বিশ্ব মানবাধিকার দিবস
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক বাংলাদেশ, কিছু ক্ষেত্রে লঙ্ঘন
ছবি : সংগৃহীত
১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্ব পরিমণ্ডলে এক মানবিক বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তৈরি হলেও অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এর মধ্যে সংখ্যালঘু নির্যাতন অন্যতম। এছাড়া বাক-স্বাধীনতা, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।
এ অবস্থায় আজ ১০ ডিসেম্বর সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস।
১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ১৯৫০ সালে এই দিনটিকে জাতিসংঘ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। সেই থেকে বিশ্বজুড়ে এ দিনটি পালিত হচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিশ্ব মানবাধিকার প্রতিবেদন-২০২১ এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার কর্তৃত্ববাদী দমন-পীড়ন, সমালোচকদের গ্রেপ্তার ও মিডিয়া সেন্সরশিপ দ্বিগুণ করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর দায়মুক্তি ছিল লক্ষণীয়।
পাশাপাশি ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া এবং তাদের বলপূর্বক ফেরত যেতে বাধ্য না করা আসলে আন্তর্জাতিক আাইনের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকারেরই বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করার বিষয়টিও প্রশংসা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
তবে কুমিল্লায় মন্দিরে কোরআন শরীফ রাখাকে কেন্দ্র করে পুজামণ্ডপে হামলা এবং রংপুরে হিন্দু পল্লীতে হামলার ঘটনা মানবাধিকার ইস্যুতে সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কুমিল্লার মন্দিরে কোরআন অবমাননা করা হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে কয়েকটি মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। যদিও সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং সম্ভাব্য দায়ীদের বিচার চলমান রয়েছে। কুমিল্লার ঘটনার সূত্র ধরে রংপুরে হিন্দুপল্লীতেও সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি ধর্মীয় ক্ষেত্রে সামাজিকভাবে বৈষম্যের শিকার। ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে যদি ধনী-গরীবের বৈষম্য দূর করা যায় তাহলেই কেবল মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি করা যাবে।
সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) সাধারণ সম্পাদক নূর খান ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, এক কথায় বলতে গেলে মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বিষয়টি খুব হতাশাজনক।
মানবাধিকার পরিস্থিতি এ যাবৎকালে কোনো সুখবর আনতে পারেনি দাবি করে নূর খান বলেন, ‘যদি বলেন গুমের ঘটনা, আমরা দেখছি এটি চলমান। ক্রসফায়ার বা বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের যে বিষয়টি কিছুটা স্তিমিত হয়েছিল মেজর সাহেবের হত্যাকাণ্ডের পর। কিন্তু সেটি এখন বরং আরও বেগবান হয়েছে।’
সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন, ভূমি থেকে উচ্ছেদ এগুলো বহমান, চলমান অভিযোগ করে নূর খান বলেন, ‘বরং আগে যে প্রতিবাদের একটি বিষয় ছিল, সেটিও এখন দুর্বল হয়েছে।’
বিরোধীমত এবং বিরোধীদলকে দমন করার জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে অভিযোগ করে আসকের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিবেকের যে স্বাধীনতা, চিন্তার যে স্বাধীনতা সেটিকেও ধংস করা হচ্ছে। বাক-স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও এমনভাবে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টকে প্রয়োগ করা হচ্ছে যে সেটি আর এখন সমন্নুত বলা যাবে না। বরং ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট দিয়ে সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, লেখক, শিক্ষক, কিশোর যে কেউ কথা বলতে চাইলে তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হচ্ছে। এমনকি নারীও এর থেকে রেহাই পাচ্ছে না।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ মানবিক ভাবমূর্তি গড়লেও ক্যাম্পগুলোতে ঝুঁকি বাড়ছে উল্লেখ করে নূর খান বলেন, ‘ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা রয়েছে। আমাদের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে পরিস্কার করে কোনো নীতি জানাচ্ছেন না।’
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে নূর খান বলছেন, ‘মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির সবচেয়ে বড় মাপকাঠি হচ্ছে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির উন্নতি করা। কিন্তু আমাদের এখানে এখনও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা যায়নি। জনগণের মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা গেলেই কেবল মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।’
আরইউ/এনএইচ/এএন