মালিক-শ্রমিক উভয়কেই দায়িত্বশীল হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
কারখানা যথাযথভাবে চলতে হলে মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মালিকদের সবসময় মনে রাখতে হবে, এই শ্রমিকরা শ্রম দিয়েই কিন্তু তাদের কারখানা চালু রাখে এবং অর্থ উপার্জনের পথ করে দেয়। আবার শ্রমিকদেরও এ কথা মনে রাখতে হবে যে, কারখানাগুলো আছে বলেই কিন্তু তারা কাজ করে খেতে পারছেন। তাদের পরিবার-পরিজনকে লালন-পালন করতে পারছেন বা তারা নিজেরা আর্থিকভাবে কিছু উপার্জন করতে পারছেন। কারখানা যদি ঠিকমতো না চলে, তাহলে নিজেদেরই ক্ষতি হবে। কাজেই যে কারখানা আপনার রুটি রুজির ব্যবস্থা করে অর্থাৎ খাদ্যের ব্যবস্থা করে বা আপনার জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে সেই কারখানার প্রতি যত্নবান হতে হবে।’
বুধবার (০৮ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০২০ প্রদান এবং মহিলা কর্মজীবী হোস্টেলসহ আটটি নবনির্মিত স্থাপনার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী যেসব স্থাপনা উদ্বোধন করেন, সেগুলো হলো–রাঙ্গামাটির ঘাগড়ায় শ্রম কল্যাণ কমপ্লেক্স, বগুড়ায় আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর ও শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র, চট্টগ্রামে শিল্প সম্পর্ক শিক্ষায়তন ভবন, খুলনার রূপসায় শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র, নারায়ণগঞ্জ বন্দরে শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র, নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় বিভাগীয় শ্রম দপ্তর, গাইবান্ধায় শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র এবং বাগেরহাটের মোংলায় শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় দেখি, বাইরে থেকে কিছু কিছু শ্রমিক নেতারা আছেন, তারা হয়তো উস্কানি দেয় বা কোনো কোনো মহল উস্কানি দেয়, অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, এখন প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব, এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে যদি শিল্প কল কারখানা, উৎপাদন এবং রপ্তানি এটা যদি সঠিকভাবে চলতে হয়, তাহলে কিন্তু কারখানাগুলো যাতে যথাযথভাবে চলে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি সেখানে অশান্ত পরিবেশ সৃস্টি হয়। তাহলে এই রপ্তানিও বন্ধ হয়ে যাবে, তখন কর্মপরিস্থিতি থাকবে না, নিজেরা কাজ হারাবেন এবং তখন বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে ঘুরতে হবে। সে কথা মনে রেখে শ্রমিক যারা, তাদের একটা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে মালিক শ্রমিকের সম্পর্কটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে সম্পর্ক হবে সৌহাদ্যপূর্ণ। মালিকদের দেখতে হবে শ্রমিকদের অসুবিধা তাদের জীবন যেন সুন্দরভাবে চলে শ্রমের ন্যায্য মূল্যটা যেন পায় সেই ব্যবস্থা করা এবং শ্রমের সুন্দর পরিবেশ যেন থাকে সেটা দেখতে হবে, আবার শ্রমিকদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে। কারখানা যেন সুন্দরভাবে চলে, উৎপাদন যেন বাড়ে।
গ্রিন ফ্যাক্টরির গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে নানা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। করোনাকালীন সময়ে সংকটময় মুহূর্তে প্রত্যেক কলকারখানা বা প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং শ্রমিক তারা যেন ঠিকমত কাজ পায় বা সঠিকভাব চলতে পারে তার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। আমরা অনেকগুলো প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি। প্রণোদনা প্যাকেজের কারণে কারও অসুবিধা হয়নি। এই গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড বিশেষ প্রণোদনা সৃষ্টি করবে। এখনও যারা তাদের নিজেদের কল কারখানাগুলো বা নিজেদের কর্মক্ষেত্রগুলো ঠিক শ্রমিকদের সুবিধা দেখা হয়নি বা পরিবেশবান্ধব হয়নি অথবা গ্রিন ফ্যাক্টরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেননি, তারাও উৎসাহিত হবে। তারাও তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো এ রকম করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রায় ৯৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের মানুষ আর কোন কষ্টে থাকবে না।’
ভিডিও কনফারেন্সিয়ে অপরপ্রান্তে ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন–শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এহসানে এলাহী।
এসএম/এসএ/