছি। ইউনিয়ন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কিছুটা ব্যস্ততা থাকায় নতুন করে কমিটি ঘোষণা করা না হলেও সাংগঠনিক কাযক্রম অব্যাহত রয়েছে।’
আংশিক কমিটিতেই মেয়াদ শেষ
দীর্ঘ ২৭ বছর পর ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলের মাধ্যমে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান খোকন ও ইকবাল হোসেন শ্যামল নির্বাচিত হন। ২০ ডিসেম্বর ৬০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সেই আংশিক কমিটিও তাদের নির্ধারিত মেয়াদ অতিবাহিত করে ফেলেছে। অতীতের ন্যায় যথাসময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পরিণত করতে ব্যর্থ সংগঠনটির বর্তমান নেতৃত্ব। অথচ নিজেদের নেতৃত্ব সময় ধরে রাখতে দেশব্যাপী বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠনে দৌড়ঝাঁপ করে যাচ্ছেন তারা। দলীয় কর্মসূচির বাইরে ছাত্রদের অধিকার সংশ্লিষ্ট থেকে দেশের কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিজেদের ভূমিকা তুলে ধরতে ক্রমাগত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ছাত্রদল।
ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, ‘ছাত্রদল ভালো নেই। গণতন্ত্রের নেত্রী খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। উনার কারামুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসা নিশ্চিত না হওয়া পযন্ত ছাত্রদল ভালো থাকতে পারে না। ছাত্রদল নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শপথ নিয়েছে–চেয়ারপারসনের কারামুক্তি ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, ও মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজপথ আন্দোলনে থাকতে বদ্ধ পরিকট। প্রয়োজনে জীবন দিবে তবুও ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে দেশ রক্ষায় আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে ছাত্রদল নেতৃত্ব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাংগঠনিক টিম ও নতুন কমিটি গঠন ইস্যুতে কিছু অভিযোগ উঠেছে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বৃহত্তর একটি ছাত্র সংগঠনে ভিন্নমত, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকাটা স্বাভাবিক। তারপরও অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও কিন্তু গ্রহণ করা হচ্ছে, হয়েছে। যেটা ফলাও করে প্রচারিত হয় না। কারণ ভালো কাজের প্রশংসা কিংবা উৎসাহ না দিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা করাটা একটা ব্যাধিতে পরিণত।’
এমএইচ/এসএ/