ড্যাপ সংশোধনের সিদ্ধান্ত স্থগিত

ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার বাসযোগ্যতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) সংশোধনের সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। বুধবার (১৯ মার্চ) মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী গতকাল সকালে সাড়ে ১০টায় ড্যাপ সংশোধন সম্পর্কিত সভা শুরু হয়। সভায় আমন্ত্রিত ছিলেন গৃহায়ন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবসহ অন্যরা।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ড্যাপ সংশোধনে নগর পরিকল্পনাবিদদের সুপারিশ আমলে না নেয়া এবং কারিগরি কমিটি থেকে নগর পরিকল্পনাবিদদের বাদ দেয়ার বিষয় নিয়ে কথা হয়। এছাড়া ড্যাপ সংশোধনের ক্ষেত্রে আবাসন ব্যবসায়ীদের অংশীজন হিসেবে রাখার বিষয়টিকে সভায় ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বা ‘স্বার্থজনিত দ্বন্দ্বমূলক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এসব বিষয় নিয়ে গৃহায়ন সচিবকে প্রশ্ন করা হলে সভায় তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।
জানা গেছে, গতকালের সভায় ড্যাপ চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। এরপর যেকোনো সময় সংশোধন গেজেট হয়ে কার্যকর করত সরকার। কিন্তু সভায় উপদেষ্টাদের আপত্তির মুখে ড্যাপ সংশোধন স্থগিত হয়ে যায়।
ড্যাপ সংশোধনে নগর পরিকল্পনাবিদদের পাশাপাশি পরিবেশবিদদের সুপারিশও গুরুত্ব দেয়ার বিষয়ে তাগিদ দেয়া হয়। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিবেশ ও জলাবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা বলেছি, নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবিদদের নিয়ে ড্যাপের ফ্লোর এরিয়া রেশিওর (এফএআর) বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমলা আর ইঞ্জিনিয়াররা মিলে এফএআর সংশোধন করে ফেলবে তা হওয়ার সুযোগ নেই। আর ঢালাওভাবে আবাসিক এলাকাকে বাণিজ্যিকে রূপান্তর করার বিষয়েও ভাবতে হবে। এ নিয়ে ঈদের পর একটি মিটিং হবে। সেখানে নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবিদরা তাদের সুপারিশ তুলে ধরার সুযোগ পাবেন।’
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট ড্যাপ গেজেট হওয়ার পরই ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। ড্যাপে ছোট প্লটের মালিকদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে অভিযোগ তুলে তা সংশোধনের দাবি তোলেন আবাসন ব্যবসায়ী ও স্থপতিদের একাংশ। অন্যদিকে ঢাকার বাসযোগ্যতাকে ছাড় দিয়ে ড্যাপে কিছু কিছু এলাকায় ভবনের উচ্চতা অযৌক্তিকভাবে বেশি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ নগর পরিকল্পনাবিদদের।
অনেক আলোচনা-সমালোচনা শেষে ২০২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ড্যাপ সংশোধন হয়। সংশোধিত ড্যাপে কয়েক ক্যাটাগরিতে ভবনের উচ্চতায় ছাড় দেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামী তিন বছরের জন্য সরকারি ও রাজউক অনুমোদিত বেসরকারি আবাসন প্রকল্পে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বর্তমান এফএআরের পাশাপাশি অতিরিক্ত আরো দশমিক ৫ এফএআর প্রণোদনা প্রযোজ্য হবে। এছাড়া যেসব এলাকায় এফএআরের মান ১ দশমিক ৫-এর নিচে সেসব এলাকায় ন্যূনতম ১ দশমিক ৫ এফএআর বিবেচনা করতে হবে। প্লটসংলগ্ন বিদ্যমান রাস্তা ৪ দশমিক ৮ মিটার হলে নতুন ড্যাপে এফএআরের মান ২। এ বিধান সংশোধন করে বলা হয়েছে, বিচ্ছিন্নভাবে ও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এলাকা যেমন—বাড্ডা, ডেমরা, খিলক্ষেত, উত্তরখান, দক্ষিণখান, রায়েরবাজার, সাভার, কেরানীগঞ্জসহ এসব এলাকার ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির সামনে ৩ দশমিক ৬৬ মিটার প্রশস্ত রাস্তা থাকলে সেখানে এফএআর বাড়িয়ে ২-এ উন্নীত করা হয়েছে।
