হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনারে অধ্যাপক ড. হারুন
'পকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ছিল অনিবার্য'
ছবি : সংগৃহীত
জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু প্রফেসরিয়াল ফেলো ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন অর রশিদ বলেছেন, ‘শুধু ধর্মের ভিত্তিতে কোনো দেশ হওয়া বিজ্ঞানসম্মত নয়। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পেছনে ধর্মীয় বিভাজনকে প্রধান করে দেখানো হলেও এর মর্মমূলে ছিল রাজনৈতিক সমঝোতার অনুপস্থিতি। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ভারতকে অবিভক্ত রেখে কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা গ্রহণের সম্মতিতে এটাই প্রমাণ করে যে, পাকিস্তান তার শেষ কথা ছিল না। কিন্তু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের ভাগ কর, শাসন কর নীতি এবং কংগ্রেস নেতৃত্বের অদূরদর্শিতা ও অসমঝোতামূলক আচরণের কারণেই মূলত ৪৭ সালে ভারত বিভক্তি ঘটে।’
জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটে সোমবার (২২ নভেম্বর) ‘১৯৪৭ সালে দেশবিভাগ কী অনিবার্য ছিল?’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।
ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘বাংলার মুসলমানরা মুসলিম লীগ বা পাকিস্তান আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হলে ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ ঘটতো না। বাঙালি মুসলমানদের চেতনামূলে ধর্ম বা সাম্প্রদায়িকতা ছিল না, বরং ছিল হিন্দু জমিদার মহাজনদের অত্যাচার, নির্যাতন, শোষণ থেকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুসহ মুসলিম লীগ নেতৃত্বের একটি অংশের রাষ্ট্রভাবনা ছিল ’৪৭ সালের প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে (বর্তমান বাংলাদেশ) একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন লালন করেছিলেন। ’৪৭ সালে তা বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে ২৩ বছর আন্দোলন সংগ্রামের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।’
ড. হারুন-অর-রশিদ আরও বলেন, ‘ভারত বিভক্তি অপরিহার্য ছিল না। ঔপনিবেশিক শাসক ও তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কারণে ভারত বিভক্তি ঘটে। তবে পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ছিল অনিবার্য।’
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন, সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাহুল মুখার্জী। অনুষ্ঠানে ড. হ্যান্স হার্ডার, ড. সুব্রত মিশ্র, ড. মার্টিন গেইলস ম্যানসহ ভারত পাকিস্তানসহ মোট ৩০ জনের মতো পণ্ডিত ও গবেষক অনলাইনে এবং সশরীরে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানের পর প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ প্রশ্ন-উত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন। বক্তব্যের পর সেমিনারে অংশগ্রহণকারীগণ ড. হারুনের বক্তব্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এএস/এএন