ভারতের পতাকা মাড়ানো ‘ভাইরাল’ সেই ছবি কৃত্রিমভাবে তৈরি
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের জাতীয় পতাকা পায়ে মাড়ানোর একটি ছবি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। তবে ছবিটি বাস্তব নয়, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তৈরি বলে জানিয়েছে তথ্য যাচাই সংস্থা রিউমর স্ক্যানার।
বুধবার রিউমর স্ক্যানার তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘রিভার্স ইমেজ সার্চ’-এর মাধ্যমে ছবিটির কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া যায়নি। তাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ছবিটি শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। সাধারণত এমন কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি জাতীয় গণমাধ্যমেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কিন্তু এই ছবির ক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি।
রিউমর স্ক্যানারের দাবি অনুযায়ী, ছবির বিভিন্ন উপাদান যেমন আলোর প্রতিফলন, ছায়া, ও ছবিতে থাকা ব্যক্তির শারীরিক ভঙ্গিমায় অসামঞ্জস্য ধরা পড়েছে। এসব বৈশিষ্ট্য এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ছবির ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায়।
ছবিটি বিশ্লেষণে রিউমর স্ক্যানার বিভিন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ ওয়েবসাইট ব্যবহার করেছে। এসব প্ল্যাটফর্মের পরীক্ষায় ৯৯ শতাংশ নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ছবিটি এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি। পাশাপাশি ডিপফেক শনাক্তকরণ প্ল্যাটফর্ম ট্রুমিডিয়া জানিয়েছে, ছবিতে উল্লেখযোগ্য ম্যানিপুলেশনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বিশ্লেষণে আরও জানা গেছে, ছবিতে থাকা ব্যক্তির ডান পায়ের একটি আঙুল অস্বাভাবিকভাবে অর্ধেক দেখা যাচ্ছে। তার পাজামার ভাঁজ ধুতির মতো মনে হচ্ছে, যা স্বাভাবিক নয়। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার লাল বৃত্তের ভাঁজেও অস্বাভাবিকতা রয়েছে। এমনকি ব্যক্তির চোখের অভিব্যক্তি এবং ছবির আলো-ছায়ার অনুপাতও স্বাভাবিক নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
রিউমর স্ক্যানার জানিয়েছে, ছবিটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১ ডিসেম্বর, ‘Voice of Bangladeshi Hindus’ নামে একটি এক্স (পূর্ববর্তী টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে। এই অ্যাকাউন্ট অতীতেও বিভিন্ন গুজব ছড়ানোর নজির রাখে।
ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতের পতাকা পায়ে মাড়িয়ে প্রতিবাদের ঘটনা অতীতে ঘটেছে। কিন্তু সে সময় ঘটনাগুলো জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। তবে এই ছবির ক্ষেত্রে এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি।
সম্প্রতি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করে ভারতে বিভিন্ন অপপ্রচার এবং গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনের সামনে জাতীয় পতাকা পোড়ানো এবং আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে, ভাইরাল ছবিটি বাস্তব নয়, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি। এ ধরনের ছবি প্রচার বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, যা সামাজিক সম্প্রীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের প্রতি রিউমর স্ক্যানার সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। বিভ্রান্তিকর তথ্য যাচাই না করে শেয়ার না করাই উত্তম।