মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার জন্য সীমা কেরমানির ক্ষমা প্রার্থনা
পাকিস্তানের নারী অধিকার ও শান্তিকর্মী সীমা কেরমানি বলেছেন, ‘পাকিস্তানের নারীদের পক্ষে আমরা ১৯৭১-এর গণহত্যার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। পাকিস্তানের উচিত রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের কাছে গণহত্যা, নারী নির্যাতন ও যুদ্ধাপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) এই তথ্য জানানো হয়।
জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস উপলক্ষে এক অনলাইন আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে কমিটি। এতে ১৪টি দেশের ১৯ জন গণহত্যার ভুক্তভোগী, গণহত্যা বিষয়ক গবেষক, আইনপ্রণেতা, মানবাধিকার ও শান্তিকর্মী আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
সম্মেলনে পাকিস্তানের ‘তেহরিক-ই-নিশওয়ান’-এর সভাপতি ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী সীমা কেরমানি বলেন ‘হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্টে বাংলাদেশে গণহত্যাকারী পাকিস্তানি সমরনায়কদের চিহ্নিত এবং বিচারের কথা বলা হয়েছে। পাকিস্তানের ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদী নীতির কারণে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং গণহত্যায় এত বিপুলসংখ্যক বাঙালি নিহত হয়। পাকিস্তানের সেই নীতি এখনও অব্যাহত যা আমরা প্রত্যক্ষ করছি বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অমুসলিম জনগোষ্ঠীর অধিকারহরণ, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ওপর দমনপীড়ন ও নির্যাতনের মাধ্যমে। পাকিস্তানের পাঠ্যবইতে ভিন্ন ধর্মের মানুষদের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য রয়েছে-আমরা তার নিন্দা করি।’
সম্মেলনের শুরুতে সভাপতি শাহরিয়ার কবির জানান, ‘এই সম্মেলন আজ ব্রাসেলস-এ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সামনে হওয়ার কথা ছিল। যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পর করোনা মহামারীর আকস্মিক বিস্তারের কারণে প্রকাশ্য সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ায় অনলাইনে এই সম্মেলন আয়োজন করা হচ্ছে।’ এরপর সম্মেলনের পক্ষ থেকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্টকে যে স্মারকপত্র দেয়া হবে সেটি তিনি উত্থাপন করেন, যেখানে বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, বিশ্বব্যাপী চলমান গণহত্যার নিন্দা এবং মায়ানমারে গণহত্যার ভিকটিম বাংলাদেশের আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের দ্রুত স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। সম্মেলনে ১৪টি দেশের নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ এই স্মারকপত্র গ্রহণে সর্বসম্মত মত প্রকাশ করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রাক্তন সদস্য পর্তুগালের রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার নেতা পাওলো কাসাকা, যুক্তরাষ্ট্রের ‘জেনোসাইড ওয়াচ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক গ্রেগরি এইচ. স্ট্যান্টন, বার্মায় রোহিঙ্গা গণহত্যা তদন্তে নাগরিক কমিশন-এর সদস্য মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত বৃটিশ মানবাধিকার নেতা জুলিয়ান ফ্রান্সিস, পাকিস্তানের নারী অধিকার ও শান্তি কর্মী, ‘তেহরিক-ই-নিশওয়ান’-এর সভাপতি ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী সীমা কেরমানি, সুইডেনের ইউনাইটেড নেশনস অ্যাসোসিয়েশন-এর মানবাধিকার নেত্রী এ্যাটর্নি মোনা স্ট্রিন্ডবার্গ, যুক্তরাজ্যের ওয়ার্ল্ড সিন্ধি কংগ্রেস-এর সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার নেতা লাকুমাল লুহানা, পোল্যান্ডের মানবাধিকার কর্মী, ‘নেভার এগেইন’-এর নেতা নাটালিয়া সিনায়েভা পাঙ্কোভস্কা, তুরস্কের টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিটি-এর সভাপতি লেখক চলচ্চিত্রনির্মাতা ফেরহাত আতিক, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রতিনিধি পশতুন নেতা ফ্রান্সের ফজল-উর রেহমান আফ্রিদি, উইঘুর গণহত্যার ভুক্তভোগী উজবেকিস্তানের সাংবাদিক সাবো কসিমোভা, পোল্যান্ডে নির্বাসিত আফগান মানবাধিকার নেতা সবুর শাহ দাউদজাই, অস্ট্রেলিয়ার আফগান মানবাধিকার কর্মী অ্যার্টনি কোবরা মোরাদি, যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত ইরানি নারী অধিকার কর্মী সাংবাদিক বানাফসে যানদ, ভারতীয় লেখক, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রিয়জিৎ দেব সরকার। সম্মেলনে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন নির্মূল কমিটির বেলজিয়াম শাখার সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার নেত্রী আনার চৌধুরী।
এমএ/এএস