জামালপুরের মাদারগঞ্জে গরু চুরি করে নেতা-কর্মীদের জন্য ভূরিভোজের আয়োজন করার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মঞ্জুর কাদের বাবুল খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। অব্যাহতি পাওয়া ওই নেতার নাম মাহমুদুল হাসান। তিনি মাদারগঞ্জ উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ঘটনায় যুবদলের এক কর্মীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় গরুর মালিক এফাজ মণ্ডল বাদী হয়ে আজ বিকেলে মাদারগঞ্জ থানায় মাহমুদুল হাসানসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৭ থেকে ৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় সুমন মণ্ডল ও বজলুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা মহিলা দলের সমাবেশ উপলক্ষে বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসানের বাড়িতে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়। ওই ভোজের জন্য মাহমুদুল হাসান লোকজন দিয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে উপজেলার জোড়খালী ইউনিয়নের দক্ষিণ খামার মাগুরা এলাকার কৃষক এফাজ মণ্ডলের গোয়ালঘর থেকে একটি গরু চুরি করিয়ে আনেন। ওই গরু জবাই করে আজ তাঁর বাড়িতে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়। ভোরের দিকে ওই কৃষক তাঁর গোয়ালঘরে গরু না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।
স্থানীয় লোকজনের মধ্যেও গরু চুরির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন উপজেলার কয়ড়া বাজারের মাংস ব্যবসায়ী মো. বজলুর কাছে গরুর মাথা ও চামড়া দেখতে পান। পরে ওই মাথা ও চামড়া এফাজ মণ্ডলের গরুর বলে শনাক্ত করা হয়। পরে মাংস ব্যবসায়ী বজলু স্থানীয় লোকজনকে জানান, বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান ও যুবদল কর্মী সুমন মণ্ডল তাঁকে ওই গরুর মাংস কাটতে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরে উত্তেজিত স্থানীয় লোকজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওই নেতার বাড়িতে যান। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে লোকজন পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে যুবদল কর্মী সুমন ও মাংস ব্যবসায়ী বজলুকে আটক করে। এ সময় গরুর চামড়া, মাথা ও কিছু মাংস জব্দ করে পুলিশ।
বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে সন্ধ্যায় উপজেলা বিএনপি মাহমুদুল হাসানকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মঞ্জুর কাদের বাবুল খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, দলের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা ক্ষুণ্নের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাহমুদুল হাসানকে দলীয় পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হলো। একই সঙ্গে তাঁকে কেন দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, সেটি আগামী সাত দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিএনপি নেতা মঞ্জুর কাদের মুঠোফোনে বলেন, ওই ঘটনায় আপাতত তাঁকে সাময়িকভাবে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দলের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হবে। তদন্তে তাঁর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে স্থায়ীভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত মাহমুদুল হাসান বলেন, আজ উপজেলায় মহিলা দলের কর্মী সমাবেশ ছিল। সমাবেশে তাঁর ইউনিয়ন থেকে নারীদের নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ জন্য ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড থেকে নারীদের নিয়ে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করেন। তিনি মাংস ব্যবসায়ী বজলুর কাছ থেকে ৭৬ কেজি মাংস কিনেছিলেন। তিনি কোথা থেকে গরুটি এনেছেন, বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না। তাঁর বাড়িতেই বজলুর আনা গরুটি জবাই করা হয়। তিনি ৭৬ কেজি মাংস মেপে বাকিগুলো নিয়ে যান। রাতে রান্না হচ্ছিল। তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে লোকজন তাঁর বাড়িতে এসে জানান, গরুটি চুরি করে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি তো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাংস কিনেছি। তিনি কোথা থেকে গরু আনছেন, আমি জানি না।’
মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন বলেন, অব্যাহতি পাওয়া বিএনপি নেতা চুরি করা গরু দিয়ে খাবারের আয়োজন করেন। ওই খাবার তাঁর লোকজনের খাওয়ার কথা ছিল। খবর পেয়ে নেতার বাড়ি থেকে হাতেনাতে দুজনকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে গরুর মাথা, চামড়া ও কিছু মাংসও জব্দ করা হয়। এ গরুর মালিক থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় আটক দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।