তোফাজ্জল হত্যার ঘটনায় ঢাবিতে ৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার, প্রাধ্যক্ষ পরিবর্তন
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত ৮ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সাথে আবাসিক হলে তাদের সিটও বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায়ে ফজলুল হক মুসলিম হলে নতুন প্রভোস্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হক মুসলিম হলের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে অভিযুক্ত ৮ জন ছাত্রের আবাসিক সিট হল প্রশাসন বাতিল করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ৮ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছে। এছাড়া, ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শাহ্ মো. মাসুমকে পরিবর্তন করে ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস আল-মামুনকে হলটির নতুন প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।
সাময়িক বহিষ্কৃত ও সিট বাতিল হওয়া আট শিক্ষার্থী হলেন- পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. মোত্তাকিন সাকিন শাহ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের জালাল মিয়া, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের সুমন মিয়া, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের আল হোসাইন সাজ্জাদ, গণিত বিভাগের আহসান উল্লাহ, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ফিরোজ কবির ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আবদুস সামাদ, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ওয়াজিবুল আলম। তাদের মধ্যে ফিরোজ কবির ও আবদুস সামাদ বাদে বাকীদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে এক মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণকে দফায় দফায় মারধরের ঘটনায় ঘটেছে। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত যুবকের নাম তোফাজ্জল। বরগুনার পাথরঘাটার কাঁঠালতলি ইউনিয়নে তার বাড়ি। তার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নির্মমভাবে তোফাজ্জলকে পিটানো হয়েছে। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন জানার পরেও তাকে ছাড়েননি অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম, হলের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা তাদের নানাভাবে বোঝানোর চেস্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। ওইদিন দুপুরে আবাসিক হলের খেলার মাঠে ক্রিকেট খেলার সময় ছয় শিক্ষার্থীর মোবাইল ও চার শিক্ষার্থীর মানিব্যাগ চুরি হয়। রাত আটটার দিকে তোফাজ্জল নামের ওই ব্যক্তি হলে প্রবেশ করলে মোবাইল চোর সন্দেহে তাকে আটক করেন একদল শিক্ষার্থী। পরে তাকে হলের অভ্যর্থনা কক্ষে নিয়ে গিয়ে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ ও পরে হালকা মারধর করে তারা। পরবর্তীতে তাকে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে ফের অভ্যর্থনা কক্ষে নিয়ে দফায় দফায় মারধর করা হয়।
পরে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তোফাজ্জলকে যখন অভ্যর্থনা কক্ষে আনা হয়, তখন সেখানে প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। তাকে তারাই বেশি মারধর করেছে। প্রথমে হাত বেধে তাকে মারধর করা হয়। পরে চোখ বন্ধ করে মারধর করা হয়। এসসয় তোফাজ্জল মাটিয়ে লুঠিয়ে পড়লে তাকে পানি খাওয়ানো হয়। পরে তোফাজ্জল উঠে বসলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা খুশিতে হাততালি দেয় এই ভেবে যে তাকে ফের মারধর করা যাবে। পরে তাকে মারধর করার সময় দিয়েশলাই দিয়ে পায়ে আগুনও ধরিয়ে দেয় একজন। পরে আরেকজন তোফাজ্জলের ভ্রু ও চুল কেটে দেয়। পরে তোফাজ্জলকে হলের মেইন বিল্ডিংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে বুট জুতা পরে তোফাজ্জলের আঙ্গুল মাড়িয়ে ছেঁচে ফেলা হয় এবং গোপনাঙ্গে লাঠি দিয়ে জোরে জোরে আঘাত করা হয়।