নিবন্ধনের জন্য প্রস্তুত গণঅধিকার পরিষদ
রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নেওয়ার জন্য প্রস্তুত গণঅধিকার পরিষদ। এই ঈদের পরেই আবেদন করবে তারা। কোটা বিরোধী আন্দোলনের নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহসভাপতি নুরুল হক নুর ও আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার পুত্র ড. রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বে গঠিত নতুন এই দলটি ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছে। নিত্য পণ্যের দাম বৃদ্ধিসহ নানা ইস্যুতে গণঅধিকার পরিষদের ব্যানারে বেশ কিছু কর্মসূচিও করেছে। দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও নির্বাচনী মাঠে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেনি দলটি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক দলটির নিবন্ধন থাকতে হবে।
সেই নিবন্ধনের পথেই হাঁটছে দলটি। ঈদুল ফিতরের পর বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নিকট গণঅধিকার পরিষদ নিবন্ধন চাইবে বলে জানা গেছে। সে লক্ষ্যে সাংগঠিনক কার্যক্রম শুরু করেছে দলের নেতারা। নিবন্ধন পাওয়ার শর্তগুলো পরিপূর্ণভাবে ঠিক করেই নিবন্ধন চাইবে দলটি। নিবন্ধন চাওয়ার ক্ষেত্রে কোন ফাঁক ফোকার রাখতে চায় না। তবে এখন পর্যন্ত তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও জেলা কমিটি কোনটিই গঠন হয়নি। সব কিছু প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে।
নিবন্ধনের বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আমরা ঈদের পরই নিবন্ধন চাইব। তার আগেই নিবন্ধনের সবগুলো শর্ত পূরণ করা হবে। আমরা এমন কোন ফাঁক ফোকর রাখতে চাই না যেন নির্বাচন কমিশন ঠুনকো ইস্যুতে নিবন্ধন ঝুলিয়ে দেয়।'
নুরুলহক নুর বলেন, এক সঙ্গেই ১০-১৫ টা কমিটি যেন পরপর দিতে পারি সে কারণে আমাদের প্রায় ৮টি কমিটি প্রস্তুত আছে, কিন্তু আমরা প্রকাশ করিনি এখনও। আমাদের বর্তমান যে প্রস্তুতি তাতে আমরা চাইলে মাস খানেকের ভেতরে ২২টি জেলা কমিটি দিয়ে দিতে পারি। তবে সামগ্রীকভাবে আমরা ঈদের পর অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু হলে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করব সেক্ষেত্রে বেসিক শর্তগুলো ২২ জেলায় কমিটি থাকা দরকার ২০০ করে মেম্বর ১০০ উপজেলা কমিটি সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করি ঈদের পর আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করতে পারব।
হঠাৎ করেই গণঅধিকার পরিষদ রাজনীতির মাঠে নিরব হয়ে গেল কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বড় দলগুলো মাঠে সেভাবে সক্রিয় না। আমরা কেন আগে আগে শক্তি ক্ষয় করব? আগে দলে নিবন্ধন হোক এরপর মাঠে সক্রিয় হব।
রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে:
আবেদনের সঙ্গে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে উক্ত দলের সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক সত্যায়িত যেসকল দলিলাদি সংযুক্ত করতে হবে তা হল- দলের গঠনতন্ত্র, দলের নির্বাচনী ইশতেহার যদি থাকে, দলের বিধিমালা যদি থাকে, দলের লোগো এবং পতাকার ছবি, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সকল সদস্যদের পদবীসহ নামের তালিকা, দলের নামে রক্ষিত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও ব্যাংকের নাম এবং উক্ত একাউন্টে সর্বশেষ স্থিতি, দলের তহবিলের উৎসের বিবরণ, দলের নিবন্ধনের আবেদন করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুকূলে প্রদত্ত ক্ষমতাপত্র, নিবন্ধন ফি বাবদ সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বরাবর জমাকৃত অফেরতযোগ্য টাকার ট্রেজারি চালানের কপি এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর হতে আবেদন দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের যে কোন একটিতে দলীয় প্রতীকে কমপক্ষে একটি আসন লাভের সমর্থনে প্রমাণক দলিল অথবা বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর হতে আবেদন দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন যেকোন একটিতে দরখাস্তকারী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ কৃত নির্বাচনী এলাকায় প্রদত্ত মোট ভোট সংখ্যা শতকরা ৫ ভাগ ভোট লাভের সমর্থনে কমিশন তদন্তকৃত ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রত্যয়ন পত্র অথবা দলের কেন্দ্রীয় কমিটিরসহ যে নামেই অভিহিত হোক না কেন একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর, এক তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দপ্তর এবং নুন্যতম ১০২ উপজেলা বা ক্ষেত্রমতে মেট্রোপলিটন থানা কার্যকর এবং উপজেলায় ক্ষেত্রমতে থানায় ভোটার সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকার সমর্থনে প্রামানিক দলিল।
প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন ফি বাবদ ৫ হাজার টাকা অফেরতযোগ্য সচিব নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এর অনুকূলে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে প্রদান করতে হবে। আবেদন করার পর নির্বাচন কমিশন সব যাচাই বাছাই করে তাদের কাছে যদি প্রতিয়মান হয় জমা দেওয়া সকল তথ্য উপাত্ত সঠিক তাহলে তারা মনে করলে নিবন্ধন দিতে পারবে। তবে নিবন্ধন দেওয়ার আগে দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে। সেখানে কেউ আপত্তি করলে দুই পক্ষের মুখোমুখি যুক্তি তুলে ধরার সুযোগ থাকবে।
এসএম/এএস