রাজনীতিতে বিকল্প থাকা উচিত: শেখ হাসিনা
রাজনীতির মাঠে আবারও শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একটা বিকল্প থাকা উচিত। ভালোভাবে যদি তারা সংগঠিত হতে পারে আমাদের আপত্তি নাই। তারা হোক।‘
শনিবার (৭ মে) বিকাল সাড়ে ৫টার পর গণভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সংসদের সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘একটা দলের তো নেতৃত্ব থাকতে হয়। তাদের নেতৃত্ব কোথায়? দুইটাই সাজাপ্রাপ্ত। একটা তো ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, দুর্নীতি এরপর ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা বিভিন্ন অপকর্মের জন্য সাজাপ্রাপ্ত। আর একটা এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত। এই নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপি। তাদের সঙ্গে আবার গাঁটছড়া বাঁধছে দেখলাম- ডান, বাম, অতিবাম, বুদ্ধিজীবী, জ্ঞানী, গুণী অনেকেই। একটা বকল্প থাকা উচিত। ভালোভাবে যদি সংগঠিত হতে পারে আমাদের আপত্তি নাই।‘
তিনি বলেন, এদেশে নির্বাচনের যতটুকু উন্নতি হয়েছে, সেটা আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। এটা আমাদেরই দাবি ছিল স্বচ্ছ ব্যালট পেপার, ছবিসহ ভোটার তালিকা এবং এখন ইভিএম। অর্থাৎ মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবে সাথে সাথে ফল পাবে। মানুষের ভোটের অধিকার মানুষ ভোট দেবে, আমরা সেটাই চাই। মানুষ যদি ভোট না দেয় দেবে না। আমরা আসব না ক্ষমতায়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মানুষ ভোট দেবে কিন্তু বার বার চক্রান্ত করে আমাদের ক্ষমতা থেকে দূরে সড়িয়েছে। ভোটের মাধ্যমে আমরা সব সময় ক্ষমতায় এসেছি। আওয়ামী লীগ কখনো পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি বা আওয়ামী লীগ মিলিটারি ডিকটেটরদের পকেট থেকে গড়া সংগঠনও না। এই সংগঠন মাটি ও মানুষের সংগঠন। এই সংগঠন মাটি মানুষের জন্য কাজ করে সেটা প্রমাণিত। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে যাচ্ছে, উন্নত হচ্ছে। মানুষের স্বচ্ছলতা এসেছে। শ্রমজীবী মানুষ পাওয়াই কষ্টকর। সাধারণ মানুষ সেটা জানে, বোঝে। কিন্তু অতি জ্ঞানীরা একটু কম বোঝে। তারা তাকিয়ে থাকে কখন ক্ষমতায় যেতে পারি। আর বসে থাকে কখন সিঁকে ছিঁড়বে তখন তারা ক্ষমতায় যাবে। ওরকম ভাবেই বসে থাকবে। আর যত বদনাম দেশের বিরুদ্ধে বিদেশে বলে বেড়াবে। তাদের আকাঙ্খা বিদেশ থেকে কেউ এসে কোলে করে ক্ষমতায় বসাবে। অতীতে এরকম ঘটেছে। তবে এখনকার বাংলাদেশ আর সেটা না। এটা আর পারবে না, যদি আমাদের সংগঠন সেভাবে শক্তিশালী থাকে। মানুষের আস্থা বিশ্বাস আমাদের উপর আছে, সেটাকে ধরে রেখে যদি এগিয়ে যেতে পারি দেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে। আমরা জনগণকে বিশ্বাস করি। আমরা চাই গণতান্ত্রিক ধারাটা যেন ব্যাহত না হয়, অব্যাহত থাকে।
