রাজনৈতিক দল-বিশিষ্টজনদের মতামত নেবে সার্চ কমিটি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চাওয়া হবে। ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেওয়া হবে, সেখানে দলগুলো ইসির জন্য নাম প্রস্তাব করতে পারবে। সেইসঙ্গে সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের মতামত নেবে অনুসন্ধান কমিটি।
রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকে এ সিন্ধান্ত নেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আগামী পরশু দিন (মঙ্গলবার) আমরা আবার মিটিংয়ে বসব। আগামী শনিবার দুইটি বৈঠক এবং রবিবার একটি হবে। সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক হবে। তাদের নিয়েই কমিটি তিনদিন মিটিংয়ে বসবে। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সাজেশন বা প্রস্তাবনা যদি থাকে সেগুলো নেওয়া হবে। তারপরে কমিটি সবার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আইন ও অন্যান্য জিনিস দেখে যেভাবে আইনে যোগ্যতার কথা বলা আছে বা অযোগ্যতার কথা বলা আছে সেইগুলো বিবেচনা করে আইন অনুযায়ী ৫ জনের জন্য ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করবে।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত করতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটাও বিবেচনায় আনছি। এটা কাল (সোমবার) আমরা দেখব। ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। ওরকম যদি বাধ্যবাধকতা থাকে তাহলে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই করে দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, সোমবার সাড়ে ৪টায় এখানেই (জাজেস লাউঞ্জে) বৈঠক হবে। আজ প্রথম বৈঠকে নিজেদের মধ্যে পরিচয় ও কর্মপদ্ধতিগুলো আলোচনা হলো। পরশু দিন কারও সঙ্গেই বসব না, আমরাই বসব।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাদের সঙ্গে মিটিংয়ে বসছি না। তাদের কাছ থেকে প্রস্তাব নিচ্ছি।
রবিবার সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠক বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শেষ হয়। এদিন কমিটির চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত থাকেন কমিটির পাঁচ সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। কমিটিতে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে গতকাল শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২-এর ধারা ৩ মোতাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগদানের জন্য আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করার লক্ষ্যে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন করা হলো।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটির কার্য সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নিয়মানুযায়ী, এর আগেই নতুন ইসি গঠন করা হবে। অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের মনোনীত করার পর রাষ্ট্রপতি তা চূড়ান্ত করেন। তবে এবার নতুন আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
স্বাধীনতার পর এবারই প্রথমবারের মতো আইনানুযায়ী ইসি গঠিত হচ্ছে। এ জন্য কিছুদিন আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ জাতীয় সংসদে পাস হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সম্মতির পর গত রবিবার (৩০ জানুয়ারি) বিলটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ এটি আইনে পরিণত হয়।
অনুসন্ধান কমিটির কাজ সম্পর্কে আইনে বলা হয়েছে, এই কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বেঁধে দেওয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করা হবে।
এমএ/আরএ