রাখাইনদের রক্ষায় ১৩ দফা দাবি নাগরিক প্রতিনিধি দলের
ছবি : সংগৃহীত
বৌদ্ধ বিহারের জমি ও রির্জাভ পুকুর বেদখলমুক্ত করা, রাখাইন ভাষা রক্ষার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে অবিলম্বে রাখাইন ভাষায় শিশু শিক্ষা কার্যক্রম শুরু এবং বিদ্যালয় সমূহে রাখাইন শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ধর্মীয় শিক্ষার সুয়োগ দেয়া, রাখাইন সংস্কৃতি রক্ষা, বিকাশ ও চর্চার লক্ষে রাখাইন কালচারাল একাডেমিকে সক্রিয় করা সহ ১৩ দফা দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর রাখাইন এলাকা ঘুরে আসা নাগরিক প্রতিনিধি দল।
বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক প্রতিনিধি দল এই দাবি উত্থাপন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেন, সারা দেশে আদিবাসীরা নানাভাবে শোষণ, বঞ্চনা, ভূমি উচ্ছেদ ও শঙ্কার মধ্যে দিনাতিপাত করছে, এটা তারা জানেন। কিন্তু পটুয়াখালী অঞ্চলের রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর অবস্থা যারপরনাই শোচনীয়। রাখাইনরা প্রথম এ এলাকায় কুয়া খনন করেছিল, তাই নাম হয়েছে কুয়াকাটা। অধিকাংশ রাখাইন আদিবাসী আজ দেশান্তরি, বিপন্ন। কেবল সংখ্যালঘু নয় বরং তারা সংখ্যাশূন্য হতে চলেছেন।
তারা আরো বলেন, যেখানে কয়েক দশক আগেও লক্ষাধিক রাখাইনের পদচারণে মুখরিত ছিল, সেখানে তাদের সংখ্যা বর্তমানে মাত্র আড়াই হাজারে নেমে এসেছে। ১৯৪৮ সালে পটুয়াখালীতে ১৪৪টি ও বরগুনায় ৯৩টি রাখাইনপাড়া ছিল, বর্তমানে সেখানে যথাক্রমে ২৬টি ও ১৩টি পাড়া টিকে আছে। এর মধ্যে সর্বশেষ যে রাখাইন পাড়াটি এ বছর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে সেটি হলো ছয়আনি পাড়া। পায়রা বন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণের কবলে পড়ে পাড়াটি বিলুপ্ত হয়েছে।
রাখাইন দের জমি, পুকুর, শ্মশানসহ সবকিছু দখল হয়ে যাচ্ছে বলেই নিজভূমি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন তারা। জালিয়াতির মাধ্যমে জমি জবরদখল, রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও স্বার্থান্বেষী দালাল চক্রের দৌড়াত্ম এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের নিষ্ক্রিয়তার কারণে তারা তাদের ভূমি হারাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রাখাইনদের সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে তার ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে এই অঞ্চলে রাখাইনদের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আমরা দেখতে চাই আর যেন একটি রাখাইন পাড়াও নিশ্চিহ্ন না হয়। একই সাথে আমরা চাই উচ্ছেদ হওয়া রাখাইন পরিবারগুলোকে যথাযথভাবে তাদের জীবনধারা ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ স্থানে পুণর্বাসন নিশ্চিত করার দাবীও জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সেখানে না গেলে বোঝা যায় না পরিস্থিতি কত ভয়াবহ। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর কত উৎসব উৎযাপিত হচ্ছে এখানে। কিন্তু আজ রাখাইন আদিবাসীরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।
পটুয়াখালী জেলায় বসবাসরত রাখাইন জনগোষ্ঠীর বঞ্চনা ও সংকটের ধরন পর্যবেক্ষণের জন্য ১৪ সদস্যের নাগরিক প্রতিনিধিদল গত ২৬ থেকে ২৮ নভেম্বর কয়েকটি রাখাইন জনপদ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। নাগরিক প্রতিনিধিদলের সদস্যগণ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামে পৌঁছে স্থানীয় রাখাইন পরিবারসমূহের সদস্যসহ অন্যান্যদের সাথে কথা বলে এসেছেন। এর মধ্যে ছিল টিয়াখালী ইউনিয়নের ছয়আনীপাড়া ও চৈয়াপাড়া, মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের তুলাতলীপাড়া ও মধুপাড়া, কুয়াকাটা পৌর এলাকার কেরানীপাড়া এবং লতাচাপলী ইউনিয়নের মিশ্রিপাড়া। প্রতিনিধি দলের পরিদর্শনের সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য মেইনথিন প্রমিলা’র সঞ্চালনায় ও এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা’র সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, নাগরিক উদ্যোগ এর নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন এবং এএলআরডি’র প্রজেক্ট ম্যানেজার আজিম হায়দার। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি দলের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।
এনএইচবি/এমএমএ/