তিনি বলেন, আয়ুব খান নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দেয়, আবার নির্বাচনও করে। আর ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করার পর জিয়াউর রহমান ঠিক একই কাজ করেছে। সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়, আর্মি রুলসে কোথাও নেই যে একজন সেনাপ্রধান কর্মরত অবস্থায় চাকরিজীবী সেনা অফিসার নির্বাচন করতে পারে, জিয়া সেটাও লঙ্ঘন করে। নির্বাচনের প্রহসন এদেশে শুরু করে। ভোট কারচুপি কালচারটাই শুরু করে জিয়া। এভাবেই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে সবসময় ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। ভোটের দিক থেকে আওয়ামী লীগ কখনই পিছিয়ে ছিল না। সব সময় আওয়ামী লীগের ভোটের সংখ্যা বেশি ছিল। পার্সেন্টেজের দিক থেকে বার বার এগিয়ে থাকলেও নানা ধরনের চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে পেছনে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য, মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়া। মানুষকে বাঁচাতে হবে। খাদ্য দিতে হবে, ভ্যাকসিন দিতে হবে। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ ভ্যাকসিন দিতে কোনো টাকা দিতে হয়নি। ভ্যাকসিন এতো সস্তা না। আমরা যা করছি মানুষের জন্য করছি। আমরা সব সময় মানুষের জন্য কাজ করি। এটা প্রমাণিত সত্য। আমাদের আরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। এ ছাড়া হয় না। আগে যারা ক্ষমতায় ছিল, জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া। ক্ষমতা তো জনগণের কাছে ছিল না। ক্ষমতা ছিল ক্যানটনমেন্টে বন্দি এবং সেখান থেকেই মার্শাল ল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অর্থাৎ ওভার্টলী, কভার্টলি সেই মিলিটারি ডিকটারশিপই চালিয়েছে। যেটা আয়ুব খান করেছিল। অর্থাৎ পাকিস্তানি একটা মডেল এখানে তৈরি করতে চাচ্ছে। যাদের যুদ্ধ করে পরাজিত করেছি। সেই পরাজিতদের পদাঙ্ক আমরা অনুসরণ করব না। আমরা বাঙালি। জাতির পিতার নেতৃত্বে আমার স্বাধীনতা এনেছি। আমাদের নিজস্ব স্বকীয়তা আছে। নিজস্ব সত্তা আছে, নিজস্ব সংস্কৃতি আছে, সবই আছে। আমরা সেভাবেই আমাদের দেশকে গড়ে তুলব। যেন এই বাঙালি সারা বিশ্বে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় করে যেমন মাঁথা উচু করে চলেছিল, ঠিক সেইভাবে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলব। যারা হয়তো ক্ষমতায় যেতে চান। কিন্তু জনগণের কাছে ভোট চাইতে পারেন না। ভোট চাওয়ার সমর্থ নাই। সংগঠন করার সেই সমর্থ নাই বা যাদের কোনো কিছু নাই কিন্তু আকাঙ্খা আছে, তারাই চাইবে দেশের স্থিতিশীলতা ধ্বংস করতে। তারাই চাইবে এদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে। কারণ ওই সামরিক জান্তার পকেট থেকে ক্ষমতায় বসে যেসব দল গঠন হয় তার আর যাই হোক গণতন্ত্র দিতেও পারে না, গণতন্ত্র চর্চাও করতে পারে না। গণতন্ত্র বোঝেও না। তারা তো মানুষ খুন করতে পারে। আইভী রহমানকে খুন করেছে। আমাকে হত্যা করার জন্য বার বার চেষ্টা করেছে। মানুষ পুড়িয়েছে। তাদের কুকর্মগুলো আবার মানুষের সামনে তুলে ধরা দরকার। মানুষকে আবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া উচিত। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে কীভাবে একটা পরিবার ধ্বংস করেছে। জিয়া যেভাবে সেনাবাহিনীর অফিসার এবং সৈনিকদের হত্যা করেছে। অধিকাংশ পরিবার লাশও পায়নি। ঠিক একইভাবে খালেদা জিয়াও একই কাজ করেছে। এদের কাছে দেশের মানুষ নিরাপদ না।
এসএম/টিটি