তারেক রহমানের ঈদ উপহারের টাকা রেখে খাম দেওয়ার অভিযোগ
সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম অংশগ্রহণ করে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার দলের বিভিন্নস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতিনিয়ত নানাভাবে আর্থিক সহায়তা-সহযোগিতা করে আসছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় এ সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। প্রতি বছরের মতো এবারও নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের পরিবারে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তবে গাইবান্ধার সর্বানন্দ ইউনিয়নে ঈদ উপহার সামগ্রীর কিছু উপহার পৌঁছে না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাইবান্ধা জেলা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও নবগঠিত সর্বানন্দ ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব মো. সাদ্দাম হোসেন ২০১৪ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। এরপর থেকে প্রতিবছর তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার সামগ্রী পেয়ে আসছেন। কিন্তু এই বছর ঈদ উপহার হিসাবে যে টাকা দেওয়া হয়ে ছিল তা গাইবান্ধা জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তারেকুজ্জামান তারেক গুলিবিদ্ধ মো. সাদ্দাম হোসেনের কাছে পৌঁছে না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন। ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা কৌতুহল বশত খাম চেক করতে গিয়ে ব্যাপারটা সামনে নিয়ে এসেছে। বিষয়টা ঐ ইউনিয়নের নেতা আবু তাহের আলমের দৃষ্টি গোচর হলে তিনি জেলা নেতাদের অবহিত করেছেন। একইসঙ্গে সর্বানন্দ ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এবং শিগগিরই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে তারেক রহমানের দেওয়া উপহার গায়েব করে দেওয়ার মূলহোতার কঠোর শাস্তি দাবি জানিয়েছে।
এদিকে তারেক রহমানের পাঠানো ঈদ উপহার সামগ্রী গায়েব হওয়ার ঘটনাটা সমগ্র জেলায় ছড়িয়ে পড়লে পরদিন রাতে বিকাশের মাধ্যমে টাকা ফেরত দেন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তারেকুজ্জামান তারেক। এরপর থেকে এই ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জোর চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে বলেও জানা যায়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তারেকুজ্জামান তারেক ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘এক দিনে দুইটি ইফতার পার্টি থাকায় কিছুটা তাড়াহুড়া ছিল। তাই খামের ভেতর টাকা রাখা হয়েছে কিনা ক্রসচেক করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। কিন্তু যখন জানতে পেরেছি খামের ভেতরে টাকা নেই সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়কের কাছে চেয়ে মো. সাদ্দাম হোসেনের বিকাশ নম্বর সংগ্রহ করেছি, বিকাশে টাকা পাঠিয়েছি তাও আবার দুইবার, প্রথমবার ভুল নম্বরে টাকা পাঠানো হলেও পরবর্তীতে সঠিক নম্বরে টাকা পাঠিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘মো. সাদ্দাম হোসেন রাজপথের সহযোদ্ধা, সংগঠনের জন্য নিবেদিত, আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার তার ঈদ সামগ্রী/ ঈদ উপহার পৌঁছে দিব না সেটা কি করে হয়? যেখানে আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি সেখানে উনার পক্ষ থেকে ঈদ উপহার মেরে দিব- একথার প্রশ্ন উঠে কিভাবে? খাম ক্রসচেক না করায় কিছুটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল সেটা কথা বলেই সমাধান হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি আমি সাবেক ছাত্রদল নেতা ও বর্তমান স্বেচ্ছাসেবক দলের সহদফতর সম্পাদক নাজমুল হাসান ভাইকে অবহিত করেছি।’
তারেক রহমানের ঈদ উপহার সামগ্রী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত সাবেক ছাত্রনেতা ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-দফতর সম্পাদক নাজমুল হাসান ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘বিষয়টিতে দায়িত্বহীনতার পরিচয় ঘটেছে। শুধু উপহার সামগ্রী নয় কাউকে কোনো কিছু পৌঁছে দেওয়ার পূর্বে ক্রসচেক করা প্রয়োজন, একবার ক্রসচেক করলেই এমন ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হতো না। এটি খুবই স্পর্শকাতর তবে বিষয়টি ভুল বশত হয়েছে, উভয়ই বুঝতে পেরেছে তাই সঙ্গে সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটেছে।’
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘ঘটনাটি যদি ইচ্ছাকৃত হতো তাহলে অবশ্যই অভিযোগ পেতাম। তাছাড়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা বাস্তবায়নে অনিয়ম হলে সঙ্গে সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। কিন্তু ঘটনাটি ভুলবশত হয়েছে বলেই হয়তো লিখিত কিংবা টেলিফোনে কেউ কোনো প্রকার অভিযোগ আমাদের কাছে করেনি।'
সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি এটা ভুলবশত হয়েছে, স্বল্প সময়ের মধ্যে সমাধানও হয়েছে। তাছাড়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্যারের তত্ত্বাবধানের কাজে ইচ্ছাকৃতভাবে অনিয়ম করবে এমন দুঃসাহস কার আছে।’
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি মইনুল হাসান সাদিক ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘সর্বানন্দ ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব মো. সাদ্দাম হোসেন ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমাকে বিষয়টি অবহিত করেছে। সমগ্র জেলায় যখন এই ঘটনার জানা জানি হয়ে যায় পরবর্তীতে বিকাশে টাকা পৌছে দেওয়া হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। বিষয়টি আমার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে এমন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাকেও অবহিত করেছি।’
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি, আসলে কি ঘটেছিল সেই ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে।’
এমএইচ